Tea Garden

পুজোর মুখে বন্ধ চা বাগান

রাজ্য জেলা

Tea Garden


উৎসবের আনন্দে যখন মেতে গোটা রাজ্য। ঠিক তখনই বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের সাইলী চা বাগান। শুক্রবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে বাগানের গেটে লকআউটের বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান। জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের এ বার ১৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাগান কতৃপক্ষের পক্ষে ১৫ শতাংশ বোনাস দেওয়া সম্ভভ নয়। এই অবস্থায় বাগানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কাতেই বৃহস্পতিবার রাতেই বাগান ছেড়ে চলে যান বাগানের সঞ্চালকরা। শুক্রবার সকাল থেকে ডুয়ার্সের সাইলী ও নয়া সাইলী চা বাগানে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। ফের কর্মহীন হয়ে পড়লেন প্রায় ২৩০০ শ্রমিক। এই দুই বাগানের শ্রমিকরা শুক্রবার সকালে কাজে যোগ দিতে যেয়ে দেখেন বাগানের গেটে তালা। হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। হঠাৎ করে বাগানে  কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল শ্রমিকরা।
কলকাতায় বোনাস মিটিংয়ে বোনাস ফয়সালার ক্ষেত্রে কিছু চা বাগানকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল যে তারা নিজেরা দ্বিপাক্ষিক সভা করে বোনাস ফয়সালা করবে। সেইমত বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ী আইটিপিএ হলে সভা করেও কোন ফয়সালা হয়নি। 
এদিকে নাগ্রাকাটা ব্লকের নয়া সাইলী চা বাগানে ১২ অক্টোরব রাত ১২ টা থেকে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক ঘোষণা করে বাগান নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ১৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা কতৃপক্ষ দিত অক্ষম। নিরাপত্তার কারণে ম্যানেজিরিয়াল কর্মী প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। 


পুজার আগে প্রতিবার বোনাস ফয়সালা হওয়ার পর সাইলী বাগানে বোনাস নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। তৈরি হয় অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। যা ঠিক  হয় ম্যনেজমেন্ট বাগানে এসে তা দিতে টালবাহনা করে।
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা রামলাল মুর্মু  বাগান ছেড়ে মালিকদের চলে যাওয়াকে তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, বিরোধ থাকতেই পারে। শ্রমিকদের কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যাওয়া ঠিক না। বাগান চালু অবস্থায় বিরোধ নিয়ে পরস্পর আলোচনা করে মীমাংসা করা যেত। শ্রমিকের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাকে দুর্দশার মধ্যে ফেলা উচিত হয় নি। পুজোর আগে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতেই মালিকপক্ষের এই চক্রান্ত বলে জানান তিনি। তিনি আশা করেন প্রশাসন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে। দ্রুত আলোচনা করে মীমাংসা করা দরকার।
মালবাজারের সহকারি শ্রম কমিশনার প্রনব দাস বলেন,  খুব তাড়াতাড়ি দুই বাগানকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক সভা ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।
বোনাসের দাবিতে সরব হয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকরা। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে ১০ শতাংশ হারে বোনাসের সিদ্ধান্ত হলেও এদিন ভোরেই ‘সাসপেন্স অফ ওয়ার্ক’ নোটিশ ঝুলিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায় মালিকপক্ষ। এদিন ভোরে বাগান ম্যানেজার ‘সাসপেন্স অফ ওয়ার্ক’ নোটিশ ঝুলিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে চলে যান। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল মাদারিহাটের মুজনাই চা বাগানের প্রায় এক হাজার কর্মচারীর ভবিষ্যৎ।


মালিকপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের কারণে পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকদের বোনাস সমস্যার সমাধানে আহুত তৃতীয় বারের বৈঠকও ভেস্তে গেলো। শারদ উৎসবের হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি। কিন্তু পাহাড়ের সব বাগানের চা শ্রমিকদের বোনাস সমস্যার এখনও নিস্পত্তি হলো না। এখনও পাহাড়ের শ্রমিকেরা তাদের উৎসবকালীন বোনাস হাতে পাচ্ছেন না। ফলে সমগ্র পাহাড়ের শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। মালিকদের শ্রমিক বিরোধী অবস্থান ও বোনাস নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করার প্রয়াস প্রথম বৈঠকেই একরকম পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ও ২৭সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বৈঠকে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা চললেও দুটি বৈঠকই নিষ্ফলা হয়। চা শ্রমিক ও চা শিল্প বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে পাহাড়ের চা বাগান মালিকপক্ষ। যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
পাহাড়ে চা বাগান মালিকপক্ষের অনমনীয় মনোভাবে বাগিচা শ্রমিকেরা এসদিন ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চা শ্রমিকেরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের ৮৭টি চা বাগানের শ্রমিকদেরই ২০ শতাংশ হারে এক কিস্তিতে বোনাসের টাকা দিতে হবে। একসাথে প্রতিটি বাগানের শ্রমিকেরা তাদের বোনাস নেবেন। তারা তাদের এই দাবি থেকে কিছুতেই সরবেন না।


বাগিচা শ্রমিকদের প্রতি এতোটা অসম্মানজনক বোনাস ঘোষণা প্রসঙ্গে এদিন সমন পাঠক বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক। পুজোর মরশুমে প্রতিবারই বোনাস নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চলে। বোনাস নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করার প্রয়াস এবছরও শুরু থেকেই লক্ষ করা গিয়েছিলো। উৎসবকালীন বোনাস শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা। অনেক উন্নতমানের চা প্রস্তুত করে থাকে পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকেরা। কিন্তু পাহাড়ে প্রতিবছর পূজো বোনাস নিয়ে এই টালবাহানা করে মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষের এই খামখেয়ালিপনায় সরকারের ভূমিকাও নেতিবাচক। শ্রমিকরা যথেষ্ট অসন্তুষ্ট। গত তিনবছর ধরে বোনাস নিয়ে গরিমসি করা হচ্ছে। তিনবার শ্রমিকেরা সুযোগ দিয়েছিলো। তবে আর কোন আলোচনা নয়। মালিকপক্ষের উচিৎ শ্রমিক বঞ্চনার অনড় মনোভাব থেকে সরে আসা। তা না হলে আগামী দিনে পাহাড়ে বাগিচা শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যায্য আদায়ে রাস্তায় নেমে আসবে। অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে ২০ শতাংশ হারে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের হাতে পুজো বোনাস তুলে দেওয়া না হলে বাগানগুলিতে চা শ্রমিকেরা অঘোষিত বন্‌ধের পথে হাঁটবে। এরফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার দায় নিতে হবে বাগান মালিকপক্ষকে। তিনি জানান, শনিবার সমস্ত শ্রমিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে জরুরীভিত্তিতে বৈঠকে বসবে। সেই বৈঠক থেকে পাহাড়ের চা বলয়ের শ্রমিকদের স্বার্থে বোনাস মীমাংসায় পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারিত হবে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই করেই জবাব দেবেন শ্রমিকরা। মালিকের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

Comments :0

Login to leave a comment