পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উপরেই হবে কর্পোরেশনের নয়া ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট!
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Aug 19, 2021 23:46 [IST]
- Last Update: Aug 20, 2021 03:00 [IST]
পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে ‘পরিবেশ বান্ধব’ ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরি করতে চলেছে কলকাতা কর্পোরেশন! কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুর ব্লকের অন্তর্গত চৌবাগায় প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এই প্ল্যান্টটি তৈরি করা হবে। জার্মান প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হবে এই নয়া ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট। পরিবেশ দপ্তর এবং রাজ্য অর্থ দপ্তরের অনুমোদন মিললেই শুরু হবে কাজ। তবে চৌবাগা এলাকা পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মধ্যেই পড়ে। তাই এই এলাকায় কীভাবে এই বিরাট পরিমাণ জমি নিয়ে প্ল্যান্ট তৈরি হতে পারে? প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁদের কথায়, পরিবেশ ধ্বংস করে পরিবেশ বান্ধব প্ল্যান্ট কী ভাবে হবে?
২০১৮ সাল থেকেই রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে যে কাঁচামাল ব্যবহার হয় সেই হট মিক্স তৈরিতে ব্যাপক দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবিদরা। হট মিক্স প্ল্যান্টের দূষণ মাত্রা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় পরিবেশ আদালতের মামলাও হয়। পরিবেশ আদালত নিষিদ্ধ করে দেয় এই প্ল্যান্টগুলি। আদালতের নির্দেশে কলকাতা কর্পোরেশন রাস্তা তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিবেশ-বান্ধব কোনও নয়া প্ল্যান্ট করা সম্ভব কিনা জানতে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে। কমিটিতে রাখা হয় রাজ্য পূর্ত দপ্তর, কেএমডিএ, হুগলী রিভার ব্রিজ কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন এবং আইআইটি খড়গপুরের আধিকারিকদের। পরিবেশবিদ এবং পৌর আধিকারিকদেরও এই কমিটিতে রাখা হয়। দেশ এবং বিদেশে দূ্যণমুক্ত রাস্তা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। একটি জার্মান কোম্পানি ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের প্রযুক্তি তুলে ধরে কর্পোরেশনের এই কমিটির কাছে। একাধিকবার এই প্রযুক্তি দেখার পর কমিটির সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান প্রযুক্তির সাহায্যে এই ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এরপরই তৈরি করা হয় প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট। ইতিমধ্যে পরিবেশ আদালত ও পরিবেশ আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে ভাঙড় এলাকায় আরেকটি মিক্স প্লান্টের জন্য ৫ বিঘা জমিও চিহ্নিত করেছে বেশ কয়েক বছর হতে চলল। ২০১৮ সালের পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ রাস্তা তৈরির কাঁচামাল হট মিক্স ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরিবেশ দপ্তরের সাহায্যে পামার বাজার এবং গড়াগাছা অবস্থিত হট মিক্স প্লান্টগুলিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে দূষণের মাত্রা বেশ কিছুটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। যদিও সেখান থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে রাস্তা তৈরির কাচামাল।
কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, কলকাতার উপকণ্ঠেই নাকি এই পরিবেশ-বান্ধব ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরি করা হতে পারে। এখানে উৎপাদিত কাঁচামাল কলকাতা কর্পোরেশনের পাশাপাশি নেবে কেএমডিএ, এইচআরবিসি ও রাজ্য পূর্ত দপ্তর। তবে এই গোটা বিষয়টি তৈরি করতে কলকাতা কর্পোরেশন যে জায়গা অধিগ্রহণ করছে তা নাকি পড়ছে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায়।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের আশঙ্কা, ওই জায়গা জমির চরিত্র বদল করার চেষ্টা করতে পারে। এইখানে এই প্ল্যান্ট তৈরি হয় পরিবেশে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে। কেন পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে এই কাজ করা হবে? বিকল্প জায়গায় কেন নয়? যদি কলকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষই পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ধ্বংস করতে উদ্যোগ নেয় তাহলে বেআইনি নির্মাণ আটকাতে পারা কঠিন হয়ে যাবে ভবিষ্যতে। কলকাতার পরিবেশের উপর পরতে পারে খারাপ প্রভাব।
এপ্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের রাস্তার দপ্তরের দায়িত্বে থাকা প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রতন দে সংবাদমাধ্যমকে জানান, পরিবেশ-বান্ধব ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরির জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালচ্ছে। কলকাতার কাছে উপযুক্ত জায়গা পাওয়া একটা সমস্যা হচ্ছিল। জায়গা এবং প্ল্যান হাতে এসে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো ওখানে ম্যাস্টিক প্লান্ট তৈরি করা হবে। অপেক্ষা শুধু রাজ্য অর্থ দপ্তর এবং পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্রের। চৌবাগায় ওই প্ল্যান্টটি গড়তে খরচ পড়বে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।