Kalighat Chalo

কেন 'কালীঘাট চলো'

রাজ্য বিশেষ বিভাগ

ডাঃ বিষাণ বসু

তার পর অনেক দিন কেটে গেছে। গঙ্গা-তিস্তা-রূপনারায়ণ দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগবো-লাগবো পরিস্থিতি হতে হতেও হয়নি। সেই না হওয়া যুদ্ধে নৈতিক জয় কার, সে নিয়ে তর্কও হতে হতে পুরানো হয়ে গেছে। গাজায় গণহত্যা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, তা কারোরই ঠিক করে মনে নেই। তবে মরার মতো কিছু শিশু কিংবা মহিলা যেহেতু এখনও বেঁচে রয়েছে, তাই গণহত্যা চলছে। এদিকে দেশের শাসকদলের হাতে যে কয়েকটি রাজ্য চালানোর ভার রয়েছে, তার সবক'টিতেই বাঙালি তাড়ানোর অভিযান চালু হয়েছে। বাঙালি মানেই সম্ভাব্য অনুপ্রবেশকারী। বাংলায় কথা বলা মানেই সম্ভাব্য বাংলাদেশী। অতএব, সাবধানের মার নেই। বাঙালি দেখলেই প্রশ্ন করো। জানতে চাও, কাগজ রয়েছে তো? যে কাগজই দেখান, নিশ্চিত থাকুন, তাঁরা দেখতে চাইবেন তার বাইরে অন্য কোনও কাগজ। এদিকে স্কুল-শিক্ষকদের চাকরি গেছে— চাকরি ফেরত চাইবার লড়াই করতে করতে মনোবলও গেছে— শুরু থেকে পাশে কতজন ছিলেন জানি না, তবে সংখ্যাটা এখন হাতেগোনা। এসবের মধ্যে হইহই করে পালিত হয়েছে দুর্গোৎসব দীপাবলি বড়দিন ইংরেজি নিউ ইয়ার থেকে বাংলা নববর্ষ রথযাত্রা— মাননীয়ার আবদার মেনে বঙ্গবাসী উৎসবে ফিরেছে তো বটেই, একেবারে প্রমোদে ঢেলে দিয়েছে মন— ফুলেফেঁপে ওঠা উৎসবের লিস্টি মেনে পালিত হয়েছে অক্ষয়তৃতীয়া রামনবমী ইত্যাদিও— ওডিশা উজিয়ে এসে বঙ্গের মুখ্য আরাধ্যর আসন লাভ করেছেন জগন্নাথদেব— এককথায় কত কিছুই না ঘটে গেছে মাঝের এই বারো মাসে।

শুধু ফুটফুটে যে তরুণী চিকিৎসক অভয়া হয়ে গেল, সেই মেয়েটা আজও বিচার পেলো না!

বিচার পায়নি? বললেই হবে? ঘটনার পর মাত্র সাত-দশদিনের মধ্যে কলকাতা পুলিশ খপ করে অপরাধী ধরে ফেলল— আর তারপর দেশের সেরা গোয়েন্দাদের দল, খাস সিবিআই, সাতমাস ধরে সাতমণ তেল পুড়িয়ে জানালো যে হ্যাঁ, অপরাধী ওই সে-ই - টুকটাক তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে বটে (কেননা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে দু’-চারজনকে জেলটেল খাটতে হয়েছে, সে হোক গে) কিন্তু তদন্তে কিছু গাফিলতি হয়নি। এরপরেও বলবেন, বিচার হয়নি?

যথাযথ বিচার পাননি, এই মর্মে হতাশা প্রকাশ করায় স্বয়ং সিবিআই মরা মেয়ের মাকে অব্দি বকে দিয়েছে — আপনারা কি চান যে আমরা আপনাদের ইচ্ছে মেনে তদন্ত করি? ঠিকই তো। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা তদন্ত করবে কেন্দ্রের ইচ্ছে মেনে— আর কেন্দ্রের সরকারের সঙ্গে রাজ্যের সরকার তলায় তলায় হিসাবনিকেশ করে চললে, রাজ্যের ইচ্ছেই কেন্দ্রের ইচ্ছে— সুতরাং, খুবই স্বাভাবিক, সুশাসনের এই সুবর্ণযুগে, খুন-ধর্ষণের তদন্ত কখনোই ধর্ষিতা-নির্যাতিতার হতভাগ্য বাপমায়ের ইচ্ছে মেনে হতে পারে না।

