বেসরকারি সংস্থাকে ‘বেইল আউট’
-
-
- Jan 13, 2022 00:12 [IST]
- Last Update: Jan 13, 2022 03:00 [IST]
ঋণে ডুবে থাকা বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়াকে বাঁচাতে বিপুল প্রাপ্য ছাড় দিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ২কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এই সংস্থার, বেশিটাই সরকারের কাছে। স্পেকট্রাম বরাতের জন্য দেয় টাকা তারা দেয়নি। রাজস্ব থেকে সরকারের প্রাপ্য টাকাও দেয়নি। মূল বকেয়া রয়েই গেল। শুধু সুদের অঙ্কের বিনিময়ে তারা সরকারকে শেয়ার দিচ্ছে। সুদের অঙ্ক শেয়ারে রূপান্তরিত করে দিচ্ছে। কোম্পানির হিসাব মতো এই সুদ ১৬ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকাকেই ইকুইটিতে পরিণত করায় প্রায় ৩৫ শতাংশ শেয়ার হবে সরকারের। আবার, কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে সংস্থার পরিচালনায় তারা হস্তক্ষেপ করবে না, পরিচালকমণ্ডলীতে কোনও প্রতিনিধিও রাখবে না। বেসরকারি সংস্থার জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি আড়াল করার এক নতুন ব্যবস্থা চালু হলো। এক কথায়, এই বেসরকারি সংস্থাকে ‘বেইল আউট’ করছে সরকার।
স্পেকট্রাম বরাতের প্রাপ্য টাকা না মেটানোর জন্য ভোডাফোন মামলা করেছিল। সেই মামলায় তারা হেরে যায়। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্পেকট্রামের মাশুল বাবদ ভোডাফোনের বকেয়া ১,০৮,৬১০ কোটি টাকা। এজিআর দায় বাবদ ৬৩,৪০০ কোটি টাকা। এই টাকা সরকারের প্রাপ্য। সেইসঙ্গে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ রয়েছে ২২,৭৭০ কোটি টাকার। এমন সংস্থার ভার সরকার নিচ্ছে কেন, এই সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে।
গত সেপ্টেম্বরে টেলিকম সংস্থাগুলির জন্য তথাকথিত ‘রিলিফ প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। টেলিকম সংস্থাগুলিকে একাধিক সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। স্পেকট্রামের বার্ষিক কিস্তির বকেয়া শোধ পিছিয়ে দেওয়ার বিকল্প দেওয়া হয়। চার বছর পরে এই বকেয়া পরিশোধ করা যাবে। সুদের টাকা শেয়ারে পরিণত করার বিকল্পও তখন দেওয়া হয়েছিল। দেশে এখন তিনটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি লাভ হবে ভোডাফোন-আইডিয়ার। ৪ বছরে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে তারা। তার পরেও ভোডাফোন-আইডিয়া আদৌ বকেয়া শোধ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শিল্প-বাণিজ্য মহলেই সংশয় রয়েছে। দেখা যাবে সরকার তাদের আরও ছাড়, আরও রিলিফ দিচ্ছে। সরকারি কোষাগারের অর্থের অপচয় ছাড়া এ আর কিছুই না।
যে তৎপরতা দেখানো হচ্ছে বেসরকারি সংস্থার জন্য তার ছিটেফোঁটাও নেই রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল’র জন্য। ২০১৯-এ জানানো হয়েছিল বিএসএনএল’র জন্য কেন্দ্র আর্থিক প্রকল্প ঘোষণা করবে। কোথায় সেই প্রকল্প? ব্যয়সঙ্কোচের নামে সংস্থার বিপুল সংখ্যক কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪-জি চালুর ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ বিএসএনএল’র পরিকাঠামো সম্পদ অনেক বেশি।
মোদী সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেসরকারিকরণের মহা-উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানবন্দর, বন্দর, ইস্পাত, পেট্রোলিয়ামের মতো মৌলিক ক্ষেত্রকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক সংযুক্তি ও বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিমার ক্ষেত্রেও তা-ই। এইসব করার সময়ে যুক্তি দেখানো হয় ‘ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়’। অথচ বেসরকারি সংস্থার বকেয়াকে ইকুইটিতে রূপান্তরের সময়ে এই যুক্তি উধাও হয়ে যায়।