কাগজ কলমে পারদ নামলেও ঠান্ডার প্রকোপ শনিবারও অব্যহত থাকলো। কনকনে ঠান্ডার দাপট কলকাতায় কিছুটা কমলেও দক্ষিণবঙ্গে তেড়ে ব্যাট চালাচ্ছে মরশুমী শীত। এই চলতি স্পেলে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য শৈত্যপ্রবাহের আগাম পূর্বাভাস দিয়ে দিল। শুক্রবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। সেটাই এই মরশুমে সবচেয়ে শীতলতম দিন। শনিবার গতদিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বাড়লেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা নেমে আসার জেরে দিনভর ঠান্ডার সেই আবহ বজায় থাকলো।
শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে গেল ১২ ডিগ্রিতে। গতদিনের ১০.৯ থেকে প্রায় ২ ডিগ্রি বেশি এই তাপমাত্রা হলে কী হবে, এসময়ের গড় সর্বনিম্ন থেকে এদিনের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কম।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শনিবার কলকাতার সর্বোচ্চ কমে হয়েছে ২২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা এই সময়ের গড় সর্বোচ্চ থেকে ৩ ডিগ্রি কম। সেই সঙ্গে সকাল থেকে হিমেল উত্তরে হাওয়া বইতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে এদিন দিনভর কাঁপুনির মধ্যে কাটাতে হয়েছে মহানগরবাসীকে। আগামী কয়েক দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রির আশপাশে থাকবে। সেজন্য ঠান্ডা প্রকোপ বজায় থাকবে।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই এবারে মরশুমী শীতের দাপট দেখা গেছে। কলকাতা শুধু নয়, এবারে যমজ শহর হাওড়াতে পড়েছে এর সরাসরি প্রভাব। হাওড়াতে লাগাতার তাপমাত্রা কমতে দেখা গেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র এখন ঠান্ডায় জবুথবু। শুক্রবার উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িকে রীতিমতো এক হাত নিয়েছে হাওড়া। গতকাল যেখানে জলপাইগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৯, সেখানে হাওড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবারেও তাপমাত্রার এই প্রভেদ অব্যাহত থেকেছে।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আগামী ক’দিন ঠান্ডার আমেজ বহাল থাকতে পারে শহরে। সেই সঙ্গে শীতের কামড় দেখা মিলবে পশ্চিমের জেলাগুলোতে। দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে পারদ পতন হয়েছিল পুরুলিয়ায়। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। কনকনে এই ঠান্ডার মধ্যেই ভোরের দিকে দক্ষিণবঙ্গে কুয়াশার দাপট দেখা যাবে বলে জানা গেছে। রাজ্যের পাঁচ জেলায় এদিন জারি করা হয়েছে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা। পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে পারদ আরও নেমে চলতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক নাগাড়ে ৫ ডিগ্রি নেমে গেলেই শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।
শনিবারে শৈত্যপ্রবাহের ঘোষণার মধ্যেই পুরুলিয়ার একাংশে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। পুরুলিয়ায় শীতের এই রমরমা আরও ৩ দিন চলবে বলে জানা গেছে। শনিবার দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে পুরুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে কম। পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় পারদকে এদিন নামতে দেখা গেছে ৭ ডিগ্রিতে। পুরুলিয়ার পরেই পারদ নামায় স্থান করে নিয়েছে বীরভূমের শ্রীনিকেতন। সেখানে এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রিতে।
এদিকে, লাগাতার ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তে থাকায় বাঁকুড়ার অবস্থা সঙ্গিন। শনিবার শীতের কামড় কিছুটা কমলেও লাগাতার তিন দিন ধরে ভালোই ঠান্ডায় ভুগতে হয়েছে জয়পুর, রানিবাঁধ, কোতুলপুর এলাকার মানুষদের। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৮ ডিগ্রিতে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় দিনভর ঠান্ডার প্রকোপ ভালোই ছিল। পারদ নামার সঙ্গে দিনভর বইতে থাকা উত্তরে বাতাস হাড় কাঁপিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মাঠেঘাটে, রাস্তায় মানুষকে আগুন পোয়াতে দেখা গেছে। তবে ধারাবাহিক ঠান্ডার জেরে আলুর ধসা রোগ হতে পারে বলে আশঙ্কা।
Comments :0