বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভারতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস খোলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের বেতন নির্ধারণ, শিক্ষক নিয়োগের স্বাধীনতা দেওয়া হবে। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, এর ফলে উচ্চ বেতনের কিছু অভিজাত প্রতিষ্ঠানের পৃথক জায়গা তৈরি হবে যা দেশের উচ্চশিক্ষার কাঠামোকে আরও বিকৃত করে দেবে। ইউজিসি’র এই খসড়া গাইডলাইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)।
শনিবার বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, এই ধরনের ক্যাম্পাস তৈরির বিশদ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে যে তারা নিজেদের ভর্তির নিয়ম ঠিক করবে, দেশের ও বিদেশের ছাত্র নেবার মাপকাঠি নিজেরাই ঠিক করতে পারবে। বেতন কাঠামো ঠিক করার স্বাধীনতাও থাকবে, ভারতের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে তা-ও মানতে বাধ্য থাকবে না এই বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলি। বিদেশি উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানগুলি অন্য দেশেও আর্থিক লেনদেন করতে পারবে, বিদেশি মুদ্রা তহবিল রাখতে পারবে, অর্থ প্রদান, টাকা বাইরেও পাঠাতে পারবে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সরকার ও উচ্চ শিক্ষার কর্তৃপক্ষের এই নীতি শিক্ষার সার্বভৌমত্বকে খর্ব করবে, তা একেবারেই স্পষ্ট। অতীতে ভারতীয় কর্পোরেটদের এমন দোকান খুলতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তাদের জাতীয় বিশিষ্টতার মর্যাদাও দেওয়া হয়েছিল। যদিও এ ব্যাপারে এর পরে কী হলো তা অন্তত প্রকাশ্যে জানা যায়নি। নতুন শিক্ষানীতি এবং কোভিডের সময়ে অনলাইন শিক্ষার অতি ব্যগ্রতার পরিণতিতে ভারতের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্র এমনকিতেই ধুঁকছে। সমস্ত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে কলেজ –বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রপ আউট তীব্র হারে বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার যে ছাত্ররা তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমছে। উচ্চশিক্ষার চলতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ আদৌ সহায়ক হবে না।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ইউজিসি এবং সরকারকে এই খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষক-ছাত্র এবং উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে পরামর্শ না করে একতরফা উদ্যোগ নেবার বিধিবদ্ধ অধিকারও নেই ইউজিসি-র। এই একতরফা সিদ্ধান্ত প্রতিহত করতে সক্রিয় হতে পলিট ব্যুরো সমস্ত গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক শক্তির কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের তরফে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছে। এসএফআই-র সভাপতি ভি পি সানু ও সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা হলো বিদেশি বেসরকারি সংস্থার হাতে ভারতের উচ্চশিক্ষা তুলে দেওয়া। ইতিমধ্যেই কোভিডের সময় থেকে ছাত্রদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষাক্ষেত্রের বাইরে চলে গেছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনায় এই বৈষম্য আরও বাড়বে। সাধারণ ভারতীয় ছাত্রদের কোনও উপকার হবে না, বরং এমন অভিজাত প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে যারা জ্ঞানকে সমাজের নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমায়িত করে দেবে। তাছাড়াও নিচু গুণমানের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠবে, ছাত্রদের লুট করবে। এই খসড়া বিধি প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও ইউজিসি-র কাছে দাবি জানিয়েছে এসএফআই।
Comments :0