কয়লা খনন হবে না। হবে ব্যাসল্ট পাথর তোলার কারবার। আড়ালে রয়েছে আন্তঃরাজ্য বালি কারবারের বড় চক্র। প্রতারণা, মিথ্যাচার, হুমকি দিয়ে ডেউচা পাচামীকে দখল এই চক্রের হাতে প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দেওয়ার জন্য।
ডেউচা পাচামীর প্রতিরোধী জনতার সংহতিতে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কনভেনশনে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়েছে জগন্নাথ টুডুর মতো স্থানীয়েরা। জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা ভয়াবহ। মিড ডে মিলে কেবল কচুসেদ্ধ ভাতও খাওয়ানো হয়েছে শিশুদের। অঙ্গলনওয়াড়ি কেন্দ্র বেহাল। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই, বরং চারদিক ঘিরে রাখা হয়েছে ক্র্যাশারে।
বুধবার কলকাতার মৌলালি যুবকেন্দ্রে ডেউচা পাচামীতে প্রতারণার খনি প্রকল্প বিরোধী সংহতি কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন সেলিম সহ দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন অংশের নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্য রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদারও। সারা ভারত দলিত শোষণ মুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম কনভেনশনের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন। সভা সঞ্চালনা করেন ডেউচা পাচামী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও কংগ্রেস নেতা প্রসেনজিৎ বসু।
কনভেনশনে ৬ দফা দাবি গৃহীত হয়েছে। ডেউচা পাচামীতে একশো দিনের কাজ এখনই চালু করার প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। কনভেনশনে ঠিক হয়েছে ১৫ নভেম্বর, বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে ডেউচা পাচামী জুড়ে কর্মসূচি হবে। সংহতি কনভেনশনে গৃহীত দাবি, কয়লাখনি প্রকল্পের নামে ব্যাসল্ট খনন, জমি অধিগ্রহণ এবং পুলিশ-প্রশাসন ও শাসকদলের দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে বেআইনি খনন, দুর্নীতি ও খনির বরাত হাতবদল নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। আদিবাসী ও স্থানীয় মানুষের সম্মতি ছাড়া কোনও প্রকল্প করা যাবে না।
উল্লেখ্য, আইনে গ্রামসভার সম্মতির কথা বলা হলেও এমন কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি ডেউচা-পাচামীতে। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি এড়াতে মাত্র ১২ একরে পাইলট প্রকল্প দেখানো হচ্ছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারিতে শিল্প সম্মেলন করে ১ লক্ষ চাকরি, কয়লা খনির মাধ্যমে একশো বছরের জ্বালানি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ফলে কনভেনশনে দাবি, প্রকল্প ঠিক কী তা ব্যাখ্যা করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। স্থানীয় এলাকায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং কৃষি ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের মতো সার্বিক উদ্যোগ নিতে হবে। ডেউচা পাচামী যে এলাকায় সেই মহম্মদ বাজারে পাথর খাদন থেকে বহু শ্রমিক সিলিলোসিসে আক্রান্ত। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সরকারি উদ্যোগের দাবি জানানো হয়েছে কনভেনশনে।
সেলিম বলেন, স্থানীয় মানুষের বিপুল অংশ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলন প্রধানত আক্রান্ত স্থানীয় মানুষেরই লড়াই। তাঁদের মুখ বন্ধ রাখতে দমন চালানো হচ্ছে। তাঁরা যতটা চাইবেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে ঠিক ততটাই যাবে সিপিআই(এম)। আবার তাঁদের প্রত্যাশা থেকে পিছিয়ে থাকবে না পার্টি।
সেলিম বলেন, লুট করতে ঝুট চালানো হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলায় রাজ্য সরকারের মিথ্যা বেরিয়ে আসছে। আর চলছে আদিবাসী-মুসলিম, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক- স্থানীয়-বহিরাগত এমন বিষয় তুলে এনে বিভাজনের চেষ্টা। রাজ্যের বিপুল অংশের কাছেই স্পষ্ট নয় কেন ডেউচা-পাচামীতে প্রতারণার কথা বলা হচ্ছে। তাঁদের কাছে এই বক্তব্য স্পষ্ট করতে হবে কনভেনশনে অংশ নেওয়া সব অংশকে।
অভিজিৎ মজুমদার বলেন যে পশ্চিমবঙ্গে জমির লুট বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গে কর্পোরেট মুনাফার জন্য চা বাগানের জমি ‘ফ্রি হোল্ড’ করা হয়েছে। পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। তার ভয়াবহ ফল আমরা দেখছি। এই প্রতারণা সর্বত্রগামী। তিনি বলেন, পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার সামগ্রিক আন্দোলনের বিচারে ডেউচা পাচামীর লড়াইকে বিবেচনা করতে হবে। প্রতিরোধ গড়তে হবে।
সারা ভারত খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী ইউনিয়নের নেত্রী বন্যা টুডু হুগলীতে আদিবাসী এলাকায় জমি দখলের চেষ্টা এবং প্রতরোধের সাফল্য ব্যাখ্যা করেন। বক্তব্য রাখেন টিইউসিআই নেতা এবং ভাঙড়ে জমি রক্ষা আন্দোলনের অলীক চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির নেত্রী অনুরাধা তলোয়ারও।
মঞ্চে ছিলেন সারা ভারত দলিত শোষণ মুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, সিআইটিইু রাজ্য সম্পাদক জিয়াউল আলম, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে, পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সম্পাদক অলকেশ দাশ, আইনজীবী আন্দোলনের নেতা শামিম আহমেদও।
DEUCHA SANHATI CONVENTION
প্রতারণার মুখোশ ছেঁড়ার ডাক ডেউচা পাচামী সংহতি কনভেনশনে
বুধবার মৌলালিতে সংহতি কনভেনশনে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম। মঞ্চে আন্দোলনে যুক্ত সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ।
×
Comments :0