মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে ইন্ডিয়া। এসআইআর প্রসঙ্গে বিরোধীদের সাথে কার্যত সংঘাতে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতি চলতি অধিবেশনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারনের দাবি জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব আনতে পারেন বিরোধীরা। সূত্রে খবর ইতিমধ্যে আলোচনা শুরুও হয়েছে ইন্ডিয়া মঞ্চের দলের গুলোর মধ্যে।
উল্লেখ্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারন করতে গেলে সংসদের দুই কক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন নিয়ে পাশ করাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সংসদের যা পরিস্থিতিতে তাতে ইন্ডিয়া মঞ্চের পক্ষে এই প্রস্তাব পাশ করানো কোন ভাবে সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে অনাস্থা প্রস্তাব এনে আসলে কমিশনকে চাপে রাখতে চাইছেন বিরোধীরা।
গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধীর ভোট-চুরি অভিযোগের সমালোচনা করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তিনি দাবি করেছে রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধীরা কমিশনকে নিশানা করছেন। তিনি বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১ কোটি অধিকারিক গোটা দেশ জুড়ে কাজ করেছেন। এর পাশাপাশি ১০ লক্ষ বিএলএ ছিলেন। এতো জনের মধ্যে থেকে কি ভাবে ভোট চুরি হতে পারে? বার বার বিরোধীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে কিন্তু তাদের কাছে যখন নির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হচ্ছে তখন তারা তা কমিশনের কাছে জমা দিতে পারছে না।’
উল্লেখ্য সাংবাদিক সম্মেলন করে রাহুল গান্ধী মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি দেখিয়েছেন যে, ওই কেন্দ্রের ৬.৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ভোট জালিয়াতি করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, একই ব্যক্তির নাম পৃথক পৃথক বুথে নথিভুক্ত আছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভোটারের ছবি নেই। আবার জাল ভোটারের নামও তোলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘তাঁরা প্রথমে কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় আমরা অন্তর্তদন্ত শুরু করি। কংগ্রেসের ৩০-৪০ জন গবেষকের বিশেষ দল একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত গিয়ে নথিপত্র ঘেঁটে, যাচাই করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। তাতে পাঁচ ধরনের গলদ একেবারে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই পাঁচটি ধরন হলো; ১) একই নাম একাধিকবার-১১, ৯৬৫, ২) ভুয়ো ও অস্তিত্বহীন ঠিকানা-৪০,০০৯, ৩) একই ঠিকানায় বিপুল সংখ্যক ভোটার-১০,৪৫২, ৪) অস্বচ্ছ বা ভুল ছবি-৪,১৩২ এবং ৫) ফরম ৬-এর অপব্যবহার-৩৩,৬৯২। নির্বাচন কমিশনের কাছে দুটি প্রশ্নও করেছেন রাহুল গান্ধী। ১) কেন ডিজিটাল ভোটার তালিকা দেওয়া হচ্ছে না? ২) কেন ভোটার তালিকায় এত বেশি ভুয়ো ভোটার?
নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে তিনটি দাবিও জানানো হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ। এপ্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী বলেছেন তাঁরা চান; ১) ডিজিটাল ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২) ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ এবং ৩) নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে ভোটার তালিকার তদন্ত।
ভোট চুরি এবং এসআইআরের বিরোধীতায় গতকাল থেকে বিহারে শুরু হয়েছে ভোট অধিকার যাত্রা। বিহারের ২০ টি জেলায় ঘুরবে এই যাত্রা। পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব সহ একাধিক বিরোধী নেতা।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এসআইআর নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা। গত ২৪ জুন বিহারে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধন বা এসআইআর এর শুরু করেছে। কমিশনের নোটিশে বলা হয়েছে ২০০৩ সালের পর থেকে ভোটার তালিকায় যাদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে তাদের বাবা মায়ের জন্মশংসাপত্র পত্র একাধিক নথি জমা দিতে হবে। তার ভিত্তিতে তাদের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে। বিরোধীদের দাবি কোন আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশনে এই নির্দেশিকা জারি করেছে। তাদের দাবি ঘুর পথে এনআরসির কাজ করানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে। এই নির্দেশিকা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলো। উল্লেখ্য প্রায় ২.৫ কোটি ভোটারের নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেই যেই ভোটারদের থেকে এই সব নথি চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
Election Commission of India
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে ‘ইন্ডিয়া’

×
Comments :0