Sujan Chakrabarty on Voter List

যাদবপুরেই ভোটার তালিকায় ব্যাপক গরমিল, দেখাচ্ছে সিপিআই(এম)’র স্ক্রুটিনি

রাজ্য কলকাতা

শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুজন চক্রবর্তী ভোটার তালিকায় গরমিল তুলে ধরছেন।

নাগরিকত্ব নির্ধারণ নয় বরং স্বচ্ছ নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করুক নির্বাচন কমিশন। যাদবপুরের বিকেশ গুহ ভবনের সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে একথা বললেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। 
চক্রবর্তী বলেছেন, তৃণমূল চায় ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম থাকুক। তাতে ভোট লুটে সুবিধা হবে। অন্যদিকে বিজেপি বৈধ ভোটারকে ‘ডি-ভোটার’ করতে চাইছে।
রাজ্যে এসআইআর’র প্রস্তুতির পর্বে ভোটার তালিকা খুঁটিয়ে দেখার কাজও সাংগঠনিক ভাবে চালাচ্ছে সিপিআই(এম)। এদিন চক্রবর্তী যাদবপুর এবং সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভায় এই ‘স্ক্রুটিনি’-তে উঠে আসা তথ্য ব্যাখ্যা করে গরমিলের নমুনা হাজির করেন। 
সিপিআই(এম)’র স্ক্রুটিনি দেখাচ্ছে যে কেবল যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৩৪৭টি বুথের প্রতিটিতে গড়ে কমবেশি ৫০ জন মৃত মানুষের নাম আছে। চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তাহলে ৩৪৭ বুথে সংখ্যা অন্তত ১৭,৩৫০। এর বাইরে স্থানান্তরিত ভোটার আছে। অচেনা এমন ভুতুড়ে ভোটার আছে। এই দুই মিলিয়ে বুথ পিছু সংখ্যাটা ৪০/৫০/৬০ বা কোথাও আরও বেশি। অর্থাৎ যাদবপুরে অন্তত হাজার বিশেক। শাসকদল নানা কৌশলে এবং ভয় দেখিয়ে এই ভোটের একটা বড় অংশের ভোট অবৈধভাবে ভোট বাক্সে ফেলে।’’ 
তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সিপিআই (এম)-এর পক্ষ থেকে বারবার একটি স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখা হলেও তাতে বিশেষ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অথচ এই অত্যাবশ্যক কাজটি না করে, মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে, এসআইআর’র এর জুজু দেখানো শুরু হয়েছে।’’ 
যাদবপুরের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের নথি দিয়েছেন তিনি। ওই ওয়ার্ডের ১৪৫ নম্বর পার্টে মোট ভোটার ৯০৭। মৃত ৪২, চলে গিয়েছেন অন্যত্র ১৯৫। ১৫৩ পার্টের মোট ভোটার ৯৯৪, মৃত ৯০, অন্যত্র চলে গিয়েছে ২৫। ১৪৭ পার্টের মোট ভোটার ১৩১৪, মৃত ৭৯,  অন্যত্র চলে গিয়েছে ১৫৪। এই একটাও নাম বাদ যায়নি বলে জানিয়েছেন চক্রবর্তী। 
তিনি জানান, যাদবপুর বিধানসভার ১৬৫ নম্বর বুথ। মোট ভোটার ৭০৮, ৫৬ জন মৃত ভোটার। চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তালিকা তৈরি করে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা করি তাদের ডেথ সার্টিফিকেট ও মৃত্যুর নথিভুক্তিকরণ নম্বর সহ, ৫৬টি নামই তালিকা থেকে বাদ যায়। কিন্তু ১৫২ নম্বর বুথে ৮৩০ জন ভোটারের মধ্যে, একইরকমভাবে সমস্ত নথি সহ ৬৫ জন মৃত ভোটারের নাম জমা করা সত্ত্বেও ৪৮ জনের নাম বাদ যায়, ১৭ জনের নাম এখনো তালিকায় রয়ে গেছে। আবার ১০৮ নম্বর বুথে মোট ৮০০ ভোটারের মধ্যে ৪৩ জন মৃত ভোটারের নাম সমস্ত নথি সহ জমা দিলেও একজনের নামও বাদ যায়নি।’’
চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আশ্চর্যের বিষয় হল, এ' বছর মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই বিয়োজনের কাজ মোটামুটিভাবে চললেও জুলাই, ২০২৫ থেকে, নথিপত্র জমা করা সত্ত্বেও, কোন এক অজ্ঞাত কারণে এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, এ বছরের ৭ আগষ্ট থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাইট এ নাম বিয়োজনের আবেদনপত্র (৭ নম্বর ফর্ম) জমা নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আলিপুরে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কার্যালয়ে সিইও অফিসের সিস্টেম ম্যানেজারকে বিষয়টি ওয়াকিবহাল করার পর এবং দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন দপ্তরে বারেবারে যোগাযোগ করার পর, অবশেষে বেশ কিছু দিন বাদে, উক্ত পদ্ধতি আবার চালু হয়। কিন্তু সঙ্গে এমন কিছু উপনিয়ম যুক্ত করা হয় যা কেবলমাত্র এই কাজকে বিলম্বিতই করবে।’’ 


সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভার কয়েকটি বুথের স্যাম্পেলও একই গরমিল। ২৫৭ নম্বর বুথে ১০৯৪ মোট ভোটারের মধ্যে মৃত ৯৯, স্থানান্তরিত এবং ভুতুড়ে ৭২। ২৪৬ নম্বর বুথে ১১৮২ মোট ভোটারের মধ্যে মৃত ৭৪, স্থানান্তরিত এবং ভুতুড়ে ১২। ২১১ নম্বর বুথে ১২৮০ ভোটারের মধ্যে মৃত ৬০। স্থানান্তরিত এবং ভুতুড়ে ২৮। ২৪৫ নং বুথে ভোটার ১৪৩১, মৃত ৩২, স্থানান্তরিত এবং ভুতুড়ে ৭০ জন। এসব ক্ষেত্রে একটি নামও বাদ যায়নি। ২৫৮ নং বুথে যেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৪৫, সেখানে এখনো পর্যন্ত ৪১জন মৃত ভোটারের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং ৩৮৩ জন এমন ভোটার আছেন যাদের বাসস্থানের পাশে হয় পূর্ণচ্ছেদ বা অধিক সংখ্যায় শূন্য পাওয়া গেছে। 
তিনি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম)’র দাবি, এই ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। ভয় ছড়ানো বা প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া চলবে না।’’ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা কানাই দেব, সুব্রত দাশগুপ্ত সহ নেতৃবৃন্দ।

Comments :0

Login to leave a comment