Post Editorial

এসআইআর নিয়ে এত আতঙ্ক কেন?

উত্তর সম্পাদকীয়​

শ্যামল কুমার মিত্র


২০০২ সালে ২ বছর ধরে এ রাজ্যে এসআইআর হয়েছিল। তৎকালীন রাজ্য সরকার (বামফ্রন্ট) ঐ এসআইআর প্রক্রিয়ায় তৎকালীন নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল। অর্থাৎ শাসক বামফ্রন্ট মনে করেছিল এসআইআর’র মাধ্যমে মৃত ও ভুয়ো ভোটারমুক্ত সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুসারে নির্বাচন হলে, তাদের নির্বাচনী জনভিত্তির কোনও ক্ষতি হবে না। ২০২৫-এর এসআইআর’র সময় বর্তমান শাসক সেই রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস প্রদর্শনে ব্যর্থ হলেন। এসআইআর’র সার্বিক বিরোধিতার মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করলেন, স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা অনুসারে ভোট হলে তাদের নির্বাচনী জনভিত্তির ক্ষতি হবে। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলো, ৬৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়ল চূড়ান্ত ভোটার তালিকার জন্য অপেক্ষা না করেই ৫ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে বামফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করলেন৷ তাঁর যুক্তি ছিল, সর্বশেষ নির্বাচনে বামফ্রন্ট ৩৬ লক্ষ ভোটে এগিয়েছিল, ভোটার তালিকা থেকে যে ৬৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, সেই ভুয়া ভোটে বামফ্রন্ট জিতেছে। তাই এই সরকার অবৈধ। রাষ্ট্রপতি শাসনে নুতন নির্বাচন চাই। তৃণমূলের তৎকালীন জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও বিজেপি অবশ্য এই দাবি সমর্থন করেনি। 
২০০৪ এবং ২০০৬ সালে এই সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুসারে ভোট হয়। ২০০৪ -এর লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ৩৫, কংগ্রেস ৬ এবং তৃণমূল ১ টি আসনে জিতেছিল। ২০০৬ -এর বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২৩৫ টিতে জিতে প্রমাণ করেছিল মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ মিথ্যা। মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেন তিনি এককথার মানুষ। তাই আশা করাই যায় এবারের এসআইআর-এ অনুরুপ ঘটনা ঘটলে, অর্থাৎ খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়াদের সংখ্যা গত নির্বাচনে তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী দলের ভোট পার্থক্যের বেশি হলে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পদত্যাগ করে রাষ্ট্রপতি শাসনে নুতন করে ভোট দাবি করবেন। সেবার চূড়ান্ত তালিকায় ২৪ লক্ষ নাম বাদ পড়ে ছিল।                                                                    বর্তমানে জাতীয় নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কোনও সাংবিধানিক নিরপেক্ষ সংস্থা নয়। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি সাংবিধানিক সংস্থার ব'কলমে বিজেপির গণসংগঠনের অতিরিক্ত কিছু নয়৷ ফলে কমিশনকে সরকারের ব'কলমে শাসক দল বা বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে, "জাতীয় নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের দায়িত্ব সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে তা দেশের গণতন্ত্রের কাঠামো এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকর হবে। মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার সহ ৩ জন নির্বাচন কমিশনারকে বেছে নেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, লোকসভায় বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত একটি সিলেকশন প্যানেল।" কিন্তু এই নির্দেশকে অকার্যকর করতে কেন্দ্র সরকার নতুন আইন আনলো, যাতে বলা হলো, "সিলেকশন প্যানেলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকবেন না। প্যানেল গঠিত হবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে।" ফলে ৩ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে ২:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি দল সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিরঙ্কুশ অধিকার পেল। বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারও মোদীজীর পছন্দের অফিসার হিসাবেই পদ পেয়েছেন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করেন ৩ জন কমিশনার, তাই এই কমিশনাররা বিজেপি’র পছন্দের লোক হলে, বিজেপি’র আনুকূল্যে কমিশনার হলে, স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বিজেপি’র স্বার্থে এবং কথামত নির্বাচন কমিশন চালাবেন। তাই বিজেপি’র গণসংগঠনে পরিণত জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপর  বিজেপি বাদে অন্য দলগুলি ভরসা করতে পারছে না।                                                  