স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার নাগরিকত্ব যাচাই করার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন অভিযান।
রাজ্যে বর্তমানে ৭ কোটি ৬৬ লক্ষের ওপর বৈধ ভোটার। গত লোকসভা নির্বাচনে এই ভোটার তালিকায় থাকা এই ভোটাররাই কেন্দ্রের সরকার নির্বাচনে ভোটদান করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে এই ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ভোটারকেই তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই করার পরীক্ষা নিতে চলেছে নির্বাচন কমিশন।
গোটা দেশে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সহ ১২টি রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে এসআইআর। ভোটারদের এনুমারেশন ফরম নিয়ে বাড়ি, বাড়ি পৌঁছে যাবেন বিএলও (বুথ লেবেল অফিসার)রা। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি হিসাবে বিএলএ (বুথ লেবেল এজেন্ট)। বাড়ি, বাড়ি এনুমারেশন ফরম নিয়ে যাওয়ার আগে এদিনই নির্বাচন কমিশনের এরাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল সব জেলার জেলাশাসক (ডিইও)দের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করেন।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এসআইআর’র ছায়া পড়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকেও। সোমবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে বেশ বড় সংখ্যায় ক্যাবিনেট মন্ত্রী গরহাজির ছিলেন। সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টা পার করে যেহেতু এসআইআর শুরু হচ্ছে, তাই জেলার মন্ত্রীদের নিজের এলাকায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এদিন সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান,‘‘ মন্ত্রীরা মন্ত্রীসভা বৈঠকে গরহাজির থাকলেও বৈঠকে কোরাম হয়েছে।’’ ফলে এসআইআর’র বিরোধিতা করে মঙ্গলবারই কলকাতায় মিছিল করবে তৃণমূল। রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন মমতা ব্যানার্জি। আবার তাঁর দলই এসআইআর’র প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীদের ক্যাবিনেট মিটিং’এ থাকতে নিষেধ করছেন। 
কমিশন সূত্রের খবর, এদিন সন্ধ্যার মধ্যে রাজ্যের সব বুথ এলাকার বিএলও’দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এনুমারেশন ফরম। আগামীকাল সকাল থেকে বিএলও’রা সেই ফরম নিয়ে পৌঁছে যাবেন নির্দিষ্ট বুথে। আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এনুমারেশন ফরম নিয়ে বাড়ি, বাড়ি যাওয়ার সঙ্গে ফরম পূরণ করে জমা নেওয়ার দিন আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে কমিশন।
রাজ্যের পঞ্চায়েত এলাকায় বিএলও’দের জন্য পাঠানো কমিশনের তরফ থেকে ছাপানো ফরম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তারপর সেই ফরম বুথ ভিত্তিতে বিএলও‘দের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ ব্লক অফিসে এনুমারেশন ফরম আসার পর বিএলও’দের সুবিধার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত বুথের বিএলও’দের হাতে তাঁর বুথের ফরম তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ শহরাঞ্চলে অবশ্য বিধানসভা ভিত্তিতে ইআরও(ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) অফিস থেকে বিএলও’রা এসে সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন তাঁর বুথের এনুমারেশন ফরম। 
এদিনই রাজ্যে বহু জেলাতেই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিএলএ’দের ট্রেনিং কর্মসূচি আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। বহু জায়গাতেই একেবারে শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে বিএলএ’দের প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছে ইতিমধ্যেই অভিযোগ সামনে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘ বিএলএ’দের ডাকা সভায় মূলত এসআইআর’এর উদ্দেশ্য, বিএলএ’দের করণীয় কাজ কী, তারসঙ্গে এনুমারেশন ফরম পূরণ করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ 
তবে কমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী হিসাবে বিএলও’দের কাছে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনোভাবেই বাড়ি, বাড়ি এনুমারেশন ফরম বিলির সময় বিএলএ’দের প্রভাব এড়িয়ে চলতে। ‘‘ কখন বাড়ি, বাড়ি গিয়ে ফরম বিলি করা হবে তা ঠিক করতে হবে বিএলও’দেরই। এক্ষেত্রে বুথের বিএলএ’র সময় নয়, বিএলও ঠিক করবেন ফরম বিলির সময়। একইভাবে বিএলও যখন বাড়ি, বাড়ি ফরম বিলি করবেন, তখন যেন কোনোভাবে বিএলএ যেন সেই ফরম বিলির ভিডিওগ্রাফি না করে। দরকার হলে সংশ্লিষ্ট বুথের ভোটার তাঁর প্রয়োজনে ভিডিও করলে আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যথায় কোনও ভিডিওগ্রাফি হলে তা থেকে বিএলও’দের এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আসলে রাজ্যে এসআইআর শুরুর আগেই থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি— এই দুই রাজনৈতিক দল গোটা প্রক্রিয়টাকে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনায় পৌঁছে দিয়েছেন। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন অভিযানকে সামনে রেখে বিজেপি তৎপর হয়েছে চরম সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিতে। আর রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল তৈরি করেছে আতঙ্ক। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস তার দলের বিএলএ’দের নির্দেশ দিয়েছে, বাড়ি, বাড়ি যাওয়ার সময় কার্যত বিএলও’দের নজরবন্দি করে রাখার। 
এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন বুথগুলিরও পুনর্বিন্যাস করা হবে। বিহারে বুথের সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজার ৮৯৫। কোনও বুথে ১২০০-র বেশি ভোটার থাকবে না, এই নীতি মেনে বিহারে বুথের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার ৭১২। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নতুন বিন্যাসে নতুন বুথের সংখ্যা হবে ৯৪ হাজার ৪৯৭। এসআইআর’র প্রশ্নে ১৩টি নথি বিএলও’র কাছে প্রমাণ স্বরূপ দাখিল করতে পারবেন ভোটাররা। এরমধ্যে বিহারের এসআইআর’র পর যে ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেটাকেও একটি নথি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে কমিশন। আধার কার্ড পরিচয়পত্রের একটি প্রমাণ হিসাবে মান্যতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে আধার কার্ডের সঙ্গে বাকি ১২টি নথির মধ্যে একটি দাখিল করতে হবে। 
 
SIR
আজ শুরু এসআইআর, বাড়ি, বাড়ি যাবেন বিএলও-রা
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0