গৌতম ঘোষ
১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে জলপাইগুড়ি জেলার ভয়াবহ বন্যার ফলে একটি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। অনেকের প্রাণহানি হয়েছিল। সেবারও একটানা প্রবল বৃষ্টিপাতে তিস্তা অববাহিকা এলাকা ছাপিয়ে জল জলপাইগুড়ি শহরে ঢুকে পড়েছিল। গত ৩ অক্টোবর টানা ১২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার অনেক অঞ্চল। বৃষ্টিপাতের বার্ষিক গড় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই বছর মোট বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত নয়। একদিনে এত পরিমাণ বৃষ্টি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। হঠাৎ একদিনে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলাতে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছিল।
প্রকৃতির নয়, এটি নীতির ব্যর্থতা
নির্মমভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের কারণে উত্তরবঙ্গ বন্যা এবং ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীগুলিতে অবাধে, অপরিকল্পিতভাবে বালি পাথর উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এমনকি জেসিবি, কবলার জাতীয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে নদী বক্ষে বেপরোয়া খনন কার্য চালানো হচ্ছে। এই অবাধ বালি পাথর পাচার চক্র প্রশাসনিক, সরকারের মদতে হচ্ছে। শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা এই কার্যকলাপে যুক্ত। রাস্তা সম্প্রসারণ, নতুন রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাচীন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রেলপথের টানেল তৈরির জন্য পাথর ফাটানোর কাজে ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। কোন নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করেই খরস্রোতা পাহাড়ি নদী গুলির ধারে হোম স্টে তৈরি করার ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একসময় পাহাড়ি রাস্তাগুলিতে ভারী যানবাহন চলাচলের উপরে বিধি নিষেধ ছিল,বর্তমানে সেই বিধি নিষেধ কিছুই মানা হচ্ছে না। পূর্ব হিমালয়ের এই অংশ এমনিতেই ভঙ্গুর, চাপ সহ্য করার ক্ষমতা খুবই কম।
গত ৪ অক্টোবর ভোরের আলো ফোটার আগে কুয়াশা ঘেরা মিরিক শহরে ধস নেমে আসে পাহাড়ের ঢাল ও চা বাগান গুলির উপর দিয়ে। গিলে খায় ঘরবাড়ি, রাস্তা, নদীর ধারে গড়ে ওঠা বসতি এবং হোম স্টে গুলিকে। দুধিয়ার লোহার সেতু যা শিলিগুড়িকে মিরিকের সাথে যুক্ত করার জীবন রেখা ভেঙে যায়। প্রবল বেগে দুই কুল ছাপিয়ে পাহাড়ি নদীগুলি ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় মৃতের সংখ্যা সরকারি রেকর্ড মোতাবেক ৪৪ জন, ছোট বড় ধসের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। পাহার ও গ্রামাঞ্চলের বহু রাস্তা বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা
সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা এবং রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ভারী বর্ষণ হয়ে থাকে। এবারের বিপর্যয়ের ১৩ দিন আগেই রাজ্য সরকারকে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি ডাইরেক্টর শৈবাল ঘোষ সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। পৃথিবীর উষ্ণতম সাগরগুলির মধ্যে অন্যতম বঙ্গোপসাগর। ইন্ডিয়া মেটারোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (অইএমডি)-র জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন সুস্থির বর্ষার বদলে এখন কম সময়ের মধ্যে তীব্র ও ভয়ঙ্কর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মানে আরও আকস্মিক বন্যা, আরও বেশি বিশৃঙ্খলা। আইএমডি এই পরিবর্তনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। উত্তরবঙ্গ জুড়ে হঠাৎ করে রেকর্ড পরিমাণ ভারী বৃষ্টিপাত হবে এই ইঙ্গিত আগের থেকেই ছিল। সরকার আগাম সতর্ক বার্তা দেয়নি। কলকাতায় সেপ্টেম্বরের যে বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় এক দশকের মধ্যে রেকর্ড। পূর্ব ভারত জুড়ে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা ২৪ দিন। ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি। ২০০০ সাল থেকে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। তথ্যের এই স্পষ্টতা থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের প্রস্তুতি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। পাহাড়ে প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। লোকজনকে সরানোর প্রোটোকল অস্পষ্ট। রাস্তা, সেতু রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কর্ম পরিকল্পনা বেশিরভাগই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। এটি দুর্বলভাবে অর্থায়ন করা, পুরানো এবং বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে বিভক্ত, যাদের মধ্যে সমন্বয় কম। আমাদের এখানে দুর্যোগ মোকাবিলা প্রতিরোধমূলক নয়, বরং এটি প্রতিক্রিয়াশীল। আমরা ট্র্যাজেডির জন্য অপেক্ষা করি, তারপর ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করি। বন্যার জল রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যার দরুন হাতি চিতাবাঘ হরিণ গন্ডার বাইসন জলের স্রোতে ভেসে যেতে দেখা গেছে। বড় বড় বহু গাছ ভেঙে পড়েছে যেখানে ধনেশ পাখি বাসা বাঁধে।
উন্নয়ন, কিন্তু কার জন্য
অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং পাথর উত্তোলনের কারণে হিমালয়ের ভঙ্গুর পাদদেশ ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে গেছে। সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা ছাড়া খাড়া ঢাল কেটে তৈরি করা রাস্তাগুলি দুর্যোগের চ্যানেলের মতো কাজ করে, জল এবং ধ্বংসাবশেষকে নিচে নামিয়ে দেয়।
পরিবেশবিদরা পাহাড়ি এলাকায় অপরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জল আটকানো মহাসড়কের সম্প্রসারণ, রেলের জন্য টানেল নির্মাণ এগুলোকে লাগাম দিতে সতর্ক করেছে। কিন্তু তাদের এই সতর্কতা খুব কমই আমলাতান্ত্রিক ফাইল ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রতিটি পরিবেশগত ক্ষতি বাইরে ছড়িয়ে পড়ে-বন্যপ্রাণী থেকে জীবিকা, জীববৈচিত্র থেকে খাদ্য সুরক্ষা পর্যন্ত। তবু এই ক্ষতিগুলি সরকারি প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে কম দৃশ্যমান। বিপর্যয় শুধু প্রকৃতির শক্তিকেই নয় অসাম্যের ফাটল গুলোকেই প্রকাশ করে। মিরিকের মেচী- দারা গাঁও বস্তি যেখানে ২০ থেকে ২৪টি বাড়ি যা ভূমি ধসে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখানে একই পরিবারের চার জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ছোট আরুষী(১২),ইষিকা (৭) দিদার বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। ভূমিধসে আরুষী ও তার তুতো বোন প্রয়াত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে কথা হয় আরুষীর মামি সুপর্ণা ছেত্রীর সাথে, ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। প্রায় ৫০ জন ভূমি ধসে সব হারিয়ে সৌরিনি বাজার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছে। এখানে লক্ষ্য করা যায় ১৭ জন শিশু কিশোর যারা বিভিন্ন ইস্কুলে পড়তো। দূর্যোগের রেশ তাদের চোখমুখ থেকে তখনো কাটেনি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের স্কুল বন্ধ। থরবু চা বাগানে নন্দলাল ক্যাম্পে দেখা যায় প্রায় ২৫ জন গভীর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। ধসে সর্বস্ব হারানো-রানু রাই, জাপন রাই এগিয়ে এসে জানায় তারা এবার নিয়ে তিনবার ভূমিধসে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। থরবু চা বাগানের অন্য একটি ক্যাম্প নয় মাইল এলাকায়। চিমোল ক্লাব কমিউনিটি হলে, এখানে ২০ জন অস্থায়ীভাবে আছে। যাদের মধ্যে ৪ জন চা শ্রমিক যথাক্রমে লাসুং তামাং, অঞ্জলী তামাং, চন্দ্রিনি খাওয়াস, বন্দনা খাওয়াস এরা প্রত্যেকেই থরবু চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক। ভূমি ধসে সর্বস্বান্ত হয়ে উৎকণ্ঠায় এরা দিন কাটাচ্ছে, কবে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবেন, কোনও নিশ্চয়তা নেই।
