anganwadi

এফআরএস-এ গতি আনতেই মিলবে স্মার্ট ফোনের টাকা

রাজ্য

মুখের ছবি মিলিয়ে খাবার দেওয়ার শর্তেই শেষ পর্যন্ত স্মার্ট ফোন কেনার টাকা পেতে চলেছে রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা!
শিশুদের মুখের ছবি মিলিয়ে নেওয়া হচ্ছে পোষণ অ্যাপে। আগামী মাস থেকে গোটা দেশে চালু হতে পারে এফআরএস(ফেস রেকগনিশন সিস্টেম)। ছবি মিললেই তবে মিলবে রান্না করা খাবার। স্মার্ট ফোনের টাকা হাতে রেখে ছয় বছর ধরে দেয়নি রাজ্য সরকার। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের ফরমানের এফআরএস এরাজ্যে চালু করার জন্যই ছয় বছর পর দেওয়া হচ্ছে ফোন কেনার টাকা। চাপানো হচ্ছে দাসত্বের শর্ত।’’ 
২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে বকেয়া পড়ে আছে স্মার্ট ফোন কেনার টাকা। ওই বছরের মার্চ মাসে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক চালু করে ‘পোষণ অ্যাপ’। মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে শুরুতে বলা হয়েছিল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপভোক্তা শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের নথিভুক্ত করার। আর তখনই দেশের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের স্মার্ট ফোন কেনার জন্য ৮হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখন থেকেই টাকার দাবি করে বারংবার এরাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরে অভিযান চালিয়ে গেছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু প্রাপ্য সেই টাকা মেলেনি। 
গত শুক্রবার কলকাতায় ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন মঞ্চ থেকে এরাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও আশাকর্মীদের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যের ১ লক্ষ ৫ হাজার আইসিডিএস কর্মী ও ৭২হাজার আশাকর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্মার্ট ফোন কেনার জন্য টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত কালীপুজোর মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। 
অথচ ২০১৯ সাল থেকে দাবি করেও এতদিন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য স্মার্ট ফোনের টাকা না দেওয়ার পর এখন তড়িঘড়ি টাকা দেওয়ার কারণ কী? আসলে রাজ্যে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ফরমান মেনে এফআরএস(ফেস রেকগনিশন সিস্টেম) চালু করেছে রাজ্য সরকার। যে ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলকভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবক ও প্রসূতিদের ক্ষেত্রে নিজেদের মুখের ছবি স্ক্যান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্দেশিকা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের উপস্থিতিকে তদারকি করার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিল। যার অর্থ, শিশুদের ও গর্ভবতী মায়েদের মুখের ছবি মিললেই তবেই আগামীদিনে তাদের খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর মাস থেকেই গোটা দেশে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় সরকার। দীর্ঘদিন বকেয়া রাখার পর এখন দ্রুততার সঙ্গে স্মার্ট ফোন দেওয়ার পিছনে আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকেই রাজ্য সরকার কার্যকর করতে চলেছে বলে মনে করছেন আইসিডিএস কর্মীরা। কারণ, স্মার্ট ফোন ছাড়া মোবাইলে ছবি তুলে আধার কার্ডের ছবির সঙ্গে এখনকার ছবি মিলিয়ে নথিভুক্ত করতে হবে পোষণ অ্যাপে। তারজন্য স্মার্টফোন জরুরি বুঝেই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। 
সিআইটিইউ অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ আইসিডিএস কর্মী সমিতির কার্যকরী সভানেত্রী ইন্দ্রাণী মুখার্জির বক্তব্য, ‘‘আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে টাকা দেওয়াটা সরকারের কাছে দরকার ছিল। কিন্তু তার থেকেও বড় ঘটনা হলো, এফআরএস ব্যবস্থায় পোষণ অ্যাপে শিশু ও মায়েদের নথিভুক্ত করার জন্য এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’’ 
ছয় বছর পর টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আইসিডিএস কর্মীদের টাকা পাওয়ার জন্য স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হচ্ছে একটি অঙ্গীকার পত্রে। সেখানে ১০ হাজার টাকার ফোন কেনার পর সেই ফোনে পোষণ অভিযানের তথ্য আপলোড ছাড়া আর অন্য কোনও কাজ করা যাবে না। ফোন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফোন হারিয়ে গেলে, চুরি হলে বা অপব্যবহার হলে তাহলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আইসিডিএস কর্মীকে। সেই ক্ষতিপূরণের টাকা কী হবে তা ঠিক করবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। একইভাবে কাজ ছেড়ে দিলে, অন্য প্রকল্পে বদলি হলে বা অবসর গ্রহণের পর ফোন ফেরত দিতে হবে। একাধিক শর্তাবলী চাপিয়ে সেই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করনো হবে আইসিডিএস কর্মীকে। সব তথ্য যাচাই করার পর সবুজ সঙ্কেত মেলার পরই মিলবে ফোনের জন্য ১০ হাজার টাকা।
অথচ ২০১৯ সাল থেকে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় সরকার আইসিডিএস কর্মীদের কাছে ফোন কেনার জন্য টাকা দিয়ে গেছে। ২০১৯ সালের ৮ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়ার পর ২০২৩ সালে সেই পুরানো ফোন ফেরত নিয়ে নতুন করে ফোন কেনার জন্য ৯ হাজার ৩০০ টাকা দিয়েছে। এমনকি এফআরএস চালু হওয়ার পর চলতি বছরে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক থেকে ফের মোবাইল ফোন কেনার জন্য প্রত্যেক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর জন্য ১০ হাজার ৮০০ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের সব রাজ্যের সঙ্গে এরাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই টাকা আসার কথা। কিন্তু এরাজ্যে একবারই মাত্র ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
আইসিডিএস কর্মীদের অভিযোগ, মুখের ছবি স্ক্যান করে তা পোষণ অ্যাপে ডাউনলোড করার জন্য ‘৫জি’ ফোন কেনার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার যে টাকা দিচ্ছে বা ফোন কেনার জন্য ন্যূনতম বিবরণ (স্পেশিফিকেশান) চাওয়া হয়েছে তাতে ১০ হাজার টাকায় ফোন কেনা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু ফোন কেনার শর্তেই ১০ হাজার টাকার বেশি ফোন কিনলেও কোনও বাড়তি টাকা দেওয়া যাবে না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘২০১৯ সালে যখন প্রথমবার পোষণ অ্যাপ চালু হলো, তখন আমাদের স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যন্ত এলাকার কর্মীরা স্মার্ট ফোন কি সেটাই জানতো না। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, এলাকার যে কোনও বাড়ি থেকে, কেন্দ্রের কোনও শিশুর অভিভাবকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে অ্যাপ ডাউনলোড করে শুধু উপভোক্তাদের নামগুলি তুলে নাও। আর এখন এফআরএস চালু করার জন্য টাকা দিতে বাধ্য হলেও সেই টাকায় ফোন কিনে কাজ করা কঠিন।’’

Comments :0

Login to leave a comment