বইকথা — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
অপুর কথা : বিস্তীর্ণ শৈশবের অপূর্ব আলাপন
সৌরভ দত্ত
পথের পাঁচালীর গল্প আর অপরাজিতার গান।দুটি নষ্টালজিক গ্রন্থ ।শৈশবের অপুকে কেন্দ্র কিশোরদের উপযোগী একটি একত্র গ্রন্থ অপুর কথা। বিভূতিভূষণ এর বাঙ্ময় ভাষায় অনবদ্য আখ্যান রচিত হয়েছে নিশ্চিন্দিপুরের পথে ঘাটে।বাইশটি পরিচ্ছেদে সন্নিবিষ্ট বইটি। বইটির প্রকাশক–কামিনী প্রকাশন। অসামান্য দক্ষতায় প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন সত্য চক্রবর্তী। বইটির ভূমিকা লিখেছেন–তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সূচনায় রয়েছে–“নিশ্চিন্দিপুরের গ্রামের একেবারে উত্তর প্রান্তে হরিহর রায়ের কোঠাবাড়ি ”।গ্রাম বাংলার ফেলে আসা সময়ের অদ্ভুত কিছু মায়াবী দৃশ্যপট রচিত হয়েছে বিভূতিভূষণের কলমে–“হরিহরের দূর সম্পর্কীয় দিদি ইন্দির ঠাকরুণ সকালবেলায় ঘরের দাওয়ায় বসিয়া চালভাজার খুঁজা জলখাবার খাইতেছে।”হরিহরের ছোট্ট মেয়েটাকে সে চোখের আড়াল করতে পারে না। সন্ধ্যায় সর্বজয়ার কন্যা মগ্ণ হয়ে একমনে পিসিমার মুখে রূপকথা শোনে।লেখক বলেছেন হরিহর রায়ের আদি বাসস্থান যশড়া-বিষ্ণুপুরের প্রাচীন ধনী বংশ চৌধুরীরা নিষ্কর ভূমিদান করিয়া যে কয়েকঘর ব্রাহ্মণকে সেকালে গ্রামে বাস করাইয়াছিলেন, হরিহরের পূর্বপুরুষ বিষ্ণুরাম রায় তাহাদের মধ্যে একজন। তখন ও দেশে ব্রিটিশ শাসন আসেনি।মন কেমন করা অদ্ভুত অদ্ভুত বর্ণনা আছে বইটিতে-“জ্যোৎস্না উঠিয়াছিল। নোনা গাঙের জল চকচক করিতেছিল।হু হু হাওয়ায় চরের কাশফুলের রাশি , আকাশ, জ্যোৎস্না, মোহনার জল একাকার করিয়া পড়িতেছিল।”মহাভারতের যুদ্ধের অনুষঙ্গ এসে পড়েছে বর্ণনাক্রমে–“গ্রীষ্মকালের দিনটা বৈশাখের মাঝামাঝি।নীলমণি রায়ের ভিটার দিকে জঙ্গলের ধারে সেদিন দুপুরের কিছু পূর্বে দ্রোণগুরু বিপদে পড়িয়াছেন–কপিধ্বজ রথ একেবারে তাঁহার ঘাড়ের উপরে”। “ইছামতী ছিল পাড়াগাঁয়ের গরীব ঘরের মা।তার তীরের আকাশে-বাতাসে সঙ্গীত মায়ের মুখের ঘুমপাড়ানি গানের মত শত স্নেহে তার নবমুকুলিত কচি মনকে মানুষ করিয়া তুলিয়া ছিল,” ‘অপুর কথা’ নামক সমগ্র বইয়ে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম-বন-জঙ্গল-নদী-পাখ-পাখালির ছন্দময় বিভা ফুটে উঠেছে।
বইয়ের নাম: অপুর কথা
প্রকাশক:কামিনী প্রকাশনী
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সত্য চক্রবর্তী
Comments :0