সাগরমেলায় উল্টো সুর!
-
-
- Jan 08, 2022 06:33 [IST]
- Last Update: Jan 08, 2022 06:29 [IST]
কয়েকদিন বাড়িতে নিভৃতবাসে কাটিয়ে নবান্নে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এসেই রাজ্যবাসীকে পরামর্শ দিলেন ঘরে বসে কাজ করার জন্য। এমন ইঙ্গিতও দিলেন যেভাবে সংক্রমণ তীব্রগতিতে বাড়ছে তাতে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি আরও বাড়তে পারে। অবশ্য সাগরমেলা প্রশ্নে তাঁর সরকারের উল্টো সুর। আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সমস্তরকম বিধিনিষেধ মেনে মেলা হবে। সাগর এলাকায় নাকি ৭০ শতাংশ লোকের টিকা দেওয়া হয়েছে তাই করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। সরকারের অনুমান পাঁচ লক্ষ লোক আসবে। এমন কথাও বলা হয়েছে নোনাজলে নাকি করোনা ছড়ায় না। তাই সাগরমেলা করতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
কিন্তু যখন দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ জাঁকিয়ে বসছে তখন সাগরমেলাটা কি সত্যিই অপরিহার্য? সরকারের কাছে কি এই মেলার আয়োজনটাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার? এবছর যদি এই মেলা বন্ধ থাকে তা কি এমন ক্ষতি হবে? মেলায় মনোযোগ না দিয়ে বরং বিধিনিষেধের জেরে মানুষের রুটি রুজি কাজটা কতটা সুরক্ষিত রাখা যায় সেদিকে মন দেওয়া দরকার সরকারের। এটা সেটা বন্ধ করে দেওয়া সরকারের কাজ নয়। সরকারের দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় মেলে যতসম্ভব কম বিধিনিষেধ আরোপ করে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিখুঁত নজরদারি করা। যাতে সংক্রমণ ছড়ানোর ফাঁক না থাকে।
সব বন্ধ করে দিয়ে সংক্রমণ আটকানো অপদার্থ সরকারের কাজ। অর্থনীতির গতি সচল রেখে, মানুষের রুজির কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে এমনভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে এবং নজরদারি করতে হবে যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে। তারজন্য অতি উন্নত চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন। এক কলমের খোঁচায় সেলুন বন্ধ করা যায়, কিন্তু রাজ্যজুড়ে তাতে যে হাজার হাজার মানুষের রুজি বন্ধ হয় তার দায় কে নেবে? সরকার বন্ধ করতে ওস্তাদ। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে টিকাদানের কাজ ঝিমিয়ে আছে। কেন টিকার কাজে শিথিলতা। যদি মূলত কম বয়েসিদের নিয়ে বড়দিনের ও নববর্ষের হুল্লোড়ে লক্ষ লক্ষ জমায়েত করা যায় তাহলে সেই কম বয়েসিরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আপত্তি থাকবে কেন?
যত বিধিনিষেধ সাধারণ মানুষের ওপর। কথায় কথায় বন্ধ করা হবে লোকাল ট্রেন। দূরপাল্লার ট্রেন যদি চলতে পারে লোকাল ট্রেন নয় কেন? ট্রেন বন্ধ না করে কেন ভাবা হবে না ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ভিড় কমানোর? এমন কড়া নজরদারি কেন হবে না যাতে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ বন্ধ করা যায়। রুজিরোজগার এবং জরুরি প্রয়োজনের বাইরে যাতায়াত যদি কমিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কথায় কথায় সবকিছু বন্ধ করে দিতে হয় না। বেশিরভাগ স্বাভাবিক রেখেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সরকার সব বিধি মেনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু রাখতে পারছে না কেন? কেন দু’বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে একটা প্রজন্ম শেষ করে দিচ্ছে।
আসলে খেলা-মেলা, ধর্ম-উৎসবের এই সরকারের কাছে শিক্ষার কোনও গুরুত্ব নেই। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে বাংলার ছেলে মেয়েরা কর্মজীবনে সফল হোক এই সরকার চায় না। মানুষকে অদক্ষ, অর্ধশিক্ষিত করে রেখে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে শ্রমের বিনিময়ে উপার্জনের রাস্তা বন্ধ করতে চায় এই সরকার। তাই এই রাজ্যে কোনো শিল্প হয় না, পুরনো শিল্প বন্ধ। বাংলার যুবরা হয় ভিনরাজ্যে পরিযায়ী। রাজ্যে বেকারের ছড়াছড়ি আর কাজের হাহাকারের মধ্যে অনুদান ভিক্ষা দিয়ে যুব সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চায়। যাতে শাসকদলের অনুগত হওয়া ছাড়া কোনও উপায় না থাকে।