অশোক ভট্টাচার্য
উত্তরবঙ্গের বন্যা জনিত পরিস্থিতির কথা এলেই মনে পড়ে ১৯৬৮ সালের জলপাইগুড়ি শহরে তিস্তা ও করলা নদীর বীভৎস বন্যার কথা। সে রাতটা ছিল লক্ষ্মী পূজার পূর্ণিমার রাত তখন আমি শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার কয়েক মাস আগেই আমি যুক্ত হই ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে। শুধু জলপাইগুড়ি শহর নয়, শহরের আশপাশের অনেক গ্রামও তখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বন্যায়। শিলিগুড়ির গ্রামাঞ্চল তার থেকে বাদ যায়নি। শিলিগুড়ির মহানন্দা, বালাসন নদীর জল উপচে পড়ে দু’কূল প্লাবিত হয়েছিল। মনে আছে আমরা পার্টি ও কৃষকসভার উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলাম ফাঁসিদেওয়ার গ্রামে। শিলিগুড়ির মানুষ অনেক ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছিল জলপাইগুড়িতেও।
বন্যা যখন হয়েছিল জলপাইগুড়িতে, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে ছিল রাজ্যপালের শাসন। রাজ্যপাল ছিলেন ধরমবীর। তার কয়েক মাস আগেই ১৯৬৭ সালে গঠিত এ রাজ্যে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার বেআইনিভাবে রাজ্যপাল ভেঙে দিয়েছিলেন।
জলপাইগুড়ির বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন কমরেড জ্যোতি বসু। তিনি প্রথমে আসেন শিলিগুড়িতে। ওঠেন মহানন্দাপাড়ায় বুড়িদি বা সাবিত্রী রায়ের বাড়িতে। তিনি ছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মনোরঞ্জন রায়ের স্ত্রী। পরেরদিন আমার আর অজিত সরকারের ওপর দায়িত্ব পড়ল পার্টির পক্ষ থেকে জ্যোতিবাবুকে জলপাইগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার। মনে আছে একটা ভাঙাচোরা জিপ গাড়ির ব্যবস্থা করা হলো। সেই জিপ গাড়িতে ছিলেন আরএসপি নেতা ননী ভট্টাচার্যও। আমাদের জিপ যখন জলপাইগুড়ি পৌঁছেছিল তখন জলপাইগুড়ি শহরের বন্যা বিধ্বস্ত পরিস্থিতি দেখে ভাবতেই পারিনি বন্যার বিপর্যয় এরকম হতে পারে। আজও আমার সেদিনটির কথা মনে পড়ে।
জ্যোতি বসু প্রথমে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়িতে গোবিন্দ কুণ্ডুর বাড়িতে। সেখানে তিনি তাঁর জুতো খুলে রেখে হেঁটে হেঁটে সমগ্র জলপাইগুড়ি শহরের পরিস্থিতি ঘুরে ঘুরে দেখেন। তার সঙ্গে ছিলেন সুবোধ সেন, গোবিন্দ কুণ্ডু, সুবোধ মিত্র, মানিক সান্যাল প্রমুখ। আর ছিলাম আমি ও অজিত দা। সারা শহরে পড়েছিল তিস্তা নদীর পলি মাটি। পিচ্ছিল রাস্তা। এখানে সেখানে পড়েছিল মৃতদেহ। জ্যোতিবাবু সারা শহর ঘুরে দেখেন। কথা বলেন বন্যা দুর্গত মানুষের সঙ্গে।
জলপাইগুড়ির সেই বিধ্বংসী বন্যার আগে কেন তিস্তা পাড়ের মানুষদের সতর্ক করে দেওয়া হয়নি, অনেক মানুষের এটি ছিল একটি বড় অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়েছিল সেই সময়ে। এ’ নিয়ে আমাদের কলেজে হয়েছিল বিতর্ক প্রতিযোগিতা। জলপাইগুড়ি বন্যার আগে মানুষকে সতর্ক না করে দেওয়ার বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের মানুষের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র ক্ষোভ। তার প্রতিফলন ঘটেছিল ১৯৬৯ সালের মধ্যবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে।
