Bangladeshi

রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন?

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষী খেটেখাওয়া মানুষের ওপর আরএসএস-বিজেপি’র আক্রমণ এক নতুন মাত্রা নিয়েছে। রাজ্যের অর্থনীতি ধ্বংস করে পশ্চিমবঙ্গকে একটা কাজ নেই রাজ্যে পরিণত করেছে তৃণমূল সরকার, ফলে  রাজ্যের প্রান্তিক মানুষ ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বাঁচার তাগিদে। আর বিজেপি এই বাংলাভাষী গরিব মানুষদের ‘বাংলাদেশি’ বলে চরম হেনস্তা করছে। এই আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করছে বামপন্থীরা। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেই বিভাজনের এই রাজনীতি রুখতেই হবে।  
মোদী সরকারের কায়দাতেই চলছে তৃণমূল সরকার। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে গ্রামবাংলায় কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হয়েছিল, একশো দিনের কাজের সংস্থান করা হয়েছিল আইনামাফিক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। সমবায় ভিত্তিক কাজের সুযোগ, স্বনির্ভরগোষ্ঠী গড়ে ওঠা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়েছিল। এখন রাজ্যের যে হাল হয়েছে তাতে কাজ নেই, স্কুলে ড্রপ আউট বাড়ছে, নারী পাচার ঘটছে, আর কাজের জন্য গ্রাম থেকে বহু মানুষকে ভিনরাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে। ভিনরাজ্যে বাংলাভাষী এই প্রান্তিক মানুষদের ওপরেই আক্রমণ নামিয়ে আনছে আরএসএস-বিজেপি। ভারত বহুভাষী, বহু ধর্মবিশ্বাসীদের দেশ। কিন্তু আরএসএস বিজেপি তা মানে না। তারা এক দেশ, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক জাতির তত্ত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে। চিঁড়ে-মুড়ি খেলে, লুঙ্গি পরলে তারা ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাগিয়ে দিচ্ছে। আসামে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বাংলাভাষী মাত্রই বাংলাদেশি বলছেন। বিভিন্ন রাজ্যে তাদের রেশন বন্ধের কথা বলছে বিজেপি। এর ফলে শুধু মুসলিমরা নয়, বাংলাভাষী সব প্রান্তিক মানুষই আক্রান্ত। 
এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাভাষীদের ওপর আক্রমণ বন্ধে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে বরং ভোটর দিকে তাকিয়ে  ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন হলো, বাংলাভাষীদের হেনস্তা বন্ধে রাজ্য সরকার প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন? কেন সেইসব রাজ্যে পশ্চিমবাংলা সরকারের চিঠি পাঠানো হয়নি? কেন বিধানসভায় প্রস্তাব গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়িত্ব পালনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে না? যিনি রাজ্যের অর্থনীতিকে ছারখার করে বাংলার গরিব মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনিই এখন মঞ্চ বেঁধে ভাষা আন্দোলনের বক্তৃতা দিচ্ছেন। 
অন্যদিকে, কেন্দ্রের সরকার একের পর এক ব্যর্থতা ঢাকতেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। মানুষের মধ্যে ধর্মীয়, জাতিগত এবং ভাষাগত বিভেদ তৈরির এটা আরএসএস’র চিরাচরিত কায়দা, সেজন্যই রাজ্য রাজ্যে এই ধরনের ‘চিহ্নিতকরণ’ চলছে বিজেপি’র উদ্যোগে। এক ঘৃণ্য প্রচার শুরু করেছে তারা। এই প্রচারের ভাষ্য ধরেই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ)’র আগমন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এই ধাঁচের প্রচারের এখন মধ্যমণি। আরএসএস’র জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে চিহ্নিতকরণ বিভেদকামী প্রচারেরই অঙ্গ। পরিযায়ী শ্রমিকরা বিশ্ব পুঁজিবাদী বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে শ্রমের গতিশীলতা বেড়েছে এবং যা এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। ফলে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা প্রক্রিয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সমস্যা বাড়ছে। অভিবাসী ও ভূমিপুত্র সংঘাত মারাত্মক হচ্ছে। আর সারা বিশ্বেই অতি-দক্ষিণপন্থী শক্তি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের নামে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর যথেচ্ছ আক্রমণ করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তারই উদাহরণ। ভারতের পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। অভিবাসন এবং পরিযায়ী শ্রমিককে ‘অপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করার যে প্রক্রিয়া তা ভারতের সংবিধানেরও পরিপন্থী। আরএসএস’র পৃষ্ঠপোষকতায় যে ‘কর্পোরেট হিন্দুত্ব স্বৈরশাসন’ চলছে, তারই ফলাফল বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ। ভারতের সাংস্কৃতিক, জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্রের যে ধারা তাকেই ধ্বংসের চেষ্ঠা।  এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই লড়তে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment