অরিজিৎ মন্ডল
সবাই একশো শতাংশ সচেতন হয়ে উঠলেই ডেঙ্গু আর হবে না। শুক্রবার এক প্রশ্নে এমনই দাবি করেছেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি স্বীকার করেছেন যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নজরদারি করার মতো কর্মী কর্পোরেশনের নেই।
ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের ওয়ার্ডে ৪ বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
চিকিৎসরা নিশ্চিত করেছিলেন যে ওই শিশুকন্যার রক্ত পরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ এসেছিল।
কলকাতা কর্পোরেশনের বাম পরিষদীয় নেতা মধুছন্দা দেব বলেন, "এই মরশুমে গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার প্রভাব দেখা যায়। এর জন্য দরকার বিশেষ নজরদারি। শুধুমাত্র প্রচার করে সচেতনতা তৈরি করলেই ডেঙ্গু ঠেকানো যাবে না। সচেতনতা প্রচারের সঙ্গে প্রয়োজন নজরদারি। যে সময়ে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রভাব বেশি দেখা যায়, সেই সময়, অন্তত ভলেন্টিয়ার হিসেবে কিছু কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।’’
জানা গিয়েছে, গত ২০ অক্টোবর থেকে জ্বরে আক্রান্ত ছিল ওই শিশুকন্যা। বেলেঘাটায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পরে তার মৃত্যু হয়।
জানা গিয়েছে কলকাতার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল ওই শিশুকন্যা। এই ১১ নম্বর ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর অতীন ঘোষ। যিনি আবার কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ।
শুক্রবার টক-টু-মেয়র অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে ফিরাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হয় কলকাতায় চার বছরের ওই শিশু কন্যার মৃত্যু নিয়েই। হাকিম বলেন, "সচেতনতা তৈরির মধ্যে দিয়েই ডেঙ্গুর প্রভাবকে কমাতে হবে। যেদিন আমরা সবাই একশো শতাংশ সচেতন হয়ে যাব তারপর থেকে আর ডেঙ্গু হবে না। আমাদের অত কর্মী নেই যে প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে নজরদারি করবেন। তাই সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে ডেঙ্গু ১০০ শতাংশ ঠেকানো সম্ভব।"
কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে যে ২৬ অক্টোবর অবধি মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০১৭ জন। তার আগের সপ্তাহে এই সংখ্যাটা ছিল ৯৩২ জন। আক্রান্ত ৮৫ জন বেড়েছে এক সপ্তাহে। ২০২৪ সালে ঠিক এই সময়ের পরিসংখ্যান ছিল ৭৯১ জন। ২০২৩ সালে এই সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১ হাজার ৪৪১ জন।
যদিও কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা মনে করছেন গত দু’বছরের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি একই আছে। তাই উদ্বেগের কারণ নেই।
মধুছন্দা দেব বলেছেন, ‘‘কলকাতা কর্পোরেশনের যারা হেল্থ ফিল্ড ওয়ার্কার রয়েছেন তাঁদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।’’
মধুছন্দা দেব আরও বলেন, "আগে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মশা তাড়ানোর জন্য ধোঁয়া দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পরিবেশ বিধির কারণে এখন তা হয় না। কর্পোরেশন থেকে প্রতি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়িতে এক বিশেষ ধরনের তেল স্প্রে করা হয়। কিন্তু সেই তেল কতটা কার্যকর তা-ও দেখা প্রয়োজন।"
তাঁর ক্ষোভ, কলকাতা পৌরসভার সব ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমানভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই। অনেক ওয়ার্ডে রক্ত সংগ্রহ করার মতো কর্মীও পাওয়া যায় না।
Comments :0