আপনি কি বিস্মিত হচ্ছেন? হতাশ হচ্ছেন? কিংবা ক্রুদ্ধ? আহা, বড় দেরি করে ভাবতে বসেছেন মশাই! যে মুখ্যমন্ত্রীর শাসনকালের শুভসূচনা হয় গারদের ওপার থেকে অপরাধী ছাড়িয়ে আনা দিয়ে, তাঁর কাছ থেকে আইনের শাসন আশা করেছিলেন? অত্যন্ত সুপরিকল্পিত দুর্নীতির মাধ্যমে যিনি শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য অবধি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে সর্বনাশের অতলে ঠেলে দিলেন— সে সর্বনাশ এমনই গভীর, যে, আর্থ-সামাজিক শ্রেণির অঙ্কে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো শিক্ষা ব্যাপারটাকেই অপ্রাসঙ্গিক বাহুল্য ভেবে বসলেন (অথচ শিক্ষার সেই অধিকার তাঁরা অর্জন করেছিলেন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরেই) আর উঁচুকোঠার কিছু জ্ঞানীগুণী বিশ্বাস করাতে চাইলেন যে সাবঅলটার্নের উত্থান এভাবেই হয়— আপনি ভেবেছিলেন তিনি সাধারণ এক রাজনীতিক মাত্র? গেরামভারি অধ্যাপক থেকে জ্বালাময়ী কবিতা-লেখা কবি থেকে প্রতিভাবান শিল্পী— আর গাইয়ে-বাজিয়ে-অভিনেতা-ফিল্মডিরেক্টর তো আছেই। যিনি প্রমাণ করে ছাড়লেন যে ওসব প্রতিভা-কোয়ালিটি ইত্যাদি বিলকুল বাজে কথা, স্রেফ জায়গা বুঝে ভাত ছেটালেই খ্যামটা নাচার কাকের অভাব হয় না— আপনি বিশ্বাস করলেন যে তিনি ‘লেসার এভিল’? দোষটা তাহলে কার? আপনার চেতনাগত অপদার্থতার, নাকি সেই অপদার্থতাসঞ্জাত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যিনি ক্ষমতায় রয়েছেন তাঁর?

এমতাবস্থায়, এই পরিস্থিতিতে, যাঁদের সক্রিয় উদ্যোগে অপরাধ সঙ্ঘটিত হয়, যাঁদের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে অপরাধের প্রমাণ লোপাট হয়— আপনি সত্যিই আশা করেন যে তাঁদেরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রেখে অপরাধের সুবিচার পাবেন? বা পাওয়া সম্ভব?

একধরনের সুবিচার অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু সেরকম সুবিচার তো আপনারা পেয়েই গিয়েছেন, অথচ কিছুতেই যেন সন্তুষ্ট হতে পারছেন না! অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের দক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত হত্যাকারী-ধর্ষণকারী - সিবিআইয়ের সিলমোহরপ্রাপ্ত সেই দক্ষ তদন্ত— ঘটনার সপ্তাহখানেকের মাথায় অপরাধী হাতেগরম গ্রেপ্তার। তলিয়ে ভাবার ক্ষমতা যখন হারিয়েছেন, জীবনে মস্তিষ্কের ব্যবহার যখন বিস্মৃত হয়েছেন, তখন সেই ‘সুবিচার’ নিয়ে খুশি থাকুন, প্লিজ।

কথাগুলো তিক্ত শোনাচ্ছে? শোনাক গে। এছাড়া আর কী-ই বা বলার আছে? এত বড় খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেল কলকাতা শহরের ব্যস্ততম একটি হাসপাতালে— অবশ্য ঘটনাটা ঘটল এতই গোপনে যে স্বয়ং অপরাধী আর খুন হয়ে যাওয়া ডাক্তার মেয়েটি বাদে কেউই কিছু জানতে পারেনি। খুন-ধর্ষণের প্রসঙ্গক্রমে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কিছু দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল বটে, কিন্তু সেসব ঘটনা সামনে আসাটা স্রেফ বাইপ্রোডাক্ট— এরপর খুব বেশি কিছু বলার থাকে কি? বলব? তাহলে আজ আপাতত বাকি সব প্রসঙ্গ ছেড়ে স্বাস্থ্যের কথা-ই বলি।

