দেশজুড়ে ফের দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করেছে কোভিড-১৯’র সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যুও। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দেশে নতুন করে ১০ হাজার ১৫৮ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত সাত মাসে দৈনিক সংক্রমণের হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ। প্রায় সাত মাস পর দেশে ১০ হাজারের গণ্ডি পেরোল করোনা। একদিনে দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১৫৮ জন। তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৩০ জন। করোনা আক্রন্তের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার বেড়েছে একদিনে।
গত বুধবার করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। মৃতের নাম ভাস্কর দাস (৭৬)। রিজেন্ট পার্ক এলাকার বাসিন্দা। মৃতের পরিবার সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে কয়েকদিন আগে তিনি উত্তরবঙ্গ বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে বাঘাযতীনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিৎসা চলাকালীন বুধবার সকাল ১১ টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। বৃদ্ধের মৃত্যুর শংসাপত্রে কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার রায়জঞ্জের বাদিন্দা করোনা আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কোভিডে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে। মৃতের নাম রফিকুল ইসলাম (৪৮)। মৃতের পরিবার সুত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির বাড়ি ইটাহার থানা এলাকায়। কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দিন তিনেক আগে তাঁর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের আত্মীয় গোলাম মর্তুজা জানিয়েছেন, ৩০ মার্চ অসুস্থ হয়েছেন। ব্রেন ষ্টোক রোগে আক্রান্ত হন। প্রথমে তাঁকে ইটাহার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিলো। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিলো। এখানে এসে সোমবার করোনা ধরা পরেছে। করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা করতেই এদিন মৃত্যু হয়।
রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরতেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় জেলা জুড়ে। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে প্রশাসনিক নিয়ম মেনে শেষকৃত্য হবে।
বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৯৯৮ জন। দৈনিক পজিটিভিটি রেট প্রায় ৪.৪২ শতাংশ। সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেট ৪.০২ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত দেশে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৮.৭১ শতাংশ।
পাশাপাশি লাফিয়ে বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকশিত রিপোর্ট অনুসারে, সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৯৯৮। গত ২২৩ দিনের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৩০। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা পেরিয়ে গেল ১০ হাজারের গণ্ডি। দৈনিক পজিটিভিটি রেট প্রায় ৪.৪২ শতাংশ। সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেট ৪.০২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, এখনও পর্যন্ত দেশে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৮.৭১ শতাংশ। সম্প্রতি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে আবার আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী আট থেকে দশ দিন সংক্রমণ ধাপে ধাপে বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এক্সবিবি.১.১৬’ নামে কোভিড-১৯’র নতুন একটি প্রজাতিই ভারতে এবারে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এটি ওমিক্রনের নয়া উপপ্রকরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, এপর্যন্ত ২০ টিরও বেশি দেশে এই উপপ্রকরণটির সন্ধান মিলেছে। তবে রাজ্যে রাজ্যে প্রতিদিনই যেভাবে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, তাতে এখন থেকেই কঠোরভাবে করোনা-বিধি পালনের জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলার মতো নিয়ম মানার পাশাপাশি উপসর্গ থাকলে করোনা পরীক্ষার পরামর্শও দিচ্ছেন তাঁরা। তবে সরকারি তরফে এখনো করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়ার কোন লক্ষণ না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
Comments :0