এসআইআর নিয়ে ২০০২ সালে মানুষ আতঙ্কিত হননি মূলত ৫ টি কারণে (১) ২ বছর সময় ধরে এসআইআর হয়েছিল, ফলে মানুষ পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিলেন প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করতে৷ (২) রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের মতো অনায়াসলভ্য নথি চাওয়া হয়েছিল। (৩) মানুষকে কোনও এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়নি, কোনও সেল্ফ ডিক্লারেশন দিতে হয়নি। (৪) রাষ্ট্র ও নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভোটারদের বৈধতা/অবৈধতা যাচাইয়ের। তা ব্যক্তি নাগরিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। (৫) কোনও ভিত্তিবর্ষ ছিল না, পূর্ববর্তী ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ২০২৫ -এর এসআইআর-এ জন আতঙ্ক এত ব্যাপক যে শুধু ৪ দিনে ১ কোটিরও বেশি মানুষ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ২০০২-এর তালিকা দেখেছেন, বিভিন্ন পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা, মহাফেজখানা সহ বহু সরকারি দপ্তরে হাজার হাজার মানুষ লাইন দিচ্ছেন পুরানো নথির খোঁজে, একাধিক সহনাগরিক এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। 
কিন্তু কেন এই আতঙ্ক? (১) ২০০২এ ভোটার ছিল ৪.৫৮ কোটি, সময় লেগেছিল ২ বছর৷ ২০২৫ এ ভোটার ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯। এসআইআর’র সময় ৪ নভেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ সর্বমোট ৩ মাস। ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি, অর্থাৎ মাত্র ৩০ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নথি সহ আবেদন করার৷ এত অল্প সময়ে কোন জাদুমন্ত্রে তথ্য, প্রমাণ, প্রামাণ্য নথি সংগ্রহ করে বাদ পড়া ভোটাররা ভোটার হিসাবে তাদের বৈধতা প্রমাণ করবেন? অসমে যখন এনআরসি’র নামে লক্ষ লক্ষ অসমে বসবাসকারী পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের এক কলমের খোঁচায় অনাগরিক করে দেওয়ার কাজ চলছিল, তখন তাদের জমা দেওয়া বিভিন্ন নথি যাচাইয়ের জন্য অসংখ্য রিকুইজিশন পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন অসমের কতৃপক্ষ। এগুলির অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাচাই করে দিতে পারেনি কারণ অত পুরানো নথি এ রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে পাওয়াই যায়নি। ফলে অসমবাসী পশ্চিমবঙ্গের কত নাগরিক অনাগরিক হয়ে এনআরসি’র বাইরে চলে গেছেন, তার কোনও হিসাব নেই। পশ্চিমবঙ্গের এসআইআর-এ তেমন ঘটার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ নথি শুধু জমা দিলেই হবে না, সেগুলি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে
হবে৷ (২) গ্রহণযোগ্য নথি হিসাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটার কার্ড ব্রাত্য। নির্বাচন কমিশন তার দেওয়া পরিচয়পত্রকে কোন যুক্তিতে মান্যতা দেবে না? দেশে অন্তত ১০০ কোটি মানুষের ভোটার কার্ড আছে। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রামাণ্য নথি হিসাবে ভোটার কার্ড স্বীকৃত। ১৯৯৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ইস্যু করা প্যান কার্ডও ব্রাত্য। রাজ্য সরকারের ইস্যু করা রেশন কার্ড চলবে না। ২০১০ সালে চালু হয়েছিল আধার। সরকার বলেছিলেন, "আধার আম জনতার অধিকার''। দেশে ১৩৯ কোটিরও বেশি মানুষের আধার কার্ড আছে। আধার তৈরিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ যাবৎ সর্বক্ষেত্রে আধার প্রামাণ্য নথি হিসাবে মান্যতা পেয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকার আধার কার্ড দেয়। নির্বাচন কমিশন কোন এক্তিয়ারে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নিজের দেওয়া পরিচয়পত্রকে মান্যতা না দেওয়ার অধিকার অর্জন করল? কমিশন 'আম জনতার অধিকার'কে অস্বীকার করছেন। বলা হচ্ছে আধার দেখানো যেতে পারে, তবে তা নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। যে ১১ টি নথি প্রামাণ্য নথি হিসাবে কমিশন গ্রহণ করবেন তার ১টিও কি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র? যে হাস্যকর যুক্তিতে আধার, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তা হলো এগুলি ব্যাপক জাল হয়েছে। কমিশনের গ্রহণযোগ্য ১১ টি নথির প্রত্যেকটি যে জাল হয়নি, এই তথ্য কমিশন কোথায় পেল? সমস্ত নথিই জাল হওয়া সম্ভব। প্রয়োজন জমা দেওয়া নথি যাচাই করে দেখা। কিন্তু জাল হয়েছে, এই কারণ দেখিয়ে সরকারি নথি, এমনকি কমিশনের নথিও অস্বীকার করবে কমিশন? 
