ছবি তুলতে প্রবল ঠান্ডায় জমে যাওয়া লেকের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তলিয়ে গেলেন তিনজন। এরা সকলেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনী। মৃতদের মধ্যে এক দম্পতিও রয়েছে। তাঁরা যখন হ্রদের প্রায় মাঝখানে, পায়ের চাপে আচমকাই বরফের আস্তরণ ভেঙে যায়। আর তিনজনেই ডুবে যান হ্রদের ঠান্ডা জলে। গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুর ৩টে ৩৫মিনিট নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার অ্যারিজোনার কোকোনিনো কাউন্টির উডস ক্যানিয়ন লেকে।
কোকোনিনো কাউন্টির শেরফি অফিস থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জলে ডুবে নিখোঁজ তিনজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতরা হলেন নারায়ণ মুদ্দানা (৪৯), এবং গোকুল মেডিসেটি (৪৭)। মৃত মহিলার নাম হরিতা মুদ্দানা, তবে তাঁর বয়স জানা যায়নি। তিনজনই অ্যারিজোনার চান্ডলের বাসিন্দা। ফিনিক্সের শহরতলি এই চান্ডলার। আসলে তিনজনেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
উডস ক্যানিয়ন হ্রদটি অ্যাপাচি-সিটগ্রিভস ন্যাশনাল ফরেস্টের পেসনের পূর্বে অবস্থিত। এটি হাইকার, অ্যাঙ্গলারদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি এলাকা। পর্যটকদের কাছেও খুবই পছন্দের অ্যারিজোনার ওই উডস ক্যানিয়ন লেক। প্রবল ঠান্ডায় সেই হ্রদের জল জমে গিয়েছিল। খ্রিস্টমাসের পরদিন তিনটি পরিবার মিলে বরফাবৃত ওই উপত্যকার মজা নিতে সেখানে গিয়েছিলেন। দলটিতে ৬জন প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও পাঁচটি শিশুও ছিল।
শেরিফ অফিসের জন প্যাক্সটন জানিয়েছেন, ‘ছবি তোলার জন্য ওঁরা জমে যাওয়া বরফের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করেন।’ কিন্তু লেকের মাঝামাঝি আস্তরণ ভেঙে যায়। তিনজনই হ্রদের মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার জলে পড়ে তলিয়ে যান। প্যাক্সটনের কথায় ‘এই সব ক্ষেত্রে খুব দ্রুতই হাইপোথার্মিয়া হয়ে যায়। আর আপনি যদি সাঁতার না জানেন তাহলে তা আরও সমস্যার হয়।’ প্রিয়জনদের ডুবে যেতে দেখে দুটি বাচ্চা ও এক মহিলা তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করে। দমকল কর্মীরা জানিয়েছেন, বাঁচাতে গিয়ে তারা নিজেরাই জলে পড়ে যায়। বহু কষ্টে তাদেরই বাঁচিয়ে পাড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। একজনের বাবা এবং দুটি ছোট মেয়ের মা-বাবা দুজনই অবশ্য মারা গেছেন।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হরিতাকে উদ্ধার করে পাড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাকি দু’জন নারায়ণ ও গোকুলের খোঁজে তারপর থেকেই লেকে তল্লাশি শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, বলে জানিয়েছে শেরিফ অফিস। সেই অফিস থেকে প্রকাশিত একটি বিবৃতি অনুসারে, ‘‘জমে যাওয়া লেকের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুজন পুরুষ ও এক মহিলার বরফজমা জলে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকার একটি সাবস্টেশনে নিযুক্ত ডেপুটিদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় মৃত দম্পতির শিশু সন্তানদের এখন দেখভাল করছেন এক প্রতিবেশী তথা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেই কিশোর পিত্তালার কথায়, ‘‘আমি আক্ষরিক অর্থেই হতবাক এবং কেঁপে উঠেছিলাম। কথা বলতেই পারছিলাম না’’। একজন সাত বছর, আরেকজনের বয়স ১২ বছর। এমনই দুটি ছোট ছোট মেয়ে রেখে গেছেন নারায়ণ-হরিতা। আপাতত পিত্তালাই তাদের দেখভাল করছে। যতদিন না ভারত থেকে তাদের ঠাকুমা সেখানে পৌঁছাচ্ছেন মেয়েদুটো পিত্তালার কাছেই থাকবে।
এবার প্রবল শৈতপ্রবাহে কাহিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বহু জায়গাতেই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে গেছে। দশ লক্ষেরও বেশি মার্কিনী ও কানাডিয়ান তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শীতকালীন এক ভয়ানক তুষারঝড় উত্তর আমেরিকাকে ধাক্কা দিয়ে চলেছে। যখন বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কমে যায়, তখন সাইক্লোন বম্ব তুষার, শক্তিশালী বাতাস এবং তাপমাত্রাকে হিমাঙ্কের নিচে নামিয়ে আনে। এবারে এই ঝড়ে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কুইবেক থেকে টেক্সাস পর্যন্ত ৩,২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই সাইক্লোন বোমা।
ভয়ানক তুষারঝড়ে জমে গিয়েছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের একাংশ। জমে যাওয়া নায়াগ্রার সেই ছবিই এখন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তুষারঝড়ের প্রকোপে বিদ্যুৎহীন লক্ষ লক্ষ পরিবার। ইতিমধ্যেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গিয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। জনজীবন বিপর্যস্ত।
Comments :0