আলো ঝলমলে উৎসবের মরশুম। ডায়না নদীর দুই তীরে কাশফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। কিন্তু এর উল্টো চিত্র নাগরাকাটার খেরকাটা, কলাবাড়ি ও আশপাশের গ্রামগুলিতে। সেখানে উৎসবের আনন্দ ঢোকার পথ খুঁজে পায় না। প্রতি মুহূর্তে সেই আনন্দকে গ্রাস করে নেয় শুধু চিতাবাঘের হামলায় সন্তানহারা মায়েদের বুকফাটা কান্না ও নিস্তব্ধতা। সদ্য ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি এখনও দগদগে। খেরকাটা গ্রামের প্রমীলা রায়, ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর বছর তেরোর ছেলে অস্মিত রায়কে চিতাবাঘ তুলে নিয়ে যায়। সেই দিনের পর থেকে যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন মা। চারপাশে উপস্থিত সবার বুকেই আঘাত হানে তাঁর আর্তি— ‘মা তুই তো এলি চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভরা কোলে। তবে আমার কোল শূন্য করলি কেন?’ চোখের জল মুছতে মুছতে প্রমীলা বলেন, “উঠোনটার দিকে তাকালে এখনও মনে হয় অস্মিত ‘মা’ বলে ডাকবে। শেষবার আমাকেই ডেকেছিল। কিছুই করতে পারিনি।” এই অসহনীয় যন্ত্রণায় এবারের দুর্গোৎসবে তিনি দুর্গা প্রতিমার মুখদর্শনও করেন নি। একই ঘটনার ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন গাঠিয়া চা বাগানের পূজা গোয়ালা। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর দশ বছরের মেয়ে সুশীলা চিতাবাঘের শিকার হয়। মেয়ের শোকে শ্রমিকের কাজ ছেড়েছেন। চোখে জল নিয়ে তাঁর খেদ, “মেয়েটার জন্য কিছুই করতে পারিনি। গত পুজোয় পুরোনো জামা পরেই ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। আজ সে নেই।” কলাবাড়ি চা বাগানের হুলাশ লাইনের পুনিতা নাগার্চিরও একই কষ্ট। স্বামীহারা পুনিতার সাড়ে তিন বছরের ছেলে আয়ুশ চলতি বছরের জুলাই মাসে চিতাবাঘের হামলায় প্রাণ হারায়। রক্তাক্ত দেহ মিলেছিল ঝোপের মধ্যে। শোকে পাথর পুনিতা বলেন, “চলে যাওয়ার এত তাড়া ছিল কেন? এই পুজো আমার নয়।”
গত ২৭ আগস্ট আংরাভাসা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খুটাবাড়ি গ্রামের ১২ বছরের করিমুল হকও চিতাবাঘের শিকার হয়। মা আমিনা খাতুনকে আজও তাড়া করে ফেরে সেই অভিশপ্ত সন্ধ্যা।
উৎসবের এই আবহেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ঘন ঘন বন্যপ্রাণীর হামলায় বারবার শূন্য হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারের কোল। প্রশ্ন উঠছে কবে প্রশাসনের টনক নড়বে? কবে এই মায়েদের কান্না থামবে? এই এলাকায় নির্বিঘ্নে মানুষের জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দিতে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই জবাব চাইছে সন্তানহারা পরিবারগুলি।
Leopard
উৎসবের রঙ ফিকে, চিতাবাঘের হামলায় সন্তানহারা মায়েদের হাহাকারে

×
Comments :0