নুহ এবং গুরগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা মোকাবিলার নামে গরিব মানুষের ঝুপড়ি উচ্ছেদে নামল হরিয়ানা সরকার। বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের নির্দেশে চলছে ঝুপড়ি উচ্ছেদ। নামানো হয়েছে বুলডোজার।
নুহের কুড়ি কিলোমিটার দূরে অন্তত আড়াইশো ঝুপড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে বুলডোজার দিয়ে। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি’র সরকার যা করছে হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের ভূমিকা তেমনই।
বিপুল সংখ্যায় পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে চলছে ঝুপড়ি উচ্ছেদ। নুহ জেলায় তাউরু শহরে হরিয়ানা নগর অথরিটির জমিতে অবৈধ দখলদার আখ্যা দেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। সরকারি ভাষ্যে বলা হচ্ছে, ঝুপড়ির বাসিন্দারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। এরা আগে আসামে ছিল। আসাম থেকে হরিয়ানার এই এলাকায় সরকারি জমিতে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকছে।
পুলিশের অভিযোগ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে হামলাকারীদের মধ্যে ছিল ‘অনুপ্রবেশকারীরা’। বাইরে থেকে হরিয়ানায় ডেরা করে থাকা এই অংশ হিংসায় অংশ নিয়েছে।
শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ সাতটি এফআইআর দায়ের করেছে। মুখ্যত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের নাম রয়েছে বিভিন্ন এফআইআর-এ। অথচ ঘটনার দিন হরিয়ানা থেকে সশস্ত্র মিছিল বের করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ দল। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ জানাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং হরিয়ানার সাংঅসদ রাও ইন্দরজিৎ সিং-কেও। তিনি বলেছেন, ধর্মীয় মিছিলে তরবারি, বল্লম কেন এল। পুলিশই বা আগে থেকে কিছু জানতে পারল না কেন।
নুহ এবং গুরগাঁওয়ে উত্তেজনার পর মুসলিম এলাকায় পরপর দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। হত্যা করা হয়েছে একটি মসজিদের ইমামকে। আগুন লাগানো হয়েছে একের পর এক গাড়িতে। নুহতে শুক্রবারের নমাজ বন্ধ রেখেছে বিভিন্ন মসজিদ বন্ধ রেখেছে। মসজিদ কমিটিগুলির তরফে সম্মিলিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে ঘরে থেকে নমাজ পড়ার।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ দলের মিছিল থেকে যে হিংশা ছড়ানো হতে পারে সেই আশঙ্কা ছিল। নুহের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ প্রশাসনের কাছে মিছিল স্থগিত করার আবেদন জানানো হয়েছিল। তা শোনা হয়নি।
নুহের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন। তাঁকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে ১৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৯০ জনকে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গুরগাঁও বা গুরুগ্রামের মতো শিল্পাঞ্চলে পরিযায়ী শ্রমিকরা যান কাজ করতে। কৃষিক্ষেত্রে সঙ্কটের দরুন তাঁদের অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যেও কাজের খোঁজে যেতে হয় শহরাঞ্চলে। এঁদের মধ্যে বাংলাভাষীরাও রয়েছে। তাঁদেরই বাংলাদেশি বলে দাবিগিয়ে দিচ্ছে বিজেপি।
Comments :0