Chopra

চোপড়ায় বিরোধীদের মিছিলে তৃণমূলের গুলি, জখম ১০

রাজ্য

চোপড়ায় তৃণমূলের বিধায়কের পাড়ায় তাঁর দলীয় বাহিনী সিপিআই(এম) কর্মী, কংগ্রেস-বামফ্রন্টের প্রার্থীদের গুলি করে খুনের চেষ্টা করল। যথেচ্ছ গুলি চালালো তৃণমূলীরা। বোমা ছুঁড়ল। বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় এই হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০জন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬জন। তাঁদের মধ্যে ২যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসাধীনদের ২জন মহিলা। 
নৃশংস বন্দুকবাজদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি ডায়মন্ডহারবারে এদিন নির্দ্বিধায় বলেছেন,‘‘চোপড়া আর ইসলামপুরে যে সমস্যাটা হয়েছে তাতে দল কোনওভাবেই যুক্ত নয়।’’ অর্থাৎ চোপড়ায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিরোধীদের খুন করার চক্রান্ত তৃণমূলের কাজ নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ময়নাতদন্ত হলো,‘‘যাঁরা এই কাজ করেছে, তাদের আমরা টিকিট দিইনি। তারা গতকাল পর্যন্ত টিকিট চেয়েছে।’’ অর্থাৎ যারা হামলা চালিয়েছে তারা তৃণমূলেরই লোক। 
যারা হামলা চালিয়েছে তারা চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের বাহিনী, আক্রান্ত এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের তাই অভিযোগ। হামিদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এদিন সন্ধ্যায় তিনি বলেন,‘‘দূর! ওরাই ওদের মেরেছে। এর মধ্যে তৃণমূলের কোনও যোগাযোগ নেই। আপনারা জানেন, সিপিএম গত দুদিন ধরে লালবাজারে যেতে দিচ্ছে না আমাদের ছেলেদের? লালবাজার বলে আমাদের এখানে একটা জায়গা আছে।’’ অর্থাৎ তাঁর দাবি অনুসারে কাঁঠালবাড়িতে, বেছে বেছে হামিদুলের বাড়ির কাছেই সিপিআই(এম) কর্মীরা সিপিআই(এম) কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে! তবে এরপরই যাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও আছে, সেই তৃণমূলের বিধায়ক বলেন, ‘‘আর শুনুন, ওদের মিছিলে যদি ২ হাজার লোক থাকে, লাঠিসোঁটা নিয়ে থাকে, তাহলে আমাদেরও তো ৪ হাজার রেডি রাখতে হবে। ঘটনাটি আমার বাড়ির দেড় কিমির মধ্যে হয়েছে এটি ঠিক।’’
সিপিআই(এম) কর্মীরা তবে সিপিআই(এম)-কে মারেনি। ‘রেডি রাখা’ তৃণমূলীরাই গুলি ছুঁড়েছে, বোমা মেরেছে। এবং হামিদুল রহমান সেই ‘রেডি রাখা’র কথা জানতেন।
ঘটনাটি ঘটেছে চোপড়ার চুতিয়াখোড় পঞ্চায়েতের কাঁঠালবাড়িতে। বিধায়ক হামিদুল ইসলামের বাড়ি ওই গ্রামেই। এদিন সকালে দাসপাড়া থেকে হেঁটে সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের প্রার্থী, কর্মী, সমর্থকরা চোপড়ার বিডিও অফিসের মনোনয়ন জমার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় ৫৫০জন ছিলেন মিছিলে। মিছিলটি দীঘাবানার কাঁঠালবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে অতর্কিতে ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল ওই নিরস্ত্র মিছিলে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। বোমাও ছোঁড়ে দুর্বৃত্তরা। গুলিবিদ্ধ হন সিপিআই(এম)’র সেখ ফারুক, মনসুর আলি, নাইমুল হক, তহিরুল ইসলাম এবং মহম্মদ মুস্তাফা। কংগ্রেসের তাহেরুল ইসলাম, মোমেনা খাতুন, মর্জিনা খাতুন ও মোহাম্মদ বাবুল জখম হন। আহতরা সেখানেই পড়ে থাকেন দীর্ঘক্ষণ। সঙ্গীরা পুলিশকে ফোন করলেও প্রায় এক ঘণ্টা পরে পুলিশ সেখানে হাজির হয়। যদিও তার আগেই সঙ্গীরা, গ্রামবাসীরা যে যেমন পেরেছেন রক্তাক্ত, আহতদের ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।
নন্দিগছ গ্রামের মনসুর আলির (২৯) আঘাত গুরুতর। গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। নাইমুল হকের পায়ে গুলি ঢুকেছে। ইসলামপুর হাসপাতাল থেকে নাইমুলকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মনসুর আলিকে তাঁর শিলিগুড়িতে থাকা আত্মীয়রা সেখানকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন পার্টির জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার। বাকি পাঁচজন — মোমেনা খাতুন, মর্জিনা খাতুন, তহিরুল ইসলাম, মহম্মদ মুস্তাফা এবং সেখ ফারুক ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি। কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেন চিকিৎসকরা। 
মঙ্গলবারও চোপড়ায় হামলা হয়েছিল। তিনটি গাড়িতে বিডিও অফিসে যাওয়ার সময় পার্টিনেতা বিদ্যুৎ তরফদার, আনসারারুল হক, লতিফুর রহমান, বাবুল হক, কংগ্রেস নেতা অশোক রায়কে বিডিও অফিসের থেকে এক কিমি আগে হাতিঘিসায় তৃণমূলীরা অপহরণ করে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন রাতে দাসপাড়া, লালবাজার এলাকায় শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধ। চলে পথ অবরোধ। অনেক মানুষ প্রতিরোধে শামিল হন। সেই দাসপাড়া থেকেই এদিন মিছিল শুরু করেছিলেন সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের কর্মী, প্রার্থীরা।
এদিন খবর পেয়েই ইসলামপুর হাসপাতালে চলে আসেন সিপিআই(এম)-র উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক, পার্টিনেতা সুপ্রীতি ঘোষ মজুমদার, স্বপন গুহ নিয়োগী, সুরভি মুন্ডা, আব্দুল করিম, রঘুপতি মুখার্জি প্রমুখ। তাঁরা রোগীদের চিকিৎসার তদারকি করেন। আনোয়ারুল হক বলেন, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কেউ যাতে মনোনয়ন জমা করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে, পুলিশি মদতে বিধায়কের বাড়ির সামনে নিরীহ মানুষের উপর গুলি  ও বোমা ছোঁড়া হলো। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এদিনই ইসলামপুর থানার সামনে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান পার্টির নেতা, কর্মীরা। সেখানে বক্তব্য রাখেন স্বপন গুহ নিয়োগী, কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সাদিকুল ইসলাম এবং আনোয়ারুল হক। পুলিশ সেই অবরোধ জোর করে তোলার চেষ্টা করে আইসি সন্দীপ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে। প্রায় আধ ঘণ্টা হয় অবরোধ। এই অবরোধের ঘটনায় পুলিশ ৩জনকে আটক করেছে।

Comments :0

Login to leave a comment