শিবপুরে দাঙ্গার চক্রান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রী আগে জানতেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুক্রবার তা স্বীকার করেছেন।
এদিন দুপুরে একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলে বৃহস্পতিবার শিবপুরে যে হামলা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্প্রচারিত হয়েছে। সেখানে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘আমি মনে করি এই প্ল্যানিংটা বিজেপি করেছে এক মাস আগে থেকে। তার খবর আমাদের কাছে আছে।’’
তবু হাঙ্গামা হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী ধরনা দিয়েছিলেন বুধবার এবং বৃহস্পতিবার। বুধবার ভাষণের মাঝে আচমকাই তিনি বলেছিলেন,‘‘বিজেপি’র গুন্ডারা...একজন গুন্ডা বলছেন টিভিতে যা অস্ত্র পাবো নিয়ে বের হবো, দেখি কী করতে পারে? যা অস্ত্র তুই পারিস নিয়ে যা। রামনবমীর মিছিল আটকাবো না। মিছিল আমরাও করব। তোমরাও করবে।’’
অস্ত্র নিয়ে যাবে ‘গুন্ডারা’, মুখ্যমন্ত্রী জানতেন। বলেছিলেন,‘‘যা অস্ত্র তুই পারিস নিয়ে যা।’’ কিন্তু হাঙ্গামা আটকাতে পারলেন না। শুধু তুই তোকারি করে ফাঁকা আওয়াজ দিলেন। কেন?
শিবপুরেই যে হাঙ্গামা হবে, তার ইঙ্গিত ছিল। যে রাস্তায় হাঙ্গামা হয়েছে, সেখানেই হবে। তারও আভাস ছিল। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর চ্যানেল-বার্তার পরে তাও যেন স্পষ্ট।
মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘আমি বারবার বলে দিয়েছিলাম যে ওই রুটে যেন মিছিল না ঢোকে। তা সত্ত্বেও ক্রিমিনালরা বন্দুক, পেট্রোল বোম, আরও কিছু, বুলডোজারসহ নানারকম জিনিস নিয়ে তারা ঢুকেছিল।’’
রাজ্যে অনেকগুলি জায়গায় বৃহস্পতিবার অস্ত্র হাতে, তীব্র আস্ফালন করতে করতে হিন্দুত্ববাদীরা মিছিল করেছে। সেই মিছিলে তৃণমূলও ছিল। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে শিবপুরে হিন্দুত্ববাদীরা কোন রুটে যাবে তা মুখ্যমন্ত্রী জানতেন!
হিন্দুত্ববাদীদের হাঙ্গামা ঠেকাতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে। দোষ নির্দিষ্টভাবে কার?
মুখ্যমন্ত্রী এদিন একবার বলেছেন,‘‘এই জায়গায় (অর্থাৎ শিবপুরে) অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা আছে। আমি স্বীকার করি।’’
পরে বলেছেন,‘‘কালকে যে পুলিশরা ফেল করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি অ্যাকশান হবে।’’
তাহলে দায়ী পুলিশের একাংশের ব্যর্থতা। কিন্তু ওই প্রতিক্রিয়ারই আর এক জায়গায় মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘পুলিশ অনুমতি দেয়নি (ওই রুটে রামবনমীর শোভাযাত্রা করার।) নম্বর ওয়ান। এটাই আমাকে জানানো হয়েছে। যখন গাদা গাদা লোক ঢুকে গেছে, তখন পুলিশ যদি ফায়ার করত, তখন গুলি যে কারও মাথায় লাগতে পারত। সুতরাং কিল খেয়েও কিল হজম করতে হয়েছে। তার আগে উচিত ছিল ব্যারিকেড করে পুরো এলাকাটা ঘিরে রাখা।’’
আর কী বললেন পুলিশমন্ত্রী? বলেছেন,‘‘আমরা পুলিশ প্রোটেকশান রেখেছিলাম। যাতে কাউকে মারতে না পারে। অন্তত প্রাণে কেউ মারা যায়নি এটা আমার কাছে অনেক আশীর্বাদ, দোয়া বলতে পারেন।’’
তাহলে কী দাঁড়ালো? যে রুটে রামনবমীর নামে হুঙ্কারের অনুমতিই ছিল না, সেই পথে পুলিশ প্রোটেকশান ছিল? কেন? কে জানত ওই রুটেই হিন্দুত্ববাদীরা ঢুকবেই?
মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছেন যে, তিনি জানতেন রুটটির কথা। দাবি করেছেন যে, তিনি নিষেধ করেছিলেন যাতে ওই রুটে যাতে শোভাযাত্রা না ঢোকে। আবার তিনিই বলছেন, ‘তার আগে উচিত ছিল ব্যারিকেড করে পুরো এলাকাটা ঘিরে রাখা।’’ রুটটি সম্পর্কে সাবধান করার সময় এই পরামর্শটি তিনি দেননি কেন?
আবার কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? বলেছেন,‘‘পুলিশের কিছুটা শৈথিল্য নিশ্চয়ই হয়েছে।’’ তারপর বললেন,‘‘কেউ কেউ ভয় পেয়ে গেছে। ওরা ভয় দেখায় সিবিআই, ইডি করে দেব। আমি ভীরু অফিসার, ভীরু পুলিশ, সব জায়গাতেই এমন আছে, তারা আন্ডারস্ট্যাডিং করে চলে। এদের আমরা রেয়াত করব না। আমি যদি ভুল করি আপনারা আমাকেও রেয়াত করবেন না।’’
রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির কড়া হাতে চলা সরকারে পুলিশের একাংশ সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ করে বসে আছে! তাহলে মমতা ব্যানার্জি করছেন কী?
Comments :0