"গঙ্গাসাগর মেলা জিন্দাবাদ’’ বিধি শিকেয়, বাবুঘাটে স্লোগান তুললেন মমতা
-
-
- Jan 13, 2022 07:32 [IST]
- Last Update: Jan 13, 2022 07:32 [IST]
সংক্রমণের ‘পজিটিভিটি’ হারে দেশের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে এরাজ্যে শীর্ষে ওঠার দিনে বাবুঘাট থেকে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘গঙ্গাসাগর মেলা জিন্দাবাদ।’’
কলকাতায় স্বাগত জানিয়েছেন বিহার, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে হাজারে হাজারে রাজ্যে আসা তীর্থযাত্রীদেরও! হাইকোর্টের আরটিপিসিআর টেস্ট বাধ্যতমূলক করার শর্ত শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য,‘‘ ২০-৩০ লক্ষ লোক আসে। কত মানুষের আরটিপিসিআর করবেন?’’
মঙ্গলবারই এরাজ্যের করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কলকাতায় সংক্রমণের সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেট ৬০ শতাংশ! এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যেও করোনা সংক্রমণের পজিটিভিটির হার ৩২ শতাংশের ওপর! দিল্লি যেখানে নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করে ২৩ শতাংশে, মহারাষ্ট্রে ২২.৩৯ শতাংশ সেখানে শীর্ষে এরাজ্যেই। তারপরও এদিন বাবুঘাটে সশরীরে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থেকে ভিনরাজ্য থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার নাম করে জয়ধ্বনি দিতে শোনা গিয়েছে। সংক্রমণের এই ভয়াবহতায় মুখ্যমন্ত্রীর সাগর মেলার জয়ধ্বনি প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষ্ণুমাতা, চণ্ডীমাতার পর গঙ্গাসাগর মেলা জিন্দাবাদ বলার পর আর বাকি থাকল কী? মোদী, যোগীর থেকেও উনি যে বিশ্বাসযোগ্য তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাতে রাজ্যের মানুষের ক্ষতি হলেও পরোয়া নেই।’’
গোটা দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যেগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকাল ৪টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা মমতা ব্যানার্জিরও। সূত্রের খবর, কালীঘাটের বাড়ি থেকেই বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। নিভৃতবাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সিমলা স্ট্রিটে বিবেকানন্দের বাড়িতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাবুঘাটে।
গত বুধবারই গঙ্গাসাগর মেলার শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ডবল ভ্যাকসিনের শংসাপত্র থাকতে হবে মেলায় প্রবেশের জন্য। ৭২ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর টেস্ট করে নেগেটিভ হলেও প্রবেশ করা যাবে সাগর মেলায়। ভিনরাজ্য থেকে বাবুঘাটে জড়ো হওয়া তীর্থযাত্রীদের কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
‘‘যতটা মানা সম্ভব ততটাই কোভিড বিধি মেনে চলুন। ছোট করেই মানো। তবে তা হৃদয় দিয়ে মানো।’’ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাইকোর্টের নির্দেশ মেলায় যেতে হলে আরটিপিসিআর বাধ্যতামূলক। ঘুরিয়ে কোর্টের নির্দেশ নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘যেভাবে ঘরে, ঘরে এবার কোভিড ছড়িয়েছে, এতটা হইচই করার দরকার নেই। বিহার, ইউপি, রাজস্থান থেকে যাঁরা এসেছেন তাদের স্বাগত।’’ মমতা ব্যানার্জির প্রশ্ন, ‘‘বাইরে থেকে ট্রেনে, গাড়িতে, প্লেনে কত মানুষ এত মানুষ আসে। কতজনের আপনি আরটিপিসিআর করবেন? কতজনকে দেখবেন? গঙ্গাসাগর মেলায় ২০-৩০ লক্ষ লোক আসে।’’ সুজন চক্রবর্তী জানান,‘‘ ২০লক্ষ মানুষকে সাগর মেলায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। আর তাদের টেস্টের ব্যবস্থা কী করলেন? রাজ্যের মানুষই টেস্ট করার সুযোগ পাচ্ছে না। সেখানে বাইরে থাকা মানুষের কীভাবে করোনা পরীক্ষা হবে।’’ কলকাতা হাইকোর্ট কিন্তু মেলার অনুমোদনের শর্ত দিয়ে গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়বদ্ধ করেছে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্য সচিবকে।
দু’দিন আগেই রাজ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত আপাতত দু’মাসের জন্য নিষিদ্ধ করার কথা বলেছিলেন তাঁর ভাইপো, দলের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। ডায়মন্ডহারবারের সাংসদের মন্তব্যের পর এদিনই প্রকাশ্যে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। বিষয়টাকে যে কোনোভাবেই গুরুত্ব দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী এদিন তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেও বাবুঘাটে এসে মেলার পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘কোভিডকে ঠেকানোর জন্য আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হচ্ছে, মানুষ যাতে কোভিড বিধি মেনে চলে। একজন মেনে না চললে, সকলের ভুল বলা ঠিক নয়।’’ তারপরেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে,‘‘ গঙ্গাসাগর মেলায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে বললে কেউ যাবে না। কোভিডের ভয়ে কেউ যাবে না।’’ কাদের উদ্দেশ্যে এটা মুখ্যমন্ত্রী বললেন, তা নিয়ে এখন তৃণমূলের অভ্যন্তরেই চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ, অভিষেক ব্যানার্জির দু’দিন আগে করা মন্তব্যের পর দলের অনেকেই সাংসদের পাশে দাঁড়িয়েছে। টুইট করে সাংসদের মতকে সমর্থন জানিয়েছে।