রাত পোহালেই এক হাজার দিনে পড়বে অবস্থান। তবুও বিচার পেলেন না বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। তপ্ত দুপুরে ঝলসানো রোদ হোক, জল, ঝড় হোক, পুলিশে বেধড়ক লাঠিও ওঁদের অবস্থান থেকে তুলতে পারেনি। যেকোন উৎসব হোক, বা আলোর রোশনাইয়ে রাজ্যের মানুষ যখন গা ভাসিয়েছে, তখন এই বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা পরিবার, পরিজন ছেড়ে ফুটপাতে পড়ে রয়েছেন। তারই প্রতিবাদে শনিবার বামফ্রন্টের ডাকে এক মিছিলে অবস্থানকারীরা সহ শামিল হবে সহমর্মী শিক্ষানুরাগী সহ সর্বস্তরের মানুষ। দুপুর ঠিক দু’টোয় লেনিন মূর্তি থেকে সেই মিছিল শুরু হয়ে শেষ হবে গান্ধী মূর্তির সামনে।
ওঁরা রাজ্যের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী। এসএলএসটি’র ২০১৬ সালের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষকতার পরীক্ষায় পাশ করেও জুটছে না হকের চাকরি। মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার তাবড় মন্ত্রী থেকে তৃণমূলের নেতারা, চুরি, দুর্নীতি করে ওদের হকের চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে। চাকরির দাবিতে টানা তিন বছরের বেশি, চলছে দাবি আদায়ের নাছোড়বান্দা লড়াই। দুঃখ, যন্ত্রণা, জেদের সেই লড়াইকে সঙ্গী করে এবছরও ওঁরা ঈদ, শারদোৎসব, দীপাবলি থেকে নানা উৎসব কাটালেন খোলা আকাশের নিচে।
টানা ১০০০ দিন ধরে চলছে চাকরির দাবিতে ধরনা অবস্থান। ওঁদের দাবি আদায়ের পথ চলা শুরু হয়েছিল প্রেস ক্লাবে সামনে অনশনের মধ্যে দিয়ে। দুর্নীতির কারণে এসএসসি’র ২০১৮ সালের মেধা তালিকা বাতিল হয়। ২০১৯ সালে সেই তালিকা পুনরায় প্রকাশ হওয়ার পর আবারও বেনিয়ম ধরা পড়ে। এর প্রতিবাদে টানা ২৯ দিন প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনের পর মুখ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করা হবে এবং যোগ্যরা চাকরি পাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরেও মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত চাকরি পাওয়া যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করুন, এটাই দাবি বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের।
চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের চাপে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁদের নিয়োগের ব্যাপারে আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু তা ওই পর্যন্ত। পরবর্তী ঘটনা পরম্পরায়, দুর্নীতির দায়ে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীদের জেল যাত্রার ধারাবাহিকতায় এটা স্পষ্ট হয় যে, জনরোষ, চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ও তৃণমূলের চুরি, দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের ক্ষান্ত করার কৌশল ফেঁদে ছিলেন। তাতেও কাজ হয়নি। আজও মেলেনি বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের হকের চাকরি।
Comments :0