মানবিক বিপর্যয়ের ছবি
চিমোল ক্লাব সোসাইটি এখানে ১২২ জন সদস্য নিয়ে সমাজ সংগঠন। ক্যাম্পে আশ্রিত বিশজনকে দেখাশোনা, তাঁদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এই সংগঠন থেকেই করা হচ্ছে। সোসাইটির সদস্যরা দায়িত্ব ভাগ করে ডিউটি করছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এখানে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। প্রবীণ ক্লাব সদস্য পিএল যোশী,এমকে ইয়নজন জানালেন তাদের এই কমিউনিটি হলের জন্য প্রথম অর্থ বরাদ্দ করেন বামফ্রন্ট সরকারের অন্যতম মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং সমন পাঠক তার এম পি ল্যাডের থেকে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। ক্লাবের নাম 'চিমোল', কারণ বিভিন্ন স্থানে লালি গুরাস ফুল যখন ফুটে ওঠে পাহাড়ের রানি দার্জিলিঙ তখন তার সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটায়। এই লালিগুরাসের ৩৬ রকম ভ্যারাইটি আছে তার মধ্যে একটি ভ্যারাইটি চিমোল। তাদের এই সমাজ কমিটি এবং ক্লাব সোসাইটির সদস্যদের সুখ-দুঃখ হাসি কান্না ভাগ করে নেন। রিংটং চা বাগানের তিনটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে মেইন রাস্তা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উপরে একটি কমিউনিটি হলে। দার্জিলিঙের মেন রোড সোনাদা বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে এই চা বাগান। এতটা উতরাই অতিক্রম করে মেইন রাস্তায় গাড়ি রেখে প্রায় ৫০০ মিটার পাথরের ধাপে ধাপে চোর বাটো দিয়ে ওই ক্যাম্পে পৌঁছাতে হয়। ক্যাম্পে পৌঁছে দেখা গেল ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ওই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন বাগানের স্থায়ী শ্রমিক। চুকু সুব্বা, ইন্দ্রকলা সুব্বা, দেওচন্দ্রি সুব্বা এরা মাত্র ২৫০ টাকা মজুরিতে বাগানে কাজ করে। ভূমিধসে ঘরবাড়ি সহ সর্বস্বান্ত হয়ে গভীর উৎকণ্ঠায় তাঁরা। ২০০ মিটার উপর থেকে যেভাবে ভূমিধস হয়েছে এক লহময় সবকিছু শেষ হয়ে যেতে তারা দেখেছে। একজনের প্রাণহানিও ঘটেছে। ধস এসে শেষ হয়েছে আশ্রয় নেওয়া কমিউনিটি হলের কাছে। কমিউনিটি হলটিও বিপজ্জনক জায়গায় আছে। কথা প্রসঙ্গে যা শ্রমিকরা জানালেন বাগান কর্তৃপক্ষ ঠিকমত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ও জমা করেন না। এই বাগানটিতে প্রায় চার শতাধিক শ্রমিক কর্মরত আছেন। শুধু মজুরি ছাড়া কোনও সুযোগ সুবিধা শ্রমিকরা এখানে পান না। মহিলা শ্রমিকের সংখ্যাই প্রায় ৮০ ভাগ, পুরুষরা বাইরে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা চা বাগানের কাজে আগ্রহী নন।
এ বছরের বন্যায় জলপাইগুড়ি জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধুপগুড়ি ও নাগরাকাটা ব্লকের গ্রামীণ এলাকায় বহু ঘরবাড়ি বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে। জলঢাকা নদীতে লাশ ভেসে এসেছে, মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম করিয়েছেন। জলঢাকা নদীর জলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ আলতা, মাগুর মারি, বাগরিবাড়ি, নলডোবা, কুর্শামারি,বেতগারা একাধিক গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। চাষের জমি ভেসে গেছে বালির স্তূপে