মঙ্গলবার নির্বাচনী পর্ব মেটার পরে আগরতলা শহরে দশরথ দেব ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সিপাহিজলা জেলার পুলিশ সুপারের সাহায্যে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। ত্রিপুরার বিজেপি মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট লুটের নেতৃত্ব দিয়েছে। বক্সনগর এবং ধনপুরে সারা রাজ্য থেকে বাছাই দুষ্কৃতিদের নিয়ে এসেছিল বিজেপি। এবং সেই বাহিনীকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিপাহিজলা জেলার পুলিশ সুপার।
এদিন চৌধুরী দাবি জানান, এই নির্বাচন বাতিল করে ফের নির্বাচন করাতে হবে। এর পাশাপাশি বিকাশ দেববর্মাকে গ্রেপ্তার এবং সিপাহিজলার পুলিশ সুপারের বদলিরও দাবি জানান তিনি। এর পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধেও বিজেপির দলদাসে পরিণত হওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি।
এই নির্বাচনে দুই কেন্দ্রে বাম প্রার্থীদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কংগ্রেস। চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচন বাতিলের দাবি জানানোর আগে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরাও ভোট লুটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।
চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বিজেপির ভোট লুটের একাধিক ভিডিও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। সেই ভিডিওগুলি সিপিআই(এম) ত্রিপুরার ফেসবুক পেজেও আপলোড করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে দুই কেন্দ্রের একের পর এক বুথে অবাধে রিগিং চলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দেখা নেই।
জীতেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। উপনির্বাচনেও ৬০ শতাংশ মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। বিজেপি নির্বাচনের ফল নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছিল। তাই গোটা মন্ত্রীসভা এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনে জালিয়াতি করা হয়েছে। মন্ত্রীরা ক্যামেরার সামনে শাড়ি, টাকা সহ অন্যান্য উপঢৌকন বিলি করেছেন।
জীতেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, বক্সনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিজে সিপিআই(এম) নেতা আবু জাফরকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। বক্সনগর হাসপাতালে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হলেও সেই তথ্য হাসপাতালের মেডিক্যাল রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হয়। পরবর্তী কালে আগরতলা জিবি হাসপাতালে আবু জাফরের চিকিৎসা হয়।
সকাল ৭টা থেকে প্রতি বুথে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা হলেও কিছু জায়গায় ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ প্রতিরোধে নামেন। ধনপুর কেন্দ্রের শিলঘাঁটিতে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিদের ধরে ফেলেন গ্রামের মানুষ। বহিরাগত বাহিনীর একাধিক বাইক জনরোষে পুড়ে যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে জীতেন্দ্র চৌধুরীও সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের আপ্রাণ চেষ্টাকে কুর্ণিশ জানান।
Comments :0