রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের লাগাম ছাড়া দুর্নীতি, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগ ও বদলী সহ শিক্ষাঙ্গন কলুসিত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে সভা ও মিছিল করলো শিক্ষক সংগঠন। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির দার্জিলিঙ জেলা শাখার আহ্বানে শুক্রবার সন্ধ্যায় পৃথকভাবে তিনটি জায়গায় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিলিগুড়ি ডি আই দপ্তর সংলগ্ন মোড়, হাতি মোড় ও বাঘাযতীন পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পৃথকভাবে তিনটি সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। রাজ্যের স্কুলগুলোতে বেআইনী নিয়োগপ্রাপ্তদের অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবিতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নজিরবিহীন অরাজকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শিক্ষানুরাগী সচেতন নাগরিকদের সোচ্চারিত হবার আহ্বান জানানো হয়েছে এদিনের সভাগুলো থেকে।
এদিনের শিক্ষক সংগঠনের সভা ও মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচাতে হবে শিক্ষাকে। সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগকে।
সভা শুরুর আগে এবিটিএ শিলিগুড়ি জেলা দপ্তরের সামনে থেকে শিক্ষক নেতৃত্বের একটি মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে। মিছিল ডিআই দপ্তরের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে প্রথম সভা ও পরবর্তীতে বাঘাযতীন পার্কস্থিত এলাকা ও হাতিমোড় এলাকায় অনুরূপ দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিনের সভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন এবিটিএ দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি কাজল দাস, সম্পাদক বিদ্যুৎ রাজগুরু, সংগঠনের শিলিগুড়ি মহকুমা সম্পাদক দীনেশ মন্ডল, ইন্দ্রনীল ব্যানার্জি, অমৃতেন্দু চট্টোপাধ্যায়, প্রনব দাস প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বীরু বর্মন, প্রবীন শিক্ষক নেতা বিশ্বনাথ দত্ত সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। সভাগুলিতে সভাপতিত্ব করেছেন শুক্লা দাস।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষা দপ্তর ও রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা গভীর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে শিক্ষায়। দুর্নীতি এতোটাই হয়েছে যে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক সবক্ষেত্রেই শিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগ ও বদলি নিয়ে আদালতের নির্দেশে সন্দেহের বাতাবরন তৈরী হয়েছে।
এই সময়ে অসংখ্য বেআইনী নিয়োগ বাতিলের অপেক্ষায়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ঘিরে দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঘুষ নেবার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন তোলেন, এই অবস্থায় আমাদের রাজ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নামিয়ে আনা এইরকম বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষানুরাগী সচেতন অভিভাবক ও নাগরিকদের পথে নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে।
নেতৃবৃন্দ এদিন আরো বলেছেন, শাসকের ছত্রছায়ায় নজিরবিহীন দুর্নীতির ফলে রাজ্য জুড়ে শিক্ষার ভীত একেবারে নড়বড়ে হয়ে গেছে। দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে রাজ্যের তৃণমূলী নেতা মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে। তবুও দুর্নীতি চলছেই। চলতি সময়ে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার বিদ্যালয়গুলিতেও শিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনের পঠনপাঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। শিক্ষার বেহাল দশায় অভিভাবকেরাও চিন্তিত। রাজ্যের স্কুলগুলিতে অবৈজ্ঞানিক বদলি নীতি চালু করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠছে। সমাজের শিক্ষকদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। গোটা শিক্ষা পরিকাঠামো বর্তমান সরকারের সময়ে ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার এই অসুস্থ বাতাবরন থেকে বর্তমান প্রজন্মকে রক্ষা করার স্বার্থে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে এগিয়ে এসে প্রতিবাদে সামিল হবার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
Comments :0