যে মাটির সংস্কৃতি, যে কৃষকের ফসল, যে মানুষের মেহনত লুট করে তৈরি হয় ভোগের জোতের শীতপ্রাসাদ, তার বিরুদ্ধস্বর চিরন্তন হয়ে গিয়েছে যার গানে- কবিতায়- নাটকে তিনিই অপরাজেয় সলিল চৌধুরী।
সলিল চৌধুরীর স্মৃতি মানে আকাশকুসুম কল্পনা নয়, নয় কোনও খেয়ালমাফিক আলেয়ার হাতছানি। তাঁর গান মানে প্রান্তরের শঙ্খধ্বনি, কবিতার গভীরে গাণ্ডীবের উচ্চারণ, নাটকে থাকে আলোর পরশ। জনজাগরণ এবং জনসমাদরের ভারতব্যাপী আলোড়ন। চলচ্চিত্র-নাটক-পথমিছিল সর্বত্রই তাঁর অবাধ সংলাপ সুরের মূর্চ্ছনা-প্রেম-বিরহ-শোক সবকিছুর সাথে ভাত কাপড়ের লড়াইয়ের এক অপূর্ব আলাপন।
১৯ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন। এদিন মহানগর কলকাতার আকাদেমী অব্ ফাইন আর্টসের পাশের রানুচ্ছায়া খোলা মঞ্চে হবে ‘আহ্বান শোনো আহ্বান’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত সলিল সঙ্গীতের দিনযাপন। আয়োজক গণনাট্য সংঘ কলকাতা জেলা। গণসংগীত সংগ্রহ, সাঁকো, ধ্রুবক সমেত আরো বহু সংগঠন। বহুস্বরের কাল চেতনার স্পর্ধায় স্পন্দিত হবে আসন্ন সলিল চৌধুরী জন্মশতবর্ষের প্রারম্ভকালে।
আজ যখন একদিকে বাজারসর্বস্ব বিনোদনের কৃত্রিম মাদকতায় বিভোর হয়ে থাকে স্মার্টফোন,ল্যাপটপের ডিজিটাল স্ক্রিন, অন্যদিকে বুভুক্ষু স্বদেশ দুঃস্বপ্নের রাত কাটায় তিহার জেলে, লঙ্গরখানায়। অহল্যা মায়ের যন্ত্রণার সাথে কামুদুনির আর্তনাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। যখন মোৎজার্ট আর শহীদ মিনার সপ্তযুগের গান বাঁধে প্রতিরোধের সপ্তডিঙায়; যখন কাঁধের জোয়াল ছুঁড়ে ফেলে পিঠটান করে ঘুরে দাঁড়ায় মানুষ ঠিক তখনই সলিল চৌধুরী প্রাসঙ্গিক হয়ে যান দেশকালভাবনার মানবিক আখ্যানে।
না কোনও মোমবাতির মিছিলে নয়
ফরিয়াদ কৃষকের লংমার্চ মুম্বাইতে ঢুকেছে অধিকার কে কাকে দেয় তার উত্তর খুঁজে নিতে।
না কোনও আঁখি পল্লবের হালকা ইশারায় নয়
দিনের পর দিন পিচগলা রাস্তায় শাহিনবাগ থেকে কলকাতার গান্ধীমূর্তি
অনশন অবস্থানরত আছে বৈষম্যের পৃবিবীর গাড়িটাকে থামাবে বলে।
না কোনও গোসংস্কৃতির চোনা গিলে নয়
অগ্নিপথের সন্ধানে পথ হারাবো বলেই আজ অগ্নিগর্ভ
বিহার থেকে চেন্নাই, মাইসোর থেকে বালাসোর।
কুমারি মাটির ঘুম ভাঙছে শপথদৃপ্ত আহ্বানে
নৌ বিদ্রোহের ‘ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে’ আজও অটুট অবিচল
এদেশ স্বাধীন হবার ৭৫ বছর পরেও এক নয়া
‘আজাদির’ আমন্ত্রণে।
Comments :0