ফের কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের অগণতান্ত্রিকভাবে সভা পরিচালনা করার অভিযোগ তুলে কর্পোরেশনের মাসিক বোর্ড সভা থেকে ওয়াকআউট করলেন বামপন্থী কাউন্সিলাররা। বৃহস্পতিবার কর্পোরেশনের মাসিক বোর্ড সভায় শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে পৌরবোর্ডের ভূমিকা প্রসঙ্গ নিয়ে ২৯নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই(এম) কাউন্সিলার জয় চক্রবর্তীর তোলা মোশনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের এক জনপ্রতিনিধি অন্যায় ভাষায় আক্রমণ করে বামপন্থী কাউন্সিলারদের। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলারকে বাধা দেননি চেয়ারম্যান। তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতা হিসেবে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের বোর্ড সভা পরিচালনার প্রতিবাদে সরব হয়ে বোর্ড সভা চলাকালীন সভাকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান সিপিআই(এম)’র চারজন কাউন্সিলার।
সিপিআই(এম)’র পরিষদীয় দলনেতা তথা বামপন্থী কাউন্সিলার মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘চেয়ারম্যানের ভূমিকা দুঃখজনক। বোর্ড সভায় বিষয় উত্থাপন করার নিয়মকানুন দলীয় জনপ্রতিনিধিদের শেখাননি চেয়ারম্যান। যে ভাষা বোর্ড সভায় ব্যবহার করা যায় না তৃণমূলের কাউন্সিলাররা বলছেন। বস্তুত বোর্ড সভা পরিচালনার সঠিক নিয়ম চেয়ারম্যানেরও জানা নেই। শুধুই চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। শিলিগুড়ি শহরের প্রকৃত উন্নয়ন বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই হয়েছে। আর তৃণমূলের সময় শিলিগুড়ি শহর লুটের মুখে পড়েছে। এটাই সত্যি। উন্নয়নের কোন কাজ না করে ভোটের রাজনীতি করছে। উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক সভায় বসার খোলা চ্যালেঞ্জ জানান মেয়রকে। আর উন্নয়নের কাজ করতে না পেরে, কোন আর্বান সেন্স নেই তৃণমূলের কাউন্সিলারদের দিয়ে এমনসব কথাবার্তা বলানো হচ্ছে। যা একেবারেই গ্রহণ যোগ্য নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার ও তৃণমূল পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর বোর্ডের কাজ পুরোনো কাজে রঙ লাগিয়ে নিজেদের নামে প্রচার করা। শহরের সর্বত্র বেআইনী নির্মান রমরমিয়ে হচ্ছে। ভাঙতে গেলেই তৃণমূলের দলীয় ঝান্ডা হাতে বেআইনী নির্মান ভাঙতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছয় মাসের মধ্যে যানজট সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতির কি হলো? বেআইনীভাবে টোটোগুলিকে দেদারভাবে টিন নম্বর দিয়েছে কারা? জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়নের কি পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান বোর্ড ? উত্তর নেই মেয়রের কাছে। রাজ্যের সরকার ও শিলিগুড়ি পৌর বোর্ডের অপদার্থতায় গোটা শহর জঞ্জালের শহরে পরিনত হয়েছে। আর বামফ্রন্টের সময়তেই ৩০ ফুটের ভাঙাচোরা হিলকার্ট রোডের উন্নতিসাধন হয়ে ৫০ ফুট হয়েছে। শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিলো না। বিধান রোড, বর্ধমান রোড, নিবেদিতা রোড সম্প্রসারণ, একাধিক সেতু, রাস্তা নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে বামফ্রন্ট বোর্ডে আসার পরে অপরিকল্পিত শহরকে পরিকল্পিত রূপ দেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বামফ্রন্ট সরকারই শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যালিটিকে কর্পোরেশনে উন্নিত করেছে। নতুন ২৬ বর্গকিমি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে কর্পোরেশনের ব্যাপ্তি ঘটেছ। কুয়োর জল ছেড়ে শহরবাসীরা পরিশ্রুত পানীয় জল পান করছেন বামফ্রন্ট সরকারের দৌলতেই। খালপাড়া এলাকায় জল জমে না। পানীয় জলের প্রকল্প সহ নিষ্কাশনী ব্যবস্থা, সাংষ্কৃতিক কেন্দ্র, স্টেডিয়াম তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সময়তেই হয়েছে। স্টেডিয়ামে নেহেরু গোল্ড কাপ অনুষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে শিলিগুড়িকে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছে বিগত বামফ্রন্ট সরকার। শুধু তাই নয়, আজকের শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন বামফ্রন্ট সরকারের উন্নয়নের ফসল। তৃণমূলের কাউন্সিলারদের সেই সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই।’’
জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ট্রাফিক যানজন নিয়ে মানুষের সমস্যার কথা বলতেই তীর্যক আক্রমনের মুখে পড়তে হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজে সমর্থন করছেন। আমাদের বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অপমান করা হচ্ছে বারবার। ভালো প্রস্তাবে ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারতো। বোর্ডের সভায় যদি বলতে দেওয়া না হলে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের কথা বলব।’’
Board Meeting of the Board of Councillors of Siliguri
শিলিগুড়ি পৌরসভার বোর্ড সভা থেকে ওয়াকআউট বামপন্থী কাউন্সিলরদের
×
Comments :0