UTSAVE ANUVABE / AVIK CHATTARJEE / BIRYANI EATING / MUKTADHARA / 1 OCTOBER / 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে / অভীক চ্যাটার্জি / বিরিয়ানির আলুর — দোষ না গুণ ? / মুক্তধারা / ১ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

UTSAVE ANUVABE  AVIK CHATTARJEE  BIRYANI EATING  MUKTADHARA  1 OCTOBER  3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে 

মুক্তধারা 

বিরিয়ানির আলুর — দোষ না গুণ ?

অভীক চ্যাটার্জি

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

 

 

দুর্গা পুজো, বাঙালি আর খাওয়া, এই তিনটি কথা এক সাথে বললে, সবার আগে যে পদটির কথা মনে আসে, সে আর কিছু নয়, বিরিয়ানি। বিশাল বপুর হাড়ির মুখের লাল কাপড় খুলে যখন এই সুগন্ধি ধোঁয়া ওঠা খাবারটি পরিবেশন করা হয়, তখন যে কোনো ভোজনরসিক বাঙালির মন চঞ্চল হতে বাধ্য। আসুন, আজ কথা বলি সেই বহু প্রচলিত ও সমাদৃত খাবারটির ইতিহাস নিয়ে। আর জেনে নি তার সুদূর যাত্রাপথের হেঁসেলের হালহকিকত।

প্রথমত এটা খুব সত্যিকথা, যে এই মহার্ঘ খবরটি একেবারেই আমাদের দেশীয় খাবার নয়, যদিও এ কথা সকলেরই জানা। কিন্তু, এর সত্যিকারের উৎস কোথায়, তা নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। আমরা না হয় সব কটা নিয়েই কথা বলি।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, বদলির চাকরির সূত্রে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের বিরিয়ানির স্বাদ চাখার সুযোগ আমার হয়েছে, তার থেকে একটি উপলব্ধি বড়ই প্রখর যে ভারতীয়রা এই বিদেশী খাবারটিকে শুধু আপনই করে নিয়েছে তো নয়, তাকে নিজের ঢঙে নিজের মতো করে সাজিয়েও নিয়েছে, ঠিক চাওমিন-এর মত। তাই এক সময়ের এই বিদেশী খাবারটি এখন পুরোদস্তুর ভারতীয় হয়ে উঠেছে। ভারতের হেঁসেলের জল হওয়াতে সে হয়ে উঠেছে ভারতীয়র চেয়েও বেশি ভারতীয়।

যদি বিরিয়ানির জন্মস্থান খুঁজতে যাওয়া হয়, তাহলে হয়তো আমরা পারস্যকেই বিবেচনাধীন রাখবো, কিন্তু জন্মলগ্নের বিরিয়ানির সাথে আজকের ভারতীয় বিরিয়ানির ফারাক বিস্তর। তবে একটি মত বলে এই বিরিয়ানির জন্ম চেঙ্গিস খানের রান্নাঘরে। আমারও এই তত্ত্বটি বেশ যুক্তিগ্রাহ্য বলেই মনে হয়।আসলে, বিশাল সেনাবাহিনীর খোরাকি বাবদ এমন কোনো আমিষ খাবারের দরকার ছিল, যা একাধারে পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। সেখান থেকেই বিরিয়ানির এজাজ হয় বলে অনেকে মনে করেন।

এবার আসি আমাদের দেশীয় বিরিয়ানির কথাতে। এই খাবারটি কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। যদি মহারাষ্ট্রতে যান আপনি, সেখানে ভাত ও মাংস আলাদা আলাদা ভাবে রান্না করে থালাতে নিচে সেই মশলাদার মাংশটি দিয়ে সুগন্ধি ভাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। আর সাথে দেওয়া হয় রায়তা। আবার হায়দরাবাদে যদি যান, সেখানে দম বিরিয়ানির প্রচলন খুব বেশি। যদিও হায়দরাবাদে আরও একটি ধরনের বিরিয়ানিও পাওয়া যায়, যাকে বলে অন্ধ্র স্বাদের বিরিয়ানি। যেখানে মাংসটি বিশেষ মসলা দিয়ে ভেজে বিরিয়ানির সাথে পরিবেশন করা হয়। সাথে থাকে সালান ও রায়তা। কেরালাতেও তার নিজস্ব ধরনের বিরিয়ানি রয়েছে, যাতে গরম মসলার আধিক্য বেশি। আর আছে আমাদের কলকাতা বিরিয়ানি, যার বিশেষত্ব হলো তার অনবদ্য সুগন্ধ এবং আলু।

কলকাতার বিরিয়ানির ইতিহাস জানতে হলে সবার আগে জানা দরকার লখনউ এর নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে। সঙ্গীত ও শিল্পের পৃষ্ঠপোষক এই নরম মনের মানুষটি কলকাতার মেটিয়াবুরুজে এসে থাকতে শুরু করেন ১৮৫৬ সালে। তখন তার মাসিক মাসোহারা ১ লক্ষ টাকা, যা ব্রিটিশ সরকার তাকে দিতেন। কিন্তু এত ঠাকুর চাকর ঝি নিয়ে নবাব সাহেবের সে খরচ কুলিয়ে উঠত না। আর নবাবের পাতে রোজ রোজ মাংসের যোগান দিতে গিয়ে খাস বাবুর্চির নাভীর শ্বাস ওঠার অবস্থা! সে সময় মূলত আর্থিক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করার তাগিদেই বিরিয়ানিতে আলু প্রচলন শুরু করলেন বাবুর্চি সাহেব। আর সেই প্রচলন এতটাই সুস্বাদু হলো, যে তাকেই এই ঘরানার মৌলিকত্ব ধরে নেওয়া হলো। তাই ভাবতেই অবাক লাগে, আজ আমাদের এই কলকাতা বিরিয়ানির মূল উপাদানের জন্ম হয়েছিল আর্থিক অসচ্ছলতার বশবর্তী হয়েই।

শেষ পাতে মিষ্টিমুখের মত করে বলে যেতে দ্বিধা নেই, যে ভাবেই আসুক না কেন, বিরিয়ানিতে আলুর মাধুর্য কোনো অংশেই কম নয়, তার আসার কারণ যাই হোক না কেনো। ইতিহাস থাকুন ইতিহাসের জায়গাতেই,আর আমরা নাহয় কব্জি ডোবাই সুসিদ্ধ আলুর পেটের ভেতর।

Comments :0

Login to leave a comment