এবছর শারদ উৎসবের অব্যবহিত পরে বা লক্ষ্মীপুজোর দু’দিন আগে দার্জিলিঙের পাহাড়, তরাই, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্স এলাকার অনেক গ্রাম, শহর, লোকালয়, চা বাগান, বনাঞ্চল, বন্যা ও ভূমিধসের ফলে একেবারেই বিধ্বস্ত। এই ৪টি ছাড়াও কোচবিহার জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা, মহানন্দা, মেচি, বালাসন, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ নদী। এই সমস্ত নদীগুলি আসছে নেপাল, ভুটান রাষ্ট্র বা সিকিম রাজ্য থেকে। এই সমস্ত নদীগুলি মিশেছে ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা বা কোশি নদীতে। উত্তরবঙ্গের রয়েছে আরও অনেকগুলি ছোট ছোট নদী। সাধারণভাবে এই নদীগুলি বর্ষার আগে পর্যন্ত থাকে শুষ্ক। তিস্তা নদীর উৎসস্থল উত্তর সিকিমের অনেকগুলি হিমবাহ।
অনেক বছর তিস্তা স্বাভাবিক নিয়মেই প্রবাহিত হয়ে আসছিল। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সিকিম থেকে সেবক পর্যন্ত তিস্তা পাড়ে হয়েছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা ভূমি ধস। অনেক রাস্তা, সেতু, বাড়িঘর এর ফলে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত হয়েছেন সীমান্তে পাহারারত সামরিক বাহিনীর অনেক সৈন্যও। এই সমস্ত অঞ্চলে যারা বসবাস করেন তাঁরা খুবই গরিব। ২০১৪-১৫ সালে সিকিম ও উত্তরবঙ্গে উচ্চপর্যায়ের ভূমিকম্প হয়। সিকিমের তিস্তার পার দিয়ে ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে উত্তরবঙ্গের সমতল অঞ্চলেও। আরেকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই অঞ্চলে সম্প্রতিক সময়ে অনেকবার ঘটছে, তা হলো মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বান। এতেও মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। উত্তরবঙ্গের আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাও ঘটছে তা হলো অজস্র ছোট ছোট পাহাড়ি নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়া। এতেও অনেকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে নদীর পাড়ে বসবাসকারী গরিব মানুষরা। উত্তরবঙ্গের নদীগুলির উৎসের সঙ্গে একাধিক দেশ যেমন চীনের তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ বা আসাম, সিকিম, বিহার রাজ্য যুক্ত। ব্রহ্মপুত্র বোর্ড থাকলেও নদী নিয়ে বিভিন্ন দেশ বা রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলির মধ্যেও আন্তরিক উদ্যোগের অভাবও রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে এবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে অনেক প্রাণীরও মৃত্যু হয়েছে। অনেক বন্যপ্রাণী নিখোঁজ এখনও।
যেটা উদ্বেগের তা হলো গত দুই দশকে, বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে এই অঞ্চলে প্রত্যেক বছরেই বিশেষ করে তিস্তার নিম্ন ধারা বা স্রোত বরাবর অঞ্চলে কেন ধারাবাহিকভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে বা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে? উত্তরবঙ্গের পাহাড় বা সমতল অঞ্চলের সাধারণভাবে নগরায়নের হার কম। একমাত্র ব্যতিক্রম শিলিগুড়ি বা তার সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশ। এই অঞ্চলে উৎপাদন ভিত্তিক শিল্প নেই বললেই চলে। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষি, চা বাগান, পর্যটন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা। অথচ অঞ্চলটি শুধু ভৌগোলিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত দিক দিয়েও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলে তো বটেই স্বাধীনতা ও দেশ ভাগের পরেও উত্তরবঙ্গ যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। পেয়েছে শুধু অবহেলা। অবশ্যই ব্যতিক্রম বামফ্রন্ট সরকারের সময়।
