Surrender

আত্মসমর্পণের পথে

সম্পাদকীয় বিভাগ

মুখে যতই আত্মনির্ভরতা, দে‍‌শের স্বার্থ বা স্বদেশিয়ানার বুলি আওড়ান না কেন ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মুখে মোদী সরকার কিন্তু আত্মসমর্পণের পথেই  হাঁটতে চলেছেন। অর্থনীতি শিল্প, বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তরকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের বাজার মার্কিন পণ্যের জন্য আরও কতোটা খুলে দেওয়া যায়। গত কয়েক মাস ধরে দু’দেশের মধ্যে ছয় রাউন্ড আলোচনা হয়েছে। ভারত যতোটা ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে তাতে আমেরিকা রাজি নয়। তারা অনেক বেশি শুল্ক ছাড় চায় এবং শুল্ক বহির্ভূত অন্যান্য বাধা দূর করতে চায়। ভারত এখনও পর্যন্ত তাতে সম্মত হয়নি বলে কোনোরকম সমঝোতায় আসা যায়নি। তাই ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ  চা‍পিয়ে দিয়েছেন এবং সেটা ৯ আগস্ট থেকে কার্যকর হবার কথা। এছাড়াও ভারত যেহেতু আমেরিকার অমতে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনে তাই ভারতের উপর জরিমানা ঘোষণা করেছেন। এর আগে ব্রিকস গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে ভারতকেও ট্রাম্প হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন যদি ডলারের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা হয় বা মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে।
ট্রাম্প বার বার ভারতকে যতই অসম্মান ও অপদস্থ  করুন, তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, বিদ্রুপ করুন, শুল্ক নিয়ে যতই হুমকির পর হুমকি  দি‍য়ে যান মোদী সরকার পালটা পদক্ষেপ তো দূরের কথা ন্যূনতম প্রতিক্রিয়াও  ব্যক্ত করেনি। মুখে কুলুপ এঁটে টানা নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। চীন, রা‍‌শিয়া এমনকি  ব্রাজিলের মতো দেশও ট্রাম্পের একতরফা মাতব্বরির বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নিচ্ছে। অথচ মোদীরা ঠিক করে নিয়েছেন ট্রাম্প রুষ্ট হতে পারেন এমন কোনও পদক্ষেপ তো দূরের কথা, কোনও মন্তব্যও করবেন না।  পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে নিজের হস্তক্ষেপের দাবি ৩০ বারের বেশি করে ফেললেও মোদীরা ট্রাম্পের মুখের ওপর বলতে পারেননি যে ট্রাম্প মিথ্যে কথা বলছেন। বলবেন  কি করে? বাণিজ্য বন্ধের ভয় দেখিয়ে  সত্যি সত্যিই ‍ তো অপারেশন সিঁদুর মধ্যপথে বন্ধ করিয়েছেন ট্রাম্প।
এর আগে ভারতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর বদলায় ভারত বেশকিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েছিল। পরে ট্রাম্পের  হুমকির ভয়ে মোদীরা বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করলে ট্রাম্প কিন্তু প্রত্যাহার করেননি। উলটে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে  মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের সময় ট্রাম্প  বলেছি‍‌লেন ভারত যেন আমেরিকা  থেকে তেল  ও অস্ত্র কেনা বাড়ায়। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অনেকটা  কমিয়ে আমেরিকা থেকে কেনা বেড়েছে। মার্কিন অস্ত্র কেনার  আয়োজনও চলছে। আমেরিকার  স্বার্থে পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন শিথিল হয়েছে আমেরিকা  যাতে ভারতে পরমাণু চুল্লি বিক্রি করতে পারে। এখন  ট্রাম্পকে খুশি করে ভারতের বাজার যতোটা সম্ভব খু‍‌লে  দেবার চেষ্টা হচ্ছে। আমেরিকা চায় কৃষি পণ্যের ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্মুক্ত হোক। তাতে সস্তার মা‍র্কিন ভারতের বাজার দখল করবে। সর্বনাশ হবে দে‍শের কোটি কোটি কৃষক পরিবারের। কৃষকের  সর্বনাশ করে গোপনে ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতা করতে চলেছেন মোদীরা। আসলে চীনের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নিতে গিয়ে আমেরিকার পুতুলে পরিণত হচ্ছে ভারত। আমেরিকার সঙ্গে না থাকলে মোদীরা মনে করছেন ভারত নিঃসঙ্গ হয়ে যাবে। তাই শত অপমান সহ্য করেও এবং দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েও মোদীরা আমেরিকার করুণা প্রার্থী।

Comments :0

Login to leave a comment