প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হেপাজতে নিয়েই আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪ দফা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তাঁর বিরুদ্ধে আইনী অভিযোগ আনা হয়। ট্রাম্প এই মামলায় হাজির থাকতে মঙ্গলবার দুপুরে নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে সরকারী ভাবে ‘গ্রেপ্তার’ করে পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতীয় সময় মধ্যরাত পেরিয়েও তাঁর মামলার শুনানি চলছে। ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে এই প্রথম কোনো প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে আদালতে দাঁড়াতে হয়েছে।
আইনী ভাষায় ট্রাম্পের ‘অ্যারাইজমেন্ট’ হয় এদিন। তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা তাঁকে পড়ে শোনানো হয়। ম্যানহাটান ক্রিমিনাল আদালতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক জুয়ান মারচানের কাছে তাঁকে পেশ করা হয়। দুপুর দেড়টায় পুলিশের দপ্তরে এলে তাঁকে গ্রপ্তার করলেও ট্রাম্পকে সেখানে বেশিক্ষণ রাখা হয়নি। সাধারণ রীতি অনুযায়ী হাতকড়াও পড়ানো হয়নি। পুলিশ যখন তাঁকে আদালতে নিয়ে আসে, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প। কয়েকজন অফিসার তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেও আদালত কক্ষে ঢোকার আগে তাঁর জন্য দরজা খুলে দাঁড়াননি কেউ। এই ঘটনাকেও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম।
আদালত কক্ষে সাংবাদিদের জন্য কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বস্তুত বিচারপতি ট্রাম্পের মামলা শোনার আগেই সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে একটি আবেদন জমা পড়ে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে একাধিক মিথ্যা তথ্য পেশ করা, অবৈধ লেনদেন, বিশ্বাসঘাতকতা, জনৈক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের কথা গোপন করতে তাঁকে টাকা দিয়ে চুপ করানোর ঘটনা। শেষ ঘটনাটি বেশি নজর আকর্ষণ করলেও অভিযোগের অনেকগুলিই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মধ্যেও পড়ছে। ব্যবসায়িক স্বার্থ পূরণে অসত্য তথ্য নথিভুক্ত করার অভিযোগও আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঠিক কী কী অভিযোগ রয়েছে, তা এই শুনানির সময়েই প্রথম জানা যাবে। ট্রাম্প যেমন জানবেন তেমনই আইনজীবীরাও জানবেন। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসবে। বন্ধ সিল খুলে বিচারপতির সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরে তা জনসমক্ষে আসবে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প কোনো অভিযোগই স্বীকার করেননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।
রাষ্ট্রপতি হবার আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছিল। তাঁর বাণিজ্যিক লেনদেন জালিয়াতিতে ভরা বলে বহু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর জীবনের নানা ঘটনাও অনৈতিকতায় পূর্ণ। ট্রাম্পের আচরণ, কথাবার্তার মধ্যেও নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করার প্রবণতা ছিল। এমনকি নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও সেই হার তিনি স্বীকার করেননি। তাঁর সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ চালিয়েছিল। বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি বিস্তর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অতি দক্ষিণপন্থী এই নেতাকে এখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে।
Comments :0