প্রতীম দে ও অনিন্দ্য হাজরা
আকাশ ভেঙে চলছে অবিরত বৃষ্টি। তার মধ্যেই ধর্মতলায় মিছিল করে সমবেত হয়েছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা। ঠায় থেকেছেন সমাবেশে। খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে জেদের সমাবেশ দেখল কলকাতা।
বামফ্রন্টের ডাকে হয়েছে এই সমাবেশ। ১৯৫৯’র খাদ্য আন্দোলন, তার আগে ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪৩’র দুর্ভিক্ষ মনে রেখেই আজকের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। বলেছেন লুটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ছিলেন সভাপতি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপির অবস্থান কী? প্রথমে লাফালাফি চলল। তারপর কি হলো? লুটের রাজনীতি আর দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য তৃণমূল-বিজেপি’র সমঝোতা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
যুব আন্দোলনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, যারা পেটের ভারত দিতে পারেনি তাদের নিজেদের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে। তৃণমূল আর বিজেপি’র ভিত ধসে যাচ্ছে।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে ১০০ জন খুন হয়েছেন। আমাদের ৭ জন খুন হয়েছে। লড়াই থেমে থাকবে না। শহীদদের এলাকায় গিয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। তিনি বলেছেন, দেশ এবং বিশ্ব খাদ্য সংকটের মধ্যে। মানুষের মুখে খাবার তোলার জন্য যেমন লড়াই করেছি আমরা। তেমন বর্গার মাধ্যমে মানুষের হাতে জমি তুলে দিয়েছি। গ্রামের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। মানুষ যখন সংকটে তখন বামপন্থীরা পাশে দাঁড়িয়েছে।
তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের পর্ব মনে করিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি খাদ্য মন্ত্রী তখন, কালো বাজারি শুরু হয় বাংলায়। আর আজ আশি বছর পর ক্ষুধার তালিকায় বিশ্বে ভারত ১০৭ তম। আমরা বলি এ দেশ শস্য শ্যামলা, কিন্তু আমরা ক্ষুধার তালিকায় সমানে নামছি, তার কারণ কালোবাজারি। আদানি মমতা জামানায় চালকল কিনছে। প্লাস্টিকের চাল দিচ্ছে রেশন থেকে। যেমন বালি পাচার করছে তেমন আইসিডিএস’র চাল পাচার করছে।
সেলিম বলেন, বামপন্থীরা সংসদে ছিলেন, খাদ্যের অধিকার আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই জন্যই বামপন্থীদের হটানোর ডাক উঠেছে। স্লোগান উঠেছে, লাল হটাও। চিট ফান্ডের চোর, কয়লা পাচারের চোট, তার বসবে সংসদে। গরিব, খেতমজুর, নিম্নবিত্তের কথা কেউ বলবে না। সংসদে শূন্য করা হয়েছে, বামপন্থীরা জনতার কথা সোচ্চারে তুলে ধরেছে রাস্তায়। কৃষিকে কর্পোরেটের মুঠোয় আনতে পাশ হয়েছিল তিন বিল। কৃষক আন্দোলনের চাপে পিছু হটতে হয়েছে কেন্দ্রকে। সেলিম মনে করিয়ে দেন আজকে জ্বালানির দাম, বিদ্যুতের দামের বিরুদ্ধে লড়াই করাও বামপন্থীদের দায়িত্ব।
তুমুল বৃষ্টি বক্তব্য রাখছেন সেলিম মানুষ তাও আছে। তিনি বলেন, পুলিশ বলেছিল মঞ্চ করতে দেবে না। তাও এই সভা হচ্ছে। আমরা শহীদদের স্মরণ করি শপথ নেওয়ার জন্য। আজ স্কুল মাদ্রাসা বন্ধ হচ্ছে। দেশে মোদী বন্ধ করছে, রাজ্যে মমতা। পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ছেলে মেয়েরা বাইরে চলে যাচ্ছেন। আমরা বলেছিলাম চুরির টাকা সব কালীঘাটে গিয়েছে। অনেকে তখন বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আজ আদালত সেই কথা বলছে। অভিষেক অ্যাকাউন্ট ভাড়া করে টাকা রেখেছে। মোদী শাহ কিছু করবেন না। বাংলার মানুষের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার প্রতিকার করবে না। তাই মানুষে মানুষে ভাগাভাগির রাজনীতি করে বিজেপি।
সেলিম বলেন, এক মাসের মধ্যে ভাইপোকে গ্রেপ্তার না করলে ইডি-সিবিআই দপ্তর ঘেরাও হবে। কোনও রাহুল, মোদী মমতাকে, ভাইপোকে বাঁচাতে পারবে না। আমরা বিচার চাই।
ছবি: রবীন গোলদার
Comments :0