পরিণত হয়েছে। বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে গেছে গ্রামে। বন্যার জলে বহু গবাদি পশু ভেসে গেছে। নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙ্গা চা বাগান এবং তণ্ডু ডিভিসনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তন্ডু ডিভিসনের মডেল ভিলেজ যেখানে ৫৫৭ টি কোয়ার্টার বানিয়ে দিয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে বন্যার জলে পলি মাটি জমা হয়েছে ৩-৪ ফুট করে। বহু ঘরবাড়ি ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। চ্যাংমারি চা বাগানের বিভিন্ন শ্রমিক মহল্লা কালি খোলা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। এখানে রামা লাইন,বাসা লাইন, কপিলা লাইন, মানালাইন, প্রেমনগর লাইন ইত্যাদি জায়গাগুলি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। চুপাতাং নদীর জলে ব্রিজ ভেঙে গেছে। এর ফলে ভুটান সীমান্তের ক্যারন চা বাগানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। চা বাগান এলাকার বহু কালভার্ট ভেঙে গেছে, বহু অঙ্গনওয়াড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানারহাট এলাকার কারগিল পাড়া, হঠাৎ কলোনি এলাকাতে বন্যার জল ঢুকে গেছে। বাগান সংলগ্ন হাতি নালা দিয়ে জল ঢুকে পড়েছে নিউ ডুয়ার্স ও আম বাড়ি চা বাগান এলাকায়। এখানে ভুটান পাহাড় থেকে ডলোমাইট মিশ্রিত জল ঢুকে বাগানগুলি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দুর্যোগের রাত থেকেই উদ্ধারকার্য ও এাণ বণ্টনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা। ক্যাম্পগুলিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের মুখে আহার তুলে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি কিচেন চালু করা হয়েছে।
সমাধান: এখনই না হলে কখন?
ত্রাণ পুনর্গঠনের কাজে প্রথম দিন থেকেই দার্জিলিঙ জেলার পার্টির সম্পাদক সমন পাঠকের নেতৃত্বে জোর কদমে শুরু করেছে। পার্টি এবং ছাত্র, যুব, মহিলা নেতৃত্ব জেলার দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পরিকল্পিতভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজে নেমেছেন। এছাড়া ধস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন পার্টির নেতৃত্ব অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার সহ অন্য অন্য নেতৃত্ব। শিলিগুড়ি শহরের এরিয়া কমিটিগুলি এবং গ্রামাঞ্চলের এরিয়া কমিটিগুলি যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে ত্রাণ সংগ্রহ করেছে। ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সুরক্ষিত জায়গা সহ পুনর্বাসনের দাবিতে স্মারকপত্র দার্জিলিঙ জেলাশাসকের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে সমন পাঠকের নেতৃত্বে। বন্যা ধসে সঙ্কটাপন্ন মানুষদের পাশে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে সরকারকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। যখন উত্তরবঙ্গ ধস বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ সঙ্কটাপন্ন তখন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেছে দুর্গাপূজার কার্নিভালে ডান্ডিয়া নাচ করতে। বন্যা ধসে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে শিশু ও নারীরা সব থেকে বেশি সঙ্কটাপন্ন। বাস্তবচ্যুতি থেকে শুরু করে রোগ, মানসিক আঘাত সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত করে নারী ও শিশুদের। রাজ্য যদি সহনশীল পরিকাঠামো, প্রাথমিক সতর্ক ব্যবস্থা এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক অভিযোজনে বিনিয়োগ না করে তবে এই ধরনের বিপর্যয় বাড়তেই থাকবে। পরিবেশ রক্ষা,জলবায়ু, জল,জমি,জঙ্গল, বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে এটাই সময়ের দাবি।
Comments :0