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যার ৭.৫৫%। রাজ্যে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড সারা ভারতের নিরিখে যথাক্রমে ৭.৪১%, ৭.৭৭% এবং ৭.৪৬%। শতাংশের এই হিসাব জনসংখ্যায় সারা ভারতে পশ্চিমবঙ্গের অংশের সমানুপাতিক ও সঙ্গতিপূর্ণ। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যায় আধার, ভোটার, রেশন কার্ড জাল এই প্রচার কেন্দ্রীয় তথ্যেই অসত্য বলে প্রমাণিত। আসলে নির্বাচন কমিশন মানুষের কাছে সহজলভ্য নথির মান্যতা অস্বীকার করছেন  গরিব, প্রান্তিক, জনজাতি,মুসলিম, মতুয়া, উদ্বাস্তুদের বিপন্নতায় ফেলতে। ভয়টা এখানে। (৩) ভিত্তিবর্ষ ২০০২ হওয়ায় ২০০৪ থেকে ২০২৫ সালের সমস্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা না থাকার কোনও মূল্য থাকছে না। নির্বাচন কমিশনকে বলতে হবে ২০০২ পরবর্তী ভোটার তালিকাগুলি কি অবৈধ? তাহলে ঐ সব ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে হওয়া প্রতিটি নির্বাচন এবং প্রতিটি সরকারও তো অবৈধ। এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর জরুরি। (৪) এবারের এসআইআর-এ নাগরিককেই প্রমাণ করতে হবে তিনি নাগরিক। রাষ্ট্র ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ব্যক্তি নাগরিকের উপর চাপিয়ে দেওয়ায় নাগরিকরা বিপন্ন। (৫) আইন ও বিচার ব্যবস্থা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে যাতে ১ জনও নিরপরাধ সাজা না পায়৷ রাজ্যের মানুষকে নিশ্চিন্ত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের যে একজনও বৈধ ভোটারকে বাদ দেবে না এসআইআর। এই কাজটা করতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। যে সব তথাকথিত হিন্দু ধর্মের স্বঘোষিত ঠিকাদাররা আনন্দে উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করছেন যে এবারের এসআইআর মুসলিমদের কাছে আতঙ্কের, হিন্দুদের কোনও ভয় নেই, তাদের অবগতির জন্য ১টি তথ্য দিই। আসামে এসআইআর’র হাত ধরে যে এনআরসি হয়েছে ৬ বছর ধরে, তাতে বেনাগরিক হয়ে ভোটাধিকার, সমস্ত সরকারি প্রকল্প, সমস্ত সরকারি অনুদান ও পরিষেবা, সরকারি/বেসরকারি চাকরি সহ সমস্ত নাগরিক অধিকার হারিয়েছেন, তাদের সংখ্যা ১৯ লক্ষ, যাদের মধ্যে ৫ লক্ষ মুসলিম, ১২ লক্ষ হিন্দু। এ রাজ্যেও সব থেকে বেশি বিপদে পড়বেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর সঠিকভাবেই বলেছেন অন্তত দেড় কোটি নাম বাদ যাবে। বিজেপি মতুয়া দরদি সেজে সিএএ ক্যাম্প করছে, মতুয়াদের আশ্বাস দিচ্ছে এসআইআর-এ নাম বাদ গেলে কোনও চিন্তা নেই, মতুয়ারা এখনই তাদের ক্যাম্পে এসে সিএএ- এর মাধ্যমে (Citizenship Ammendment Act-2003) নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করুন, নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এতে সংশ্লিষ্ট বিজেপি নেতাদের কতটা লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে জানি না। কিন্তু মতুয়াদের মনে রাখতে হবে, (১) কোন রাজনৈতিক দলের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার নেই। নাগরিকত্ব দেবেন ভারত সরকার ২০০৩-এর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের চাহিদামত প্রামাণ্য সরকারি নথি নিয়ে। সেই সব নথি যাচাই করে নাগরিকত্ব