Editorial

আপাতত অশ্বডিম্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ

বহু প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কার্যত বর্ষণহীন অতি গর্জনে এসে ইতি টেনেছে। সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই বৈঠকের আয়োজন হলেও শান্তি চুক্তি তো দূরের কথা আপাতত যুদ্ধ বিরতির কোনও সিদ্ধান্তও করা যায়নি। ২০০৭ সালে পুতিনের আনুষ্ঠানিক আমেরিকা সফরের পর আলাস্কায় এটাই ছিল তাঁর প্রথম আমেরিকা সফর। পুতিনকে রাজকীয় আদর আপ্যায়নে কোনও ঘাটতি রাখেননি ট্রাম্প। লাল কার্পেটে দু’জনের করমর্দনের সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান বি টু চক্কর খেয়েছে তাঁদের মাথার উপর। পাশে দাঁড়িয়েছিল এফ-১৬ সহ আরও ৫টি অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান। উষ্ণ অভ্যর্থনার পর দু’জনের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর কোনও বিবৃতি হয়নি বা একসঙ্গে দু’জনে সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। পুতিন জানিয়েছেন বোঝাপড়া হয়েছে। পরের বৈঠক হবে মস্কোয়। ট্রাম্পও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
তবে দু’জনের কথা থেকে এটুকু বোঝা যাচ্ছে ট্রাম্প যেভাবে চেয়েছেন পুতিন তাতে সায় দেননি। পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে কারণে ইউক্রেনে রুশ সেনারা যেতে বাধ্য হয়েছে সেই কারণের মীমাংসা না হলে শান্তি চুক্তি সম্ভব নয়। অর্থাৎ ইউক্রেন চিরতরে ন্যাটো সদস্য হওয়ার প্রত্যাশা ত্যাগ করতে হবে। ইউক্রেন ন্যাটো সদস্য হওয়ার অর্থ মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমী সামরিক জোট রাশিয়ার সদর দরজায় টোকা মারা। রাশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্নে সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেই নিরাপত্তার প্রশ্নেই রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের ভূখণ্ড রাফার জোন হিসাবে রাশিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। নিছক কোনও যুদ্ধ বিরতির ফাঁদে রাশিয়া পা দিতে চায় না। যুদ্ধ বিরতির সুযোগ নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়া ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য করার চেষ্টা করতে পারে।
পুতিনের এই অবস্থান ট্রাম্প একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে মনে হয় না। বৈঠক শেষে ট্রাম্প ইউক্রেন রাষ্ট্রপতি জোলনেস্কি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের জেলেনেস্কি ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে। ট্রাম্প শীঘ্রই ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। অনুমান করা যায় পুতিনের দাবি কতটা মানা যায় সেটা নিয়ে কথা চলবে। তার পরই যুদ্ধ বন্ধ বা শান্তি চুক্তির সময় আসবে। তবে পুতিন যে আমেরিকা ইউরোপের চাপের কাছে মাথা নোয়াতে রাজি নন সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ভারতের উপর ট্রাম্পের শুল্কের যে খাঁড়া ঝুলছে তার ঝুঁকি থেকেই গেছে। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনে বলে ভারতের পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে চালু হবার কথা। যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে সেই হুমকি আর থাকত না। ফলে ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে। এদিকে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি শেষ পর্বের যে আলোচনা এমাসের শেষে হবার কথা সেটা হচ্ছে না। কবে হবে সেটাও অজানা। মোদী সরকার বন্ধু ট্রাম্পের কল্যাণে মহা ফাঁপরে পড়ে গেছে। রাশিয়ার তেল ভারতের থেকে বেশি কেনে চীন। অথচ চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কোনও জরিমানা নেই। ট্রাম্পের একতরফা শুল্কের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে পালটা পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। তাই ট্রাম্প ১৪৪ শতাংশ থেকে শুল্ক ৩০ শতাংশে নামাতে বাধ্য হয়েছে। তেমনি চীন মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির জন্য ১০ দিন সময় সম্প্রসারিত করেছে। কিন্তু ভারতকে রেখেছে কড়া চাপে। মোদী নীরবে ট্রাম্পের যথেচ্ছাচার হজম করে চলেছেন। ৫৬ ইঞ্চির বিশ্ব গুরুর এমন হাল সত্যিই দুর্ভাগ্যের।

Comments :0

Login to leave a comment