Modi Jumla

ঘৃণার ব্যাপারি প্রেম বিলাচ্ছেন

সম্পাদকীয় বিভাগ

 

‘বিড়াল বলে মাছ খাবো না, মাছ ছোব না, কাশী যাবো’। ভোটে কার্যত পরাজিত হবার পর জোট শরিকদের উপর ভর দিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী হবার তাগিদে নরেন্দ্র মোদী এবার ভোল বদলে বেড়াল তপস্বী সেজেছেন। গত দশ বছরে নামে জোট সরকার (এনডিএ) থাকলে তাঁর মুখে জোট বা এনডিএ’র কথা শোনা যায়নি। এখন তিনি জোট মহিমার কীর্তন গাইছেন। এতদিন ছিল সব ব্যাপারেই ‘আমি’, এবার শোনা গেছে ‘আমরা’। ‘ভূতের মুখে রামনামের’ মতো তিনি বলছেন ‘সর্বমত’ ও ‘বিশ্বাসের’ কথা। সত্যিই ‘গুঁতোয় বেড়াল গাছে ওঠে’।

যে দুই শরিকের ভরসায় নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা থেকে বহু পেছনে থাকা বিজেপি জোট সরকার গড়তে যাচ্ছে তাদের এক শরিক একাধিকবার শিবির বদল করে ‘পাল্টু কুমার’ পরিচিতি পেয়ে গেছেন। অন্য শরিক ভোটের আগে সমঝোতা করেছে। এই জোটকে মোদী সহজাত জোট বলে আখ্যা দিয়েছেন। তেমনি এই জোট নিয়ে তিনি আরও দশ বছর সরকার চালাবার কথাও আগাম জানিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি জোট সরকারের নেতা থাকবেন। কিন্তু পরমাত্মা যে তাকে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত কাজ করার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন সেই দায়িত্ব কীভাবে পালিত হবে জানাননি। স্মরণ করা যেতে পারে মোদী কথিত এই সহজাত জোটের সবচেয়ে পুরানো ও ঘনিষ্ট শরিক শিব সেনাকে জোট ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে মোদীদের ঔদ্ধত্য ও দাদাগিরিতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে। আজকে যে টিডিপি’র বদান্যতায় মোদী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে সেই টিডিপি-ও একসময় জোট শরিক ছিল। কিন্তু টিকতে পারেনি বিজেপি’র সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহংবোধের ফলে। নীতীশের জেডি(ইউ) জোট ত্যাগ করে এবার আবার ফিরেছে। শিরোমণি আকালি দলকেও জোট ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। ভুললে চলবে না সহজাত নৈকট্যের জন্য নীতীশ, চন্দ্রবাবুরা মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাচ্ছেন না। খাদে পড়া হাতিকে চাপ দিয়ে তাদের রাজ্যের জন্য অনেক কিছু আদায় করাই তাদের আসল লক্ষ্য। অন্য রাজ্যকে বঞ্চিত করে বা দুয়োরানি করে রেখে এই দুই শরিককে খুশি করতে হবে মোদীকে। নচেৎ যে কোনও সময় গদি উলটে যেতে পারে।

যার মুখে ধর্মীয় বিদ্বেষ আর ঘৃণা ছাড়া ভুল করেও অন্য কিছু উচ্চারিত হয় না সেই মোদী আচমকা ‘সর্বধর্ম সমভাব’-এর কথা বলে শুধু দেশবাসী নয় গোটা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে গোটা নির্বাচনী প্রচারে একবারের জন্যও তাঁর মুখে এমন শব্দবন্ধ শোনা যায়নি। বিপরীতে লাগাতার মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। বলেছেন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দুদের সম্পত্তি কেড়ে মুসলিমদের বিলিয়ে দেবে। এমনকি হিন্দু মহিলাদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে মুসলিমদের দেবে। তফসিলি জাতি, উপজাতি ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ কেড়ে মুসলিমদের দেবে। সেই মোদী রাতারাতি মুখোশ বদলে সর্বধর্ম সমভাব বলছেন। পেশাদার অভিনেতার মতো সংবিধানের ওপর কপাল ঠুকছেন, বুকে জড়িয়ে ধরছেন। নাটুকেপনায় জুড়ি নেই। অথচ এই মোদী গত দশ বছর ধরে পদে পদে সংবিধানকে অবহেলা করেছেন। সংবিধানের মূল ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে একদলীয় ও একনায়কের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। সমস্ত স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছেন। সংবিধানের মৌলিক নির্দেশিকাগুলিকে বর্জন করে হিন্দুত্ববাদী ধারায় চালিত করেছেন। এখন সংবিধানে কপাল ঠুকে নাটক করছেন।

ক্ষমতার জন্য, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত একনায়কত্বের রাষ্ট্র গঠনের জন্য তিনি পারেন না এমন কোনও কাজ নেই। মুহুর্মূহু মুখোশ বদলাতে পারেন। কথায় কথায় দ্বিচারি হতে পারেন। গিরগিটিও সম্ভবত তাঁকে দেখে লজ্জা পাবে।


 

Comments :0

Login to leave a comment