বারে বারেই বাহিনী মোতায়েন বাড়ানো, ৩৭০ ধারা বিলোপ কোনও কিছুতেই যে কাশ্মীরকে নিরাপদ করা যায়নি তা নতুন বছরের শুরুতে আবার প্রমাণ হলো। জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে হামলার মাত্র ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই একই জায়গায় উগ্রপন্থীরা পেতে যাওয়া আইইডি ফেটে মৃত্যু হলো সাধারণ মানুষের। মৃত্যু হলো দুই ভাই-বোনের। গুরুতর জখম আরও ছয়জন। রবিবার সন্ধ্যায় রাজৌরির ওই ডাঙরি গ্রামে উগ্রপন্থী হামলার পর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর চিরুনি তল্লাশি আর এলাকা স্যানিটাইজ করা যে কোনও কাজেই আসেনি তা এদিনের বিস্ফোরণে স্পষ্ট। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসনে থাকা জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তায় এত বড় ধরনের এই গাফিলতি নিয়েও।
নোটবন্দি হলেই দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হবে। এমনটাই ছিল মোদীর দাবি। সুপ্রিম কোর্টের বিভাজিত রায়ে সরকার যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার ‘বৈধতা’ আদায় করলেও কাশ্মীরে যে উগ্রপন্থা থেকেই গেছে তা এখন পরিষ্কার। চার বছর আগে আচমকা ৩৭০ ধারা বিলোপ করেও যে কাশ্মীরকে নিরাপদ করা যায়নি, পরপর দুদিন রাজৌরির এক গ্রামের ঘটনা তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
রবিবার সন্ধ্যায় এই গ্রামেরই তিনটি বাড়িতে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে চলে যায় উগ্রপন্থীরা। তাতে চারজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন আরও ৬জন। সোমবার সকালে সেই গ্রামেই ফের বিস্ফোরণ ঘটল। মৃত্যু হলো সমীক্ষা শর্মা (১৬) ও বিহান শর্মার। এরা দুজনে তুতো ভাইবোন। স্থানীয়দের কথায়, এদিন সকাল সাড়ে নটা নগাদ বিস্ফোরণটি ঘটে প্রীতম লালের বাড়ির কাছে। গত রাতে হামলায় এই প্রীতমের মৃত্যু হয়েছে। এদিন বিস্ফোরণের সময় প্রীতমের আত্মীয়রা ছাড়াও ওই বাড়িতে বেশ কিছু মানুষ ছিলেন। বিস্ফোরণে ওই ভাইবোনের মৃত্যু হলেও গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ৬জন। এদিনের ঘটনা নিয়ে দু’দিনে রাজৌরি হামলায় মোট ৬জনের মৃত্যু হলো। জখম বারোজন। গ্রামের সরপঞ্চ দীপক কুমারের স্পষ্ট অভিযোগ, এটা স্পষ্টতই পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থার গাফিলতি। সংখ্যালঘু মানুষ মোটেই নিরাপদ বোধ করছেন না। প্রশাসনের তো কিছু করা উচিত।
এদিনের ঘটনার জেরে রাজৌরি শহর সহ গোটা জেলাতেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে রাজৌরিতে। রাজ্য পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দাবি করেছেন, শীর্ষ আধিকারিকদের লক্ষ্য করেই আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। প্রবল বিক্ষোভের মুখে সিং হুঙ্কার দেন, উগ্রপন্থীরা ছাড় পাবে না। এখানকার মানুষের পাশে দাঁড়াতেই তিনি রাজৌরিতে এদিন এসেছিলেন বলে সিং দাবি করেন, সেকারণেই কাশ্মীর না গিয়ে তিনি এখানে। সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, গ্রামরক্ষী বাহিনীকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। তাদের হাতে অস্ত্র দেওয়া হবে।
Comments :0