Dipsita Dhar

গরলগাছার সভায় দীপ্সিতার ‘পাঁচালী পাঠে’ গলা মেলালেন মহিলা-শিশুরাও

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

হুগলীর গরলগাছা হাইস্কুলের মাঠে দীপ্সিতা ধর। (পাশে) সমাবেশের একাংশ।

পূজা বোস

'বাংলা বাঁচাও যাত্রা' যত ঘন জনবসতির কাছে এসেছে ততই বেড়েছে পদযাত্রার সংখ্যা। 
গত শনিবার এই যাত্রা চলছিলো চন্দনগর শহর থেকে ভদ্রেশ্বর, বৈদ্যবাটি হয়ে ডানকুনির দিকে। কখনও বাইকে, কখনও টোটোয় আবার কখনও পায়ে হেঁটেই নেতৃবৃন্দকে পরের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে দিয়েছে জনতা। 
সামনের দিকে চোখ রাখলে যতদূর দেখা যায় চোখে পড়েছে লাল পতাকা হাতে দলবদ্ধভাবে এগিয়ে চলা মানুষ। আর কানে আসছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ শ্লোগান। 
যাঁরা মিছিলে অংশ নিতে পারেননি তাঁরা দাঁড়িয়েছেন বাড়ির সামনে নেমে এসে। কেউ কেউ বাড়ির বারান্দা থেকেই ছুঁড়ে দিয়েছেন ফুল। আবার কখনও মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখিয়ে নিজেদের ঘরের মেয়ে মীনাক্ষী, দীপ্সিতাকে জানিয়েছেন অভিবাদন। 
মিছিল যখন ডানকুনি চণ্ডীপুরের গরলগাছার সভায় গিয়ে পৌঁছালো তখন দেখা দেখা গেল স্টেজের সামনের দিকে মায়ের সঙ্গে কচিকাঁচারাও দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ওদের দীপ্সিতা দিদির পাঁচালী শুনবে।
সভায় বক্তব্য রাখার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর তথা তৃণমূল সরকারের অপশাসনের পাঁচালি করে শুনিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন নেত্রী দীপ্সিতা ধর। তাঁর সঙ্গে সভাস্থলে উপস্থিত সব মানুষ, নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও গলা মিলিয়েছে। 
গরলগাছার সভা থেকে দীপ্সিতা বলেন, "বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশী বলা হচ্ছে। একজন নিরপরাধ মানুষকে হঠাৎ করেই দোষী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তামান্না, তিলোত্তমা, আনিস খান হত্যায় দোষীদের শাস্তি হয় না। সেই বাংলা কি আদতেও ভালো আছে বলে মনে হয়? বাংলার ভালো থাকা মানে বাংলার গরিব টোটোচালকদের ভালো থাকা, সাধারণ মানুষের ভালো থাকা। সব অংশের মানুষ যখন ভালো থাকা, ধর্মের ভেদাভেদ নয়, হিন্দু-মুসলমান সব মানুষের একত্রে ভালো থাকার জন্য দাবি তুলেছে এই বাংলা বাঁচাও যাত্রা। 
তিনি বলেন যে মন্দির-মসজিদ ঘিরে বিবাদ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকারকে আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০১১ সালের আগে এমন ছিল না বাংলা। 
তিনি আরও বলেন, "আমাদের রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর আমলে ধর্ষিত মেয়েদের সংখ্যা সব থেকে বেশি। এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে মুখ্যমন্ত্রী আক্রান্তের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, মেয়েটা রাতে বেরিয়েছিল কেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মেয়েরা বেগম রোকেয়া, মাতঙ্গিনী হাজরাকে জানে। তাদের রাত দেখাতে যাবেন না।’’ 
দীপ্সিতা বলেন যে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ মিলে নতুন রাজনীতি শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনি যদি বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তা’হলে আপনাকে বাংলাদেশী বলবে। জাত-ধর্মের নামে রাজনীতি করছে। আমাদের বাংলার বহু মা-দিদা বহুদিন থেকেই বাড়িতে গীতা পড়েন। এমন কোনো বিপদ আসেনি যে তাঁদের ব্রিগেডে গিয়ে গীতাপাঠ করতে হবে। বাংলা তো রামকৃষ্ণ-মা সারদার বাংলা। তাঁরা বলে গেছেন সবার জন্য ভগবান। ছোঁয়া- ছুতমার্গের থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। আমাদের ইতিহাস তো লালনের ইতিহাস। এই বাংলার সুন্দরবনে ওলাবিবির পুজো হয়। ওলাবিবি তো একজন মুসলমান দেবী। কিন্তু তাঁকে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে তার পুজো করেন। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতার ইতিহাস। সেখানে ধর্মের রাজনীতি করছে। আমরা বলছি, লাল ঝান্ডা বলছে, হিন্দু মুসলমান সব বাড়ির ছেলেমেয়েরাই শিক্ষা পাবে, কাজ পাবে। মেয়েরা রাতে বাইরেও বেরবে। এর জন্যই লাল ঝান্ডার লড়াই।  পশ্চিমবঙ্গের যুবদের হাতে চাকরির সাদা খাম তুলে দেওয়ার জন্যই বাংলা বাঁচাও যাত্রার লড়াই। "

Comments :0

Login to leave a comment