দার্জিলিঙের পাহাড় বা তরাই অঞ্চল বা ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ডুয়ার্স অঞ্চল প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রবণ এলাকা। পূর্ব হিমালয় পর্বত একটি তরুণ পার্বত্য এলাকা। যাকে বলা যেতে পারে ভঙ্গুর বা ফ্র্যাজাইল। যা এখনো স্থিরীকৃত হয়নি। সেই কারণেই এই পাহাড়ে জমির ব্যবহার করা প্রয়োজন খুব সতর্কভাবে ও ভারসাম্য রক্ষা করে। ২০০০ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময় পাহাড় এলাকার জন্য ভূমি ব্যবহারের একটি মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে ও পরে কি করণীয় তারও একটি নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। পাহাড়ে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষা, ১১ মিটারের নিচে গৃহ নির্মাণ করা, সমস্ত পাহাড়ি ঝোরা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ কাজ না করা, নদী লাগুয়া অঞ্চলে গৃহ নির্মাণ না করা, রাস্তায় অতিরিক্ত মাল নিয়ে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা, ইত্যাদি বিধি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই সমস্ত বিধিগুলি বিন্দুমাত্র মেনে চলা হচ্ছে না । বরং তার বিপরীত মুখে যাওয়া হয়েছে ।
সাম্প্রতিককালে সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৩০ টি ড্যাম। নির্মাণ করা হয়েছে অনেকগুলি উচু উঁচু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তাকে কেন্দ্র করে অনেক ওজনের যন্ত্রপাতি বহন করা হচ্ছে ১০ নং জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে। তিস্তা নদীর পাড় দিয়ে জাতীয় সড়কটি একটি ভঙ্গুর পাহাড়ের উপরে নির্মিত হয়েছে। বিকল্প রাস্তা নির্মাণের কথা অনেকবার বলা হলেও তা নির্মিত হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নির্মিত সেবক করোনেশন সেতুর বিকল্প সেতু আজও নির্মাণ করা হয়নি। সুভাষ ঘিসিং যখন গোর্খা পার্বত্য পরিষদের কার্যনির্বাহী ছিলেন তখনই বামফ্রন্ট সরকারের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছিল শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াঙ পর্যন্ত রোহিনী রোড। গত ১০ বছরে এই অঞ্চলে একটিও নতুন রাষ্ট্রীয় সড়ক বা জাতীয় সড়ক নির্মিত হয়নি। এতগুলি ড্যাম নির্মাণের বিরুদ্ধে সিকিমে লেপচা উপজাতি ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা ২০০৩-০৪ সালে আন্দোলন শুরু করেছিল। আমরাও তা সমর্থন করেছিলাম।
সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক নির্মাণ কাজ চলেছে সেবক থেকে সিকিমের সিংতাম পর্যন্ত পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে রেলপথ নির্মাণ। তার ফলে তিস্তার পার দিয়ে ভঙ্গুর পাহাড় অঞ্চল আরও ভঙ্গুর হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি করেছে। তারই পরিণতি ১০ নং জাতীয় সড়ক অঞ্চল প্রত্যেক বছর এই ভূমি ধস বেড়েই চলেছে। তিস্তা নদীতে ভেসে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। বৃক্ষছেদন ঘটছে ব্যাপকভাবে। লুট হচ্ছে নদী।
তরাই বা ডুয়ার্সের পাহাড়ি নদীগুলির পাথর বালি ব্যাপকভাবে লুট করে নিচ্ছে একদল লুটেরা, যারা মদত পাচ্ছে শাসকদলের কাছ থেকে। ফলে এই সমস্ত নদীগুলির গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে এবং হড়পা বানের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে ব্যাপকভাবে হয়েছে হোম স্টে নামে একরকমের বেআইনি পর্যটন ব্যবসা। পাহাড়, বন বা নদীর পারে বেপরোয়া ভাবে হোম স্টে নামে তারকা খচিত হোটেল বা রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। সেখানে মানা হচ্ছে না কোনও গৃহনির্মাণ বিধি, বনাঞ্চলের আইন। পাহাড় বা ডুয়ার্সের মূল্যবান জমি এভাবে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের আদিবাসী বা সমতলের রাজবংশী বা মেচ রাভা, ধীমালি উপজাতির মানুষের জমির মালিকানা থেকে। বনাঞ্চলেও গড়ে উঠেছে অনেক বড় বড় হোটেল, রিসর্ট, বাগান বাড়ি। চা বাগানের অনেক জমিও ব্যবহৃত হচ্ছে এসব কাজে।
