২০০৮ সালের শারদোৎসবে দেবী বিসর্জনের আগেই এরাজ্য থেকে শিল্প বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটাদের মোটর কারখানা গুজরাটে পাড়ি দেবার মধ্য দিয়ে। সেই শিল্প বিসর্জনের পর গত ১৫ বছরে এরাজ্যে আর কোনও শিল্পের আবাহন হয়নি। শিল্প সম্মেলনের নামে মোচ্ছব হয়েছে অনেক তবে শিল্পে বিনিয়োগকারীদের কাছে এরাজ্য পরিত্যক্তই থেকে গেছে। সিঙ্গুর থেকে বিদায় নেবার সময় টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা আক্ষেপ বলেছিলাম ‘মাথায় বন্দুক ঠেকালেও সিঙ্গুর ছাড়ব না, কিন্তু মমতা তো ট্রিগার টিপে দিলেন’। টাটাদের বিদায়ের সাথে সাথে বিদায় নিয়েছে বাংলার শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং যুব সমাজের স্বপ্নও। তারপর থেকে বাংলার শিল্পের মরুভূমিতে নৃত্য করে বেড়াচ্ছে শকুনি-ডাকিনী-যোগিনীরা। বালার ভবিষ্যৎ এখন পরিযায়ী।
সীমাহীন ক্ষমতার লোভ আর ধ্বংসাত্মক রাজনীতির অন্ধ উন্মাদনার জোয়ার বাংলার মানুষ এতটাই বিভ্রান্ত ও মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে টেরই পেলেন না কখন তাদের পায়ের তলা থেকে তাদের সন্তানদের সুখী ভবিষ্যতের মাটি সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। আজ সব হারিয়ে বিনামূল্যের রেশন আর ৫০০ টাকার লক্ষ্মীভাণ্ডারকে আঁকড়ে ধরে আত্মগ্লানি নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে।
সেদিন মোটর কারখানা হারিয়ে বাংলার যে ক্ষতি হয়েছে তার রেশ আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। টাটারা চলে যেতে বাধ্য হবার পর আর কোনও শিল্প গোষ্ঠী বাংলাকে বিশ্বাস ও ভরসা করে বিনিয়োগের কথা ভাবতে সাহস পায়নি। এমনকি সে সময় ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে সব বড় বড় শিল্প প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল তারাও থমকে গিয়ে পাততাড়ি গুটায়। সেই থেকে রাজ্যের শিল্পে আকাশে চলছে ঘোর অমানিশা।
চরম ক্ষমতালোভী ধ্বংসের নেত্রী সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়িয়ে তৃপ্ত হননি। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ বাতিল করতে নতুন আইন করেছেন এবং টাটাদের সঙ্গে সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিল করে টাটাদের কাছ থেকে সিঙ্গুরের জমি কেড়ে নিয়েছেন। এক অপরিণামদর্শী দাম্ভিক নেত্রীর খামখেয়ালিপনার জেরে আজ বড় সর্বনাশের মুখে বাংলার মানুষ। চুক্তি ভঙ্গের দায়ে সালিশি আদালতের রায়ে সুদ সহ প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা টাটাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। প্রতি মাসে বাজার থেকে ধার করে যে সরকারের সংসার চলে তাদের এবার দিতে হবে ১৭০০ কোটি টাকা। মনে রাখতে হবে এই টাকা কালীঘাটের দুর্নীতি সিন্ডিকেট দেবে না, দিতে হবে রাজ্যের জনগণের পকেট কেটে। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হলে তার খরচও দিতে হবে জনগণের পকেট কেটে। এর আগে সিঙ্গুর নিয়ে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে দীর্ঘ মামলার বোঝাও বয়েছেন রাজ্যের জনগণ। সিঙ্গুরে তৈরি কারখানা ভাঙার খরচ, তৈরি কারখানার জমিকে চাষযোগ্য করার পাগলামির খরচও হয়েছে জনগণের করের টাকায়। অর্থাৎ সরকার ও শাসক দলে অপরাধের পর অপরাধের মাশুল গুনতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। এই আপদ যতদিন থাকবে ততদিনই রাজ্যের ও রাজ্যবাসীর সর্বনাশ করে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি এই সরকারের বিসর্জন হয় ততই মঙ্গল।
Editorial Singur
আপদ বিদায় হোক
×
Comments :0