সত্যি বলছি, ঘটনার পর আপনাদের এত বিস্মিত হওয়া মানায় না। কেননা, অভয়ার মৃত্যু কোনও আচমকা দুর্ঘটনা নয়। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালগুলো, মেডিক্যা ল কলেজগুলো, দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। উঠতে পেরেছে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের মদতে  এবং আপনাদের সক্রিয় নিষ্ক্রিয়তায়। আপনারা, অর্থাৎ যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পাঠককুল এই লেখা পড়ছেন, আপনারা সরকারি হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করেছেন আগেই। আপনারা জানেন যে আপনাদের জন্য রয়েছে শাইনিং হেলথকেয়ার-পাঁচতারা কর্পোরেট হাসপাতাল। অবশ্য সত্যিসত্যিই সেসব হাসপাতালে যেতে হলে বিল দেখে আপনাদের পিলে চমকে যায়। এবং মুখ্যমন্ত্রী সেসব হাসপাতালের অর্থগৃধ্নু মানসিকতা নিয়ে ধমকাধমকি করলে আপনি যারপরনাই প্রীত হন (হয়তো এমনও ভাবেন যে এতদিনে এমন একটা নেত্রী পেয়েছি যিনি মানুষের কথা ভাবেন)। শুধু এই প্রশ্ন কদাপি মনে জাগে না, যে, নিজের হাতে থাকা সরকারি হাসপাতালের উন্নতি না করে উনি বেসরকারিদের পেছনে পড়তে গেলেন কেন? সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভালো হলে বেসরকারি হাসপাতালে যাবার প্রবণতা আপনাআপনিই কমে যাবে— আর সত্যিই তা করা গেলে বেসরকারি হাসপাতালের বেপরোয়া বিল করার প্রবণতাও কমবে। তাহলে নিজের হাতে থাকা হাসপাতালগুলোর উন্নতি ঘটানোর মতো সহজ কাজটা মুখ্যমন্ত্রী করছেন না কেন?

চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে না গেলেও আপনি চান যে আপনার বাড়ির মেয়েটি বা ছেলেটি সরকারি মেডিক্যা ল কলেজেই পড়ুক। পড়ুক, কিন্তু কিছুতেই যেন সে পলিটিক্সে না জড়ায়। সত্যিই তো! পলিটিক্স মাত্রেই খুব খারাপ জিনিস। মুখ্যমন্ত্রীও আপনার মনের কথা বোঝেন। তিনিও বললেন, ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে যায় লেখাপড়া করতে, সেখানে আবার রাজনীতি দলাদলি, ইউনিয়ন ইলেকশন এসব থাকবে কেন? অতএব, কলেজে কলেজে আর দলাদলি নেই, নির্বাচিত ছাত্রসংসদ নেই— রয়েছে বিশুদ্ধ লুম্পেন ও হুলিগ্যানদের রাজত্ব। রাজনীতি নেই, সংগঠিত বিরোধিতা নেই—  সুতরাং দুষ্কৃতীদের অবাধ দাপাদাপি অনিবার্য (সংগঠিত বিরোধিতা নেই— আর সংগঠিত দুষ্কৃতীদের একক উদ্যোগে বিরোধিতা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট একক ব্যক্তির পরিণাম সহজেই অনুমেয়)। আপনি জানতেন না?

দুষ্কৃতী-শাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিক যেমনটি প্রত্যাশিত— ছাত্র ভর্তি থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফল— সর্বস্তরে অবাধ দাদাগিরি। এবং দুর্নীতি। মেডিক্যাতল কলেজ সেই অর্থে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। জেনারেল কলেজে অর্থোপার্জনের যতখানি সুযোগ, এখানে সেসব তো রয়েছেই— বাড়তি হিসাবে রয়েছে আস্ত একখানা হাসপাতাল এবং হাজারে হাজারে পেশেন্ট। সেরকম এলেমদার তৃণমূলী হলে ধুলোমুঠি সোনা করতে পারে— আর এ তো আস্ত একেকখানা মেডিক্যামল কলেজ! অসীম সম্ভাবনাময় সোনার খনি। এবং এব্যাপারে সন্দীপ ঘোষের ব্যতিক্রমী প্রতিভা ও উদ্ভাবনী মস্তিষ্কের কথা মাথায় রেখেও বলি, রাজ্যের শাসকদলে অনুরূপ প্রতিভার কোনও অভাব নেই। এই যেমন ধরুন, সন্দীপবাবু জেলে যাবার পরে কি মেডিক্যা ল কলেজগুলো বদলে গেছে? পাগলা দাশু অভিনীত সেই নাটকের চরিত্রের মতোই দুর্নীতি-তোলাবাজি-হুমকির অভিযোগে অভিযুক্ত কুশীলবরা, তৃণমূল-আশ্রিত ভিন্ন সংগঠনের নামে, আবার এসেছে ফিরিয়া। আরেকটা অভয়া ঠিক কবে ঘটবে নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, খাস কলকাতার ল’কলেজের ঘটনা থেকে আন্দাজ করা যায়, দিনটি খুব দূরে নয়।

তো যেকথা বলছিলাম, একেবারে মূক-বধির-অন্ধ না হলে, অভয়া-ঘটনার আগে অব্দি আপনি কিছুই জানতেন না, এমনটা বিশ্বাস করা যায় না।