উত্তরবঙ্গে এই লুট চলছে শাসক দলের সাহচর্যে ও মদতে। এরাই রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের বড় সম্পদ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দ্রুত বনাঞ্চলের এলাকা হ্রাস পাচ্ছে। নির্বিচারে চলছে বন লুট। এখানেও রয়েছে শাসকদলের ভূমিকা। উত্তরবঙ্গে একদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের নির্বিচারে লুট চলছে, অন্যদিকে বাড়ছে শক্তির ব্যবহার, পরিবহণ, নির্মাণ কাজের বৃদ্ধি। এসব ক্ষেত্রেই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ সবচাইতে বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। ২০১৫-১৬ সালে শিলিগুড়ি শহরে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ছিল জাতীয় হারের থেকে বেশি।
এটাই প্রমাণ করে প্রাকৃতিক সম্পদ কীভাবে লুট হচ্ছে, বিশেষ করে বনছেদন কীভাবে বাড়ছে উত্তরবঙ্গে। ২০২১ সালে গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু মহাসম্মেলনে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন,‘‘আমরা নিজেরাই আমাদের কবর খুঁড়ে চলেছি।’’ উত্তরবঙ্গে তাই হচ্ছে।
রাজ্যের বর্তমান সরকার একবারের জন্যও তাদের বলে না এই সমস্ত অনৈতিক কাছ থেকে বিরত থাকতে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একবারের জন্যও বলেননি তিস্তার ওপর বেপরোয়া ভাবে ড্যাম তৈরি বন্ধ করা হোক। হোম স্টে নির্মাণের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণের কথাও তিনি বলেননি। বেআইনিভাবে গৃহ নির্মাণের কাজ বন্ধ করার কথাও তিনি বলেন না। আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকে একটি চিঠিও লেখেননি, বন্ধ করা হোক পাহাড় কেটে রেল লাইন পাতার কাজ। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে তিনি একবারের জন্য উত্তরবঙ্গের মানুষকে সতর্ক করেননি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসানিকভাবে যে ন্যূনতম প্রস্তুতি রাখার দরকার ছিল সেই প্রস্তুতিও এই সরকার তা রাখেননি পাহাড় বা সমতলে। তিনি যে উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি এতটুকুও আন্তরিক নন, তা তিনি দেখিয়েছেন কার্নিভালে নাচানাচি করে। ১৯৬৮ সালে জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর বন্যা বিধ্বস্ততার দিনগুলিতে তৎকালীন রাজ্যপাল ধরমবীরের দায়িত্বজ্ঞান হীনতা বা উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি অবহেলা, আজও প্রায় ষাট বছর পরেও মানুষ ভুলতে পারেনি । ভুলবে না বর্তমান রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলার কথাও ৷ এই লুট যখন চলে রাজ্য বা কেন্দ্রের সরকারের মদতে, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের মানুষকে এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে আনন্দ করতে পারেন, তিনি ভাবতে পারেন কিছু অর্থ আর হোমগার্ডের একটি কাজ দিয়ে তিনি মানুষের মুখ বন্ধ করে দিতে পারবেন, তাহলে ভুল করবেন। উত্তরবঙ্গের মানুষ কিন্তু তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও ভণ্ডামি আর বেশি দিনের জন্য মুখ বুজে সহ্য করবে না।
Comments :0