আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত মহিলা পিজিটি চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় সিবিআই’য়ের ভূমিকা সহ একাধিক প্রশ্ন তুলে ফের নতুন করে তদন্তের আবেদন করলেন নিহত চিকিৎসকের পরিবার।
আর জি কর মামলার চার্জ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। রায় দান স্থগিত রাখা হয়েছে। শনিবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের আদালতে এই চার্জ গঠনের আগেই নির্যাতিতার বাবা, মা এই তদন্তকে সামনে রেখে প্রায় ৫০টি প্রশ্ন রেখেছেন আদালতে। তাঁরা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে জানিয়েছেন, যেদিন এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল, সেদিন জানানো হয়েছিল নির্যাতিতা বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেয়েছিল।
শনিবার শিয়ালদহ আদালতে সেই প্রশ্নকে সামনে রেখেই আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন, বাইরে থেকে খাবার এলে তা কোন প্যাকেট বা প্লাস্টিক কন্টেনারে আসবে। তদন্তে সেই কন্টেনারের কোনও খোঁজ হয়েছিল? যে চারজন নির্যাতিতার সঙ্গে খাবার খেয়েছিলেন তাদের কি তদন্তের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে? যে ডেলিভারি বয় খাবার এনে দিয়েছিলেন তাঁকে কি তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে? প্রথমে বলা হয়েছিল ডিএনএ রিপোর্টে সংমিশ্রনের প্রমান পাওয়া গেছে। যদি সংমিশ্রনের প্রমান থেকে থাকে তাহলে একজনের ডিএনএ ফরেনসিক হবে কেন? নির্যাতিতার বাবা মা আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁদের প্রশ্ন মালায় বলেছেন, জোর করে নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জোরালো দাবি পরিবারের তরফে করা হয়েছিল। তা সত্বেও কোন দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হল? প্রশ্ন করা হয়েছে সেদিন সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরায় হাসপাতালের ওই ফ্লোরে ৬৮ জনের যাতায়াত দেখা গেছে। সিসিটিভি দেখে এঁদের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কীনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন তড়িঘড়ি সেমিনার রুমের লাগোয়া অংশ ভাঙা হচ্ছিল।
এই মামলা চলাকালীন সময়ে নির্যাতিতার পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনছে। পরিবারের আশা তদন্তে গতি আনতে এবং প্রকৃত তদন্ত হওয়ার জন্য এই মামলা ফের কলকাতা হাইকোর্টে ফিরে আসবে। শিয়ালদহ আদালতে সাক্ষ্যদান পর্ব শেষ হতেই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়রের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়েছে।
সিবিআই তরফে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় বায়োলজিক্যাল এভিডেন্সের যাবতীয় নথি পেশ করা হয়েছে। এই মামলায় দিল্লির এমইসের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আদর্ষ কুমারের নেতৃত্বে ১২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বোর্ডের কাছে এই এভিডেন্সের যাবতীয় নথি পাঠানো হয়েছিল। পরে সেই বোর্ডে আরও দু’জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করা হয়েছিল। মোট ১৪ জন বিশেষজ্ঞ এই বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা মতামত দিয়েছেন এই নমুনার পরীক্ষার আরও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে হয়েছে। এই মামলায় সিবিআই’র তরফে এখনও পর্যন্ত দায়ের করা একমাত্র চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নামই ছিল। ধৃত সিভিকের সাক্ষ্য গ্রহণও রুদ্ধদ্বার কক্ষে হয়েছে। এরপর এদিন সিবিআই’র তরফে শিয়ালদহ আদালতে সাক্ষ্যদান পর্ব শেষ হতেই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়রের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় জানা গেছে আদালতে সিবিআই তার দাবি স্বপক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে জানিয়েছে এমআইএমবি অর্থাৎ ‘মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ড’ও নাকি এই ঘটনা একজনের পক্ষে করা সম্ভব বলে রিপোর্ট দিয়েছে।
আর এখানেই তৈরি হয়েছে সন্দেহ, একাধিক প্রশ্ন। সেই উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডের কাছেই নয়দফা প্রশ্ন রেখেছিল সিবিআই। তাতে ৩ নম্বর প্রশ্নটি ছিল- ‘ঘটনাটি কী একজনের পক্ষে সম্ভব?’ এমআইএমবি’র তরফে উত্তরে বলা হয়েছে- ‘আর জি করের নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসকের মুখে, ঘাড়ে এবং যোনিতে যে ধরনের, যে মাত্রায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তা এক জনের পক্ষেও করা সম্ভব- এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না’। মেডিক্যাল সায়েন্সে এমন ঘটনা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব! এই সম্ভাবনাকে স্বাভাবিক ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে প্রশ্ন যদি করা হতো এই ঘটনাটি একাধিকজনের পক্ষে করা সম্ভব? তাহলে কী উত্তর আসতো? তাহলে কী কাঙ্খিত উত্তর পেতেই প্রশ্নমালা সাজানো হয়েছিল নির্দিষ্ট কোন অভিমুখে? গুরুতর সন্দেহ তৈরি হচ্ছে আর জি করের তদন্তে সিবিআই-র ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে জনমানসেও।
RG Kar rape and murder case
নতুন করে আর জি কর কান্ডের তদন্তের আবেদন
×
Comments :0