Trump

ট্রাম্পের খোলস বদল

সম্পাদকীয় বিভাগ

কয়েকদিন আগে আক্ষেপ করে বলেছিলেন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির  জন্য এতো ভা‍লো ভালো কাজ করলেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ‍‌‍‌বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাঁর এই দুঃখে সমব্যথী হয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে তারা নোবেল কমিটির কাছে এই মর্মে প্রস্তাব পাঠাবে। সেই ‘শান্তির দূত’ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ খোলস ছেড়ে মৃত্যুর ও ধ্বংসের দূত রূপে  আবির্ভূত হয়েছেন। এই সেদিনও যার মুখে অনর্গল  শোনা যেত সামরিক সংঘাত ও যুদ্ধ বন্ধের হিতোপদেশ আচমকা সেই তিনিই রণং দেহি যুদ্ধবাজ রূপে ঝাঁপিয়ে  পড়লেন ইরানের বিরুদ্ধে।
ইরানের প‍‌রমাণু গবেষণা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছিল একটা চুক্তির লক্ষ্যে। দু’দফা আলোচনার পর তৃতীয় দফার আলোচনা শুরুর দু’দিন আগে আচমকা ইরানে মিসাইল, ড্রোন ও বোমা  হামলা শুরু করে দেয় ইজরায়েল। আর তা‍‌তে রীতিমতো খুশি হয়ে ইজরায়েলের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। ট্রা‍ম্পের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করেই  ইজরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ পরমাণু  বিজ্ঞানী ও সামরিক আধিকারিকদের নিশানা করে খুন করে। যে ট্রাম্প এতোদিন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর পক্ষে কথা বলে এসেছেন ইরানের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে দিতে ইজরায়েলকে হামলা চালানোর  অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পের  কথায় ও কাজে কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ২০ জুন তিনি জানান আমেরিকা ইরানে সামরিক হামলা চালাবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে দু’সপ্তাহ সময় লাগবে। অর্থাৎ ৪ জুলাইয়ের আগে আমেরিকা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। অথচ বাস্তবে দেখা গেল একদিন কাটতে না কাটতেই শতাধিক জঙ্গি বিমান নিয়ে ১৪টি বাঙ্কার বাস্টার, ৭৫টি মিসাইল অন্যান্য বোমা বর্ষণ করে খুশিতে ডগমগ হয়ে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে দিলেন। ঘোষণা করলেন  ইরানের পরমাণু বোমার যাবতীয় আয়োজন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় গত বছর বার বার ট্রাম্প নিজেকে শান্তির যু‍‌গের রাষ্ট্রপতি হিসাবে জাহির করেছেন। বলেছেন তিনি চান না আমেরিকা নতুন  কোনও যুদ্ধে জড়াক। যুদ্ধখাতে খরচও কমাতে চান। এটাও বলেছিলেন ক্ষমতায় এলেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একদিনও সময় লাগবে না।  গাজায় ইজরায়েল যুদ্ধ থামানো এক ঘণ্টার  মামলা। ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর পাঁচ মাস কেটে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে তিনি পারেননি। বন্ধ হয়নি ইজরায়ে‍‌লের গণহত্যা। উলটে তিনি গাজায় গণহত্যায় ইজরায়েলকে সব দিক থেকে মদত দিয়ে যাচ্ছেন। ইরান আক্রমণেও বাধা দেবার বদলে উৎসাহ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজেই সরাসরি আমেরিকাকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছেন।
যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তে। সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা উদার গণতন্ত্রের খোলসে থাকুক বা অতি দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল খোলসে থাকুক চরিত্র তাদের বদলায় না। ক্লিন্টন হোন বা জর্জ বুশ, বাইডেন বা ট্রাম্প সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও শোষণ-লুণ্ঠনে সকলে এক।
 

Comments :0

Login to leave a comment