দীপশুভ্র সান্যাল(জলপাইগুড়ি) অনিন্দিতা দত্ত (শিলিগুড়ি)
প্রতিদিনই প্রতিটি অঞ্চলে বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা নিবিড় প্রচার চালাচ্ছেন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রাথী দেবরাজ বর্মনের সমর্থনে। শনিবার সাত সকালে পৌঁছে গেলেন রায়পুর পেরিয়ে পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতেরই আরেক চা বাগান জয়পুরে। চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার আগে চা শ্রমিকদের দেখা করে চা বাগান বাঁচাতে বামফ্রন্ট মনোনীত কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন প্রার্থী দেবরাজ বর্মন। ছিলেন সিআইটিইউ’র নেতৃবৃন্দ এবং সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র। এদিন ঘুরে ঘুরে শ্রমিকদের অভাব অভিযোগ শোনেন প্রার্থী সহ নেতৃবৃন্দ। বাগানের চা শ্রমিক কল্যাণী মিনজ, রসুন এক্কা, অবিনাস বাকলা, প্রফুল লাকড়া, অবিনাশ দাসরা অভিযোগ করেন, ‘‘চা বাগানে শাসক দলের মদতে তৈরি হয়েছে দালাল চক্র। সেই অংশের শ্রমিকরা মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করে শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্যের ভাঙ্গন ধরাতে চাইছে। সাপ্তাহিক মজুরি পাঁচ সাত সাপ্তাহের বকেয়া থাকার পর হয়তো মিলছে এক সপ্তাহের। বাগান মজদুর ইউনিয়নের তরফে বারবার শ্রম দপ্তরের জানানো হলেও কোন কাজ হয়নি অথচ ম্যানেজমেন্টের হয়ে কাজ করা ওই অংশের শ্রমিকরা কখনো কখনো কাজ না করে দ্বিগুণ তিন গুন মজুরি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ’’।
প্রচারে সায়ানদীপ মিত্র বলেন, কাস্তে হাতুড়ি তারা শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের প্রতীক। দীর্ঘদিন এই আসনে জয়যুক্ত হয়েছে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। ২০১৪ সাল থেকে এই আসনে প্রথমে তৃণমূল ২০১৯ সালে জয়যুক্ত হয় বিজেপি। এরা শ্রমিকদের কথা শোনে না, কানে তোলেনা শ্রমিক ইউনিয়নের বক্তব্য। শ্রমিকদের লড়াইয়ের আওয়াজ তাদের দাবিকে সংসদে পৌঁছে দিতে বামফ্রন্ট মনোনীত কংগ্রেস সমর্থিত দেবরাজ বর্মনকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী না পাঠনোর পরিপেক্ষিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এদিন সায়নদীপ মিত্র বিজেপি-তৃণমূল সেটংএর প্রসঙ্গের কথা মনে করিয়ে বলেন,
ঘোষণা আর কাজের মধ্যে ফারাক থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় ভোটে লড়ছি না। জনগণের ভরসায় লড়ছি। এবারের ভোটে তৃণমূল বুথ লুটতে এলে আসবে নিজেদের ইচ্ছায় যাবে জনগণের ইচ্ছায়। শ্রমিকদের অধিকারের লড়াইকে প্রতিষ্ঠিত করতে বামফ্রন্টকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান প্রার্থী দেবরাজ বর্মন।
চা বাগানের প্রচার সেরে প্রার্থী পৌঁছান ডাবগ্রাম ফুলবাড়ী বিধানসভা এলাকায় প্রচারে। সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছেন প্রার্থী নিজেই। জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি বলয় এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারের পাশাপাশি চা বাগানগুলিতেও বামফ্রন্টের প্রার্থীর সমর্থনে জোরালো প্রচার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকার সংযোজিত ওয়ার্ডগুলিতেও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত ও জাতীয় কংগ্রেস সমর্থিত প্রাথী দেবরাজ বর্মনের সমর্থনে নিয়মিত প্রচার চলছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্বের কথা তুলে ধরে মানুষের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বামফ্রন্ট প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নেমেছেন বামফ্রন্টের কর্মীরা। দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি লাল পতাকায় সুসজ্জিত হয়েছে গোটা এলাকা। বিপুল ভোটে দেবরাজ বর্মনকে জয়ী করার আহ্বান জানানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।
শনিবার সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ির ৪০ নম্বর ওয়ার্ড প্রধান মোড়ের সামনে থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। প্রার্থী দেবরাজ বর্মন নিজেও উপস্থিত। প্রায় দুই ঘন্টা সময় ধরে চললো এলাকায় নিবিড় প্রচার। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দারপাড়া বাজার হয়ে স্বামীজি মোড়ে এসে পদযাত্রার সমাপ্তি হয়। পদযাত্রা চলাকালীন কেউ এগিয়ে এসে প্রার্থীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, আবার কেউ হাত ধরে কাছে টেনে নিয়েছেন। আবার চায়ের দোকান সহ কিছু মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন প্রার্থী নিজেও। প্রার্থী বললেন, আপ্লুত আমি।
এদিনের পদযাত্রায় পা মিলিয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। গৃহস্থ্যের কাজকর্ম সেরে মহিলারাও উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থীর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, দিলীপ সিং, গনেশ ঘোষ, দীপঙ্কর সাহা প্রমুখ।
ক্লান্তিহীন প্রচার। এদিন বিকেলে অনুরূপ এক পদযাত্রায় বিকেলে পা মিলিয়েছেন জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী। প্রায় চারটা নাগাদ শিলিগুড়ি ৩৬নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর বৌবাজার এলাকার বিনয় মোড় থেকে প্রার্থীকে সামনে রেখে পদযাত্রা শুরু হয়ে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোঘোমালি মেইন রোড ধরে ৩৮নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লীতে শেষ হয়। পদযাত্রাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ছিলো সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বন্ধ রায়পুর চা বাগান কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল বাগান খোলার কথা বললেও কাজ হয়নি। বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা তুলে বিক্রি করে কোনক্রমে সংসার চালাচ্ছেন। অপুষ্টিজনিত অসুখে ভুগছে বহু চা শ্রমিক পরিবার। সংবাদ শিরোনামে রায়পুর চা বাগানের কথা উঠে আসলেও কোনভাবেই বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের কান্না পৌঁছায়নি কেন্দ্র রাজ্য দুই শাসকদলের কানে। এদিন বাগান শ্রমিকদের বক্তব্যে উঠে এলো তাদের অভাব অভিযোগের কথা নিয়ে সংসদে সোচ্চার হোক শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের প্রতীক।
Comments :0