সতর্কতা ছিল আগেই। সবচেয়ে টাটকা গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত রিপোর্ট। আলগা ভূস্তরের ওপর গড়ে উঠেছে জনপদ জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডেত চামোলি জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন পথ আসলে অস্থিতিশীল। ভারী পরিকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা হলেই তলিয়ে যাবে।
উত্তরাখণ্ডেরই রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা প্রাধিকরণ, ইউএসডিএমএ, রিপোর্ট পেশ করেছিল গত বছরের আগস্টে। তার আগেই, ফেব্রুয়ারিতে চামোলির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাসিয়ে দিয়েছে হড়পা বান। মারা গিয়েছেন দু’শোর বেশি মানুষ। তাঁদের বেশিরভাগই প্রকল্পে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক।
বিপদের কেন্দ্রে চিহ্নিত করা হয়েছিল দুই প্রকল্পকে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, চারধাম প্রকল্পে হেলাঙ থেকে মারওয়ারি পাসের নির্মাণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিপদের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এলাকায় একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে। তার মধ্যে রয়েছে বিষ্ণুগড় প্রকল্পও।
বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবারই এই দুই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্র শনিবার গড়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি আর জমিতে পরীক্ষা চালিয়ে কমিটিকে জোশীমঠের ভবিষ্যৎ জানাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যেই তীব্র শীতে অলকানন্দা আর ধৌলিগঙ্গার মাঝের এলাকায় বহু বসতি রাস্তায়। ঘরে ফাটল, রাস্তায় ফাটল। বহুতল উঠেছে, এখন হেলে পড়েছে পাশেরটির গায়ে। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, আপৎকালীন বাসস্থান এবং উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা বলছেন, আর কোনোদিন ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা জানা নেই আর।
ভূতত্ত্বিদরা বলছেন, হিমালয়ের বুকে এই শহরের একেবারে পাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূস্তরীয় চ্যুতি রেখা। তাছাড়া, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্প প্রবণ এই এলাকা। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা এবং প্রশমন কেন্দ্রের নির্দেশক পীযূষ রৌতেলা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘মাটির নিচে প্রাকৃতিক জলস্তর রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। বিভিন্ন সময়ে নির্মাণের কাজে তার দেওয়ালের ক্ষতি হয়েছে। ফলে ওপরের জমি স্থিতিশীলতা হারাচ্ছে। এই এলাকাই ধসে পড়ছে।’’
২০১১’র জনগণনা অনুযায়ী জোশীমঠের স্থায়ী বাসিন্দা ৩ হাজার ৮০০ পরিবার। প্রতিটি পরিবার দিন কাটাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়, অনিশ্চয়তায়। বদ্রিনাথ এবং হেমকুণ্ড সাহিব যাওয়ার রাস্তায় পর্যটকদের বড় আশ্রয়কেন্দ্র জোশীমঠ। সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৬ হাজার মিটার উঁচু এই জায়গা থেকে শুরু হয় ট্রেকিংয়ের একাধিক রুটেরও।
ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজির নির্দেশক কালাচাঁদ সাইঁয়ের যুক্তি হঠাৎ করে এই অবস্থা হয়নি জোশীমঠে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন কাজ চলছে যা এই অঞ্চলে হওয়ার কথা নয়।
সংবাদসংস্থাকে সাইঁ বলেছেন, ‘‘জোশীমঠে সমস্যা বেড়েছে প্রাকৃতিক এবং মানুষের সক্রিয়তা- দুই কারণেই। একশো বছরেরও বেশি সময় আগে বড় ধস নেমেছিল হিমালয়ের এই অঞ্চলে। সেই স্তূপের ওপরই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে জনপদ, পরে শহর। কিন্তু ভূস্তর আলগা পাথরের। তার ওপর জল চুঁইয়ে সমানে ভূস্তরে চলে আসে। সব মিলিয়েই নিচের পাথর-মাটি কখনও জমাট বাঁধেনি।’’
প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মনোভাবে। কেন্দ্রের চারধাম প্রকল্পে ভারি পরিকাঠামো নির্মাণ থেমে থাকেনি। বরং প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল বিজেপি’র সাফল্যের প্রচারে বারবার উঠে এসেছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে বিকল্প জায়গা বাছাইয়ের উদ্যোগও নেই। উন্নয়নের নামে বেপরোয়া অবৈজ্ঞানিক হঠকারিতার ফল কী, দেখাচ্ছে জোশীমঠ।
Comments :0