বারাকপুরে গয়নার দোকানে দুষ্কৃতীদের গুলিতে হত্যার ঘটনায় শুক্রবার দু’জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃত দুই ব্যক্তির নাম সফি খান এবং জামশেদ আনসারি। বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সফি খানকে রহড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বীরভূমের মুরারই থেকে। নিহত নীলাদ্রি সিংহের পরিবারের পক্ষ থেকে ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
ঘটনা ঘিরে পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। গত বুধবার ঘটনার প্রায় ৪৫ ঘন্টা পর বারাকপুর ওল্ড কলকাতা রোডের এই দোকানে এসেছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দল। ফরেনসিক দলের প্রতিনিধিরা সাটার খুলে দোকানের ভিতরে ঢুকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। ডাকাতির বিভিন্ন তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক দল। সাংবাদিক বৈঠকে বারাকপুরের ডিসি সেন্ট্রাল আশিস মৌর্য জানিয়েছেন, ঘটনায় আরও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বুধবার ভরসন্ধ্যায় ৪জন দুষ্কৃতী বাইকে চেপে এসে জুয়েলারি দোকানে ঢোকে। তাদের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। সোনার গহনা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে চম্পট দেওয়ার সময়ে বাধা দেন মালিকের ছেলে নীলাদ্রি সিংহ। তখনই দুষ্কৃতীরা ৪ রাউন্ড গুলি চালায়। সেই গুলিতে প্রাণ হারান নীলাদ্রি সিংহ। সে সময়ে বাবা মানিক সিংহ (যিনি দোকানের মালিক) ও এক কর্মচারীর পায়ে গুলি লাগে। নিছকই ডাকাতির উদ্দেশ্য ছিল না কি এই খুনের পেছনে অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
বৃহস্পতিবার সিংহ জুয়েলারি সোনার দোকানের মালিকের বাড়িতে যান প্রাক্তন সাংসদ সিপিআই(এম) নেতা তড়িৎ তোপদার, গার্গী চ্যাটার্জি, তমাল চক্রবর্তী সহ অন্যান্য পার্টি নেতৃত্ব। শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার বলেন, এই ঘটনা ভয়াবহ, অভাবনীয়। এটা বারাকপুরে কল্পনার অতীত। পুলিশের দক্ষতা নেমে গেছে। কারণ, শাসকদল পুলিশ বিরোধীদের দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে। আর শাসকদলের ভয়ে টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য ডিসি সেন্ট্রাল অশোক মৌর্য ও ডিসি ডিডি শ্রীহরি পান্ডের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
তদন্তকারী দল সিংহ জুয়েলারি দোকানের ওপরে বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। জানা গেছে, বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়েও একটা সমস্যা চলছিল মালিকের, মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেই ঘটনার সাথে এই খুনের ঘটনার কোনও যোগসূত্র আছে কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে বারাকপুরে বিজেপি’র টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাংসদ অর্জুন সিং এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন। দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায় এলাকায় জুট মিল বন্ধ হওয়ার কারণে বারাকপুর এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সৌগত রায়ের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ এলাকার আইন শৃঙ্খলা এবং শান্তি বজায় রাখতে।
Comments :0