ইস্যু করবেন সরকারি অফিসাররা সংশ্লিষ্ট নথির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে ১০০% নিশ্চিত হয়ে, কোনও রাজনৈতিক নেতার কথায় নয়। কারণ পরবর্তীকালে ইস্যু করা নাগরিকত্ব আদালতে চ্যালঞ্জ হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের উপর 'দায়' বর্তাবে, কোনও নেতার উপর নয়। (২) নাগরিকত্ব চাইতে হলে, আগে আবেদনপত্রে লিখতে হবে যে আবেদনকারী ভারতের নাগরিক নন। আগাম এই ঘোষণা রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।                              ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানালো, দেশে কত অনুপ্রবেশকারী আছে তার কোনও তথ্য সরকারের কাছে নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে দেশে কোটি কোটি 'ঘুষপেটিয়া'র গল্প বলছেন মোদী-অমিতশাহ জুটি? বিহারে 'ঘুসপেটিয়া' ঘুসপেটিয়া' করে বিহারবাসীর কান ঝালাপালা করলেন মোদী-অমিত শাহ জুটি। অথচ এসআইআর-এ বাদ পড়া ৪৩ লক্ষের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী মাত্র ৩১৫ জন যাদের মধ্যে ৭৮ জন মুসলিম, ২৩৭ জন হিন্দু। দেশে মুসলিম বৃদ্ধির গড় ২৪.৬%, পশ্চিমবঙ্গে ২১.৮%। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধির জাতীয় গড় ১৭.৭%, পশ্চিমবঙ্গে তা ১৩.৮%। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জাতীয় গড় ০.৯%, পশ্চিমবঙ্গে তা ০.৫%। এসবই কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য। তাহলে কেন্দ্রের সরকারের দেওয়া তথ্যই বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। অথচ মোদী-শাহ পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক অনুপ্রবেশের কথা বলছেন। অর্থাৎ বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্যের বিপরীতে গিয়ে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় এ রাজ্যে কোটি কোটি মুসলিম অনুপ্রবেশের ফলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক তৈরি করে হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষী করার পরিকল্পিত প্রয়াস নিয়েছেন। মানুষের মধ্যে থাকা সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি, ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি স্বল্পকালে নির্বাচনে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই পারে। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা ধর্মান্ধতার দৈত্যকে বোতলমুক্ত করাটা সহজ, কিন্তু তাকে পুনরায় বোতলবন্দি করাটা শুধু কঠিনই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভবও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে এই চিরন্তন সত্য বুঝতে হবে। 
সমাজ মাধ্যমে এমন সব উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধতা সর্বস্ব পোস্ট দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। মনে হচ্ছে রোটি-কাপড়া আউর মকান-এর মতো মূল ইস্যুগুলি বিস্মৃত হয়ে মানুষ কি ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতপাতকে নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে পছন্দ করছে! সুশাসন ও জনকল্যাণ দিতে ব্যর্থ শাসক ঠিক এটাই করতে চাইছে৷
 

Comments :0

Login to leave a comment