রাজধানী দিল্লিকে অবরুদ্ধ করে দেওয়ার মতো শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের একসঙ্গে সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মেহনতি মানুষের তিনটি সংগঠন। আগামী ৫ এপ্রিল দিল্লির বুকে এই যৌথ সমাবেশে সারা দেশ থেকে মানুষের অংশগ্রহণ ঘটাতে সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষকসভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন প্রস্তুতি শুরু করবে। শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন বৃহত্তর রূপে আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা এবং সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা। ৫ লক্ষের বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
ত্রিচূড়ে সারা ভারত কৃষকসভার ৩৫তম সর্বভারতীয় সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় হেমলতা বলেছেন, ২০১৮ সালে দিল্লিতে এমন সমাবেশ করা হয়েছিল। তারপরে আবার ৫ এপ্রিল দিল্লিতে তিনটি সংগঠন মিলিতভাবে লাল ঝান্ডার ঢেউ তুলে বৃহত্তম সমাবেশ করবে। সারা দেশে আলোড়ন ফেলে দেওয়ার মতো কর্মসূচি হবে দিল্লিতে। হান্নান মোল্লাও জানিয়েছেন, রাজধানীতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার আন্দোলনের সময় শ্রমিকরা পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন। এবার শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর অর্থাৎ খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্যের চেহারা দেখবে রাজধানী। ভেদাভেদের রাজনীতি করে মোদী সরকারের শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী নীতি রূপায়ণের কৌশল ভেস্তে দিতে হবে। তার জন্য প্রতিবছর প্রতিবার একইরকম পদ্ধতিতে আন্দোলন হবে এমন কিছু নির্দিষ্ট নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলনের পদ্ধতি নির্ধারিত হবে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার এবং পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি তুষার ঘোষ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লির এই কর্মসূচিতে অন্তত ১০ হাজার কৃষক এবং ৬ হাজার খেতমজুর অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে, শীঘ্রই এর জন্য রাজ্যে প্রচার প্রস্তুতি শুরু হবে। অন্যদিকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান থেকেও বহু কৃষক দিল্লিতে যাবেন। কেরালা থেকেও বিপুল সংখ্যায় কৃষকরা যাবেন বলে জানিয়েছেন সে রাজ্যের কৃষক নেতৃবৃন্দ।
শ্রমকোড সহ শ্রমিক বিরোধী যেসব পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকার নিচ্ছে তার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা দিল্লি অভিযানে শামিল হবেন। অন্যদিকে কৃষকরা মোদী সরকারের কৃষক বিরোধী, খেতমজুর বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে শামিল হবেন। তার আগে রাজ্যে রাজ্যে কৃষক খেতমজুরদের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করা হবে। সরকারের কাছ থেকে যেসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যকে সামনে রাখার কথা সারা ভারত কৃষকসভার সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন তার মূলকথাই হলো, কৃষিকে কর্পোরেট গ্রাস থেকে বাঁচিয়ে কৃষকদের জীবনরক্ষা করতে হবে।
সম্মেলনে কৃষক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ফসলের লাভজনক দাম আইনগতভাবে নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই দামে ফসল সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুতের মাশুল কমাতে হবে, কৃষিতে খরচ কমাতে উপকরণের দাম কমাতে হবে এবং সর্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা প্রসারিত করতে হবে। কৃষিঋণের শিকল থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে হবে, বিমার নামে কর্পোরেট মুনাফা বন্ধ করে সব কৃষক সুফল পাবে এমন রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা চালু করতে হবে, কৃষিঋণের সুযোগ বাড়াতে হবে, সেচের সুযোগ বাড়াতে হবে। কর্পোরেট স্বার্থে জমি অধিগ্রহণের নামে জমি লুট বন্ধ করে ভূমিসংস্কার করতে হবে। এছাড়াও কৃষক ও খেতমজুরদের পেনশন, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, রেগার কাজের দিন সংখ্যা বাড়ানো সহ গ্রামোন্নয়ন ও কৃষক স্বার্থবাহী দাবির কথা বলা হয়েছে।
সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সম্মেলনের তৃতীয় দিনে তিনটি কমিশন গঠন করে কৃষি সংক্রান্ত তিনটি বিষয়ের ওপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ‘গ্রামীণ ভারতে জমিনীতিতে নতুন প্রবণতা’ ‘ভারতীয় কৃষিতে লগ্নিপুঁজি এবং কর্পোরেট অনুপ্রবেশ’, ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চিতকরণ’— এই তিনটি বিষয়ের ওপরে তিনটি কমিশনে সারা দেশের কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত, অর্থনৈতিক সংখ্যাতত্ত্ব ইত্যাদির সঙ্গে একেবারে তলা থেকে চাষের খেতে ঘাম ঝরানো মানুষের অভিজ্ঞতার মিশেল ঘটিয়ে কৃষকদের সমস্যার সমাধানের দাবিতে কৃষক আন্দোলনের পথ নির্ধারণের চেষ্টা চলছে সারা ভারত কৃষকসভার সম্মেলনে।
Aiks 2nd day conference
৫ এপ্রিল দিল্লি অবরুদ্ধ করবেন মেহনতি জনগণ
×
Comments :0