পঞ্চায়েতগুলিতে চুরি করেছে তৃণমূল। তার খেসারত দিতে হচ্ছে রাজ্যকে। রেগায় কাজ বন্ধ রাজ্যে। কাজ পাচ্ছেন না রাজ্যের গ্রামবাসীরা। ক্ষতি সেই গ্রামের গরিবেরই।
একই কারণে মজুরি বাকি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার। তার মধ্যে ‘জল’ আছে তৃণমূলের মেশানো। কিন্তু অনেকে বঞ্চিত, তাও সত্যি। এই ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের গরিব। রেগার টাকা লুট করে ঘরে বসে আছে তৃণমূলের নেতারা।
কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় একবছর রেগা প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে না রাজ্যকে। অভিযোগ অনিয়ম। দেদার দুর্নীতি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের এই রেগার টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ অনেক দিন আগে থেকে বামপন্থীরা করেছে। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর দলের এই লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু বিজেপি কিছুই করেনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার বরং চুপ করেছিল। কানেই তোলেনি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীরবতার সুযোগ নিয়েই দেদার চুরি চালিয়ে গিয়েছে তৃণমূল।
পশ্চিমবঙ্গের শ্রম বাজেট এখনও অনুমোদিতই হয়নি। ২০০৬-এ রেগা শুরু। কিন্তু এমন হাল গত ১৫ বছরে হয়নি। এবার পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া সব রাজ্যেরই শ্রম বাজেট অনুমোদিত হয়ে গিয়েছে। সাধারণত প্রতিবছর এপ্রিলে শ্রম বাজেট চূড়ান্ত হয় প্রতিটি রাজ্যে। এবারও অন্যান্য রাজ্যের শ্রম বাজেট চূড়ান্ত হয়েছে। অনুমোদিতও হয়েছে। এই লেবার বাজেটই রাজ্যগুলিতে রেগার কাজের ভিত্তি। তার ভিত্তিতে প্রতি মাসে কত কাজ হবে, কত টাকা মিলবে— তা ঠিক হয় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। তার ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ব্লকগুলির জন্য নির্ধারিত করে দেয় কাজ, টাকা। এই বছর রাজ্যে কোনও ব্লকে এই মাসভিত্তিক কাজ, শ্রমদিবসের হিসাব নির্দিষ্ট হয়নি।
গ্রামাঞ্চলের পদযাত্রায় তাই দাবি উঠেছে— একশো দিনের প্রকল্প একশো দিনের প্রকল্পের মজুরির বকেয়া টাকা চাই। বন্ধ একশো দিনের প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে চালু করতে হবে।
দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। দাবি রাজ্য সরকারের কাছে। এই দাবিতে পদযাত্রায় সোচ্চার গ্রাম।
এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পদযাত্রা হয়েছে। যেমন তেহট্টে। সেখানে পদযাত্রায় অংশ নেন সিপিআই(এম) নেতা সুমিত দে। বাদকুল্লা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন গোরুয়াপোতা ঘাটের ধার পাড়া ময়দান থেকে এদিনের পদযাত্রাটি শুরু হয়। এদিনের পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার রাজ্য কমিটির সদস্য সুপ্রতীপ রায়। উদ্বোধনী সভায় বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ নেতা মিলন শিকদার। পদযাত্রাটি ৮ কিমি পথ ও ৮টি বুথ পরিক্রমা করে। পদযাত্রার শেষে মণ্ডপঘাট গ্রামে সমাপ্তি সভায় বক্তব্য কৃষক নেতা মহানন্দ সরকার, ষষ্ঠী বিশ্বাস। এই পদযাত্রায় ২৫২জন পা মেলান। এদিন বগুলা-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি বুথ এলাকায় হয়েছে পদযাত্রা। কানাইনগর পঞ্চায়েতের বলরামপুর থেকে বিনোদনগর, শ্রীরামপুর থেকে কাঞ্চনতলা— ১০টি বুথ এলাকায় পদযাত্রা হয়। পদযাত্রা হয় করিমপুর-২ ব্লকের নতিডাঙা পঞ্চায়েত, নতিডাঙা-২, থানারপাড়া পঞ্চায়েতেও পদযাত্রা হয়েছে। মদনপুর-১ পঞ্চায়েতের ছটা বুথে পথ পরিক্রমা করেছে পদযাত্রা।
মালদহের চাঁচল-১ ব্লকের চাঁচল পঞ্চায়েতের রানীকামাত, নৌগাছিয়া এলাকার ৬টি বুথে পদযাত্রা হয়। প্রায় ৬ কিমি এই পদযাত্রায় ছিলেন খেতমজুররা। ছিলেন কৃষক, শ্রমিকরা। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিতে যেমন সোচ্চার হয়েছেন, তেমনই বকেয়া মজুরির দাবিতেও সোচ্চার হয়েছেন পদযাত্রীরা।
পূর্ব বর্ধমানের সন্ত্রাস কবলিত কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে ‘কমরেড মইদুল ইসলাম মিদ্দা জাঠা’ সংগঠিত হয়। এই জাঠা কুসুমগ্রাম থেকে শুরু করে দীর্ঘনগর, কুলুপ, সফরদা, আকবরনগর এবং কুসুমগ্রামের ৭টি বুথ পরিক্রমা করে এবং পদযাত্রা চলাকালীন বিভিন্ন গ্রামে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রী ও বক্তা হিসাবে এই জাঠায় উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষকসভা, পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সমর ঘোষ, গণআন্দোলনের ব্লক নেতৃত্ব ওসমান গনি সরকার, সিআইটিইউ নেতা রুবেন রায়, ফাল্গুনী রায় প্রমুখ। এদিন নিগন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নিগন গ্রাম থেকে মুসারু গ্রাম, পলসোনা গ্রাম, ছোট পোষলা গ্রাম হয়ে সাওতা বাসস্ট্যান্ডে মঙ্গলকোট ব্লক গণসংগঠন সমূহের উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হলো। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের দেউলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাঁকি শ্রীরামপুর সিংবন্তী সহ দুবড়া ও পাড়াতে, নিতুরিয়া ব্লকের ভামুরিয়া, পুঞ্চা ব্লকের পিঁড়রা ও পুঞ্চা, পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের ভাঙ্গরা, বান্দোয়ান, সাঁতুড়ি ব্লকের গড়শিকা এবং বাঘমুণ্ডীতে পদযাত্রা হয়। এদিন জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা সহ বিভিন্ন জায়গায় এদিন পদযাত্রা হয়েছে।
Comments :0