শুধু সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বা মেডিক্যােল কলেজই বা কেন, সার্বিকভাবে ডাক্তারির দেখভালের দায়িত্বে থাকে মেডিক্যা্ল কাউন্সিল। ২০২২ সালে সেই মেডিক্যা ল কাউন্সিল নির্বাচনে যে সীমাহীন জালিয়াতি হয়েছিল, সে খবরও কি আপনি রাখেননি? যাবতীয় সংবাদমাধ্যমে সে জালিয়াতির (এবং আমাদের প্রতিবাদের) খবর প্রকাশিত হয়েছিল— সর্বাধিক বিক্রিত বাংলা সংবাদপত্রে সে নিয়ে সম্পাদকীয় অব্দি লেখা হয়েছিল— আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করাতে চান যে সেসবের কিছুই আপনি জানতেন না? হ্যাঁ, ওই নির্বাচনের জালিয়াতির পান্ডা ছিল যারা এবং সেই নির্বাচনে জিতে ডাক্তারির নৈতিকতা রক্ষার দায়ভার গ্রহণ করল যারা— অভয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ও হুমকি-সংস্কৃতির প্রসঙ্গে তাদেরই নাম বারবার সামনে এসেছে। ২০২২ সালে মেডিক্যাভল কাউন্সিল নির্বাচনের দুর্নীতি নিয়ে আপনি যদি একটু প্রতিবাদ করতেন - আরেকটু সক্রিয়ভাবে আমাদের প্রতিবাদে শামিল হতেন— কে বলতে পারে, তাহলে হয়ত চিকিৎসক-দুষ্কৃতীর দলটি একটু সাবধান হতো? হয়ত ২০২৪ সালে এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটতেই পারত না?

আপনি নিশ্চিত জানেন, তবু আরেকবার মনে করিয়ে দিই - ২০২২ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত সেই সদস্যরাই এখনও রাজ্য মেডিক্যা ল কাউন্সিল চালাচ্ছে - অভয়ার খুন-ধর্ষণের ঘটনা ও প্রমাণ-লোপাটে অভিযুক্ত যারা, তারাই চিকিৎসার নৈতিকতার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে— সেই দায়িত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢালাও ভয়-দেখানো ও তোলাবাজিও চলছে। অভয়া-ঘটনার পরেও পার পেয়ে যাবার কল্যাণে তাদের ঔদ্ধত্য এতখানিই বেড়েছে যে তারা আদালতেরও তোয়াক্কা করছে না, জালিয়াতির তদন্তের কাজে তারা বাধা সৃষ্টি করছে এই মর্মে খাস কলকাতা হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করার পরেও তারা এতটুকু বিচলিত হচ্ছে না।

অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। একটি অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়া পরবর্তী অন্যায়ের সাহস জোগায়। হয়তো অনুপ্রেরণাও জোগায়। মেডিক্যা ল কলেজ তথা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলাম— নইলে কথাগুলো এই রাজ্যের বাকি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিষয়ে প্রযোজ্য। এবং আপনি শাসকদলের পক্ষে রইলেন নাকি বিপক্ষে, তার উপর আপনার বা আপনার নিকটজনের নিরাপত্তা নির্ভর করে না। অভয়ার বাবা-মা তৃণমূল-বিরোধী ছিলেন বলে শুনিনি, অভয়াও সক্রিয় রাজনীতির মধ্যে ছিল না। ল’কলেজের ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা এবং মেয়েটি স্বয়ং, দু’জনেই সক্রিয়ভাবে তৃণমূল —তা সত্ত্বেও দলের এক ‘সহযোদ্ধা'-র লালসার হাত থেকে বাঁচেনি।

শাসকদলের এক সম্ভাবনাময়ী নেত্রী জানিয়েছেন যে তিনিও একপ্রকার যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। হয়েছিলেন দলীয় সহযোদ্ধার হাতেই। এই স্বীকারোক্তির পরিণতি হিসাবে সেই তরুণীই বিস্তর কটূক্তি শুনছেন, দলের মধ্যেই একঘরে হয়ে গিয়েছেন— হেনস্তাকারীরা বুক ফুলিয়ে বাঁচছেন। সুতরাং, তাঁরা কার বা কাদের পাশে থাকছেন, সে বিষয়ে শাসকপক্ষের অবস্থান খুবই স্পষ্ট।

এমতাবস্থায় আপনার অবস্থানটিও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। প্রতিবাদ না করা, মুখ বুজে সয়ে যাওয়া, এমনকি শাসকের পক্ষে থাকা— কোনোটিই নিরাপত্তার গ্যারান্টি নয়। অভয়ার সুবিচার পাওয়ার প্রশ্নটা আপনার-আমার সকলের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

কুলোকে বলে, এই রাজ্যে একটিই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট। সুশাসন ও সুবিচারের দাবিই বলুন কিংবা নিরাপত্তার দাবি—  সেই ‘পোস্ট’'-এর দ্বারস্থ হওয়া বাদে উপায়ই বা কী! সুতরাং অভয়ার ধর্ষণ-খুনের বিচারহীনতার বর্ষপূর্তিতে— কালীঘাট চলুন।

Comments :0

Login to leave a comment