নতুন বছরে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে অবস্থান শুরু হলো বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের। এবারে ধর্মতলার গান্ধী মূর্তির সামনে নতুন করে অবস্থান মঞ্চে বসলেন ভোকেশনালাইজেশন অফ স্কুল এডুকেশনের অন্তর্গত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানে নিযুক্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষকরা। সোমবার থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতিতে এই অবস্থান শুরু হয়।
অবস্থান মঞ্চে ১০জনের বসার অনুমতি মেলে, বাকিরা দাবিগুলির সমর্থনে অবস্থান মঞ্চের বাইরে প্রতিবাদ স্বরূপ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রশাসনের নির্দেশে এই অবস্থান চলবে বুধবার পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গের ৬৭৬টি সরকারি ও সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে সিলেবাসে নিযুক্ত বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু হয়। নিয়োগ করা হয় ১৪৮০ জন শিক্ষক ও ২১৮ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের। বিষয়গুলি স্থায়ী বিষয় হওয়া সত্বেও নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি দ্বারা, যাঁর ফলে প্রতিনিয়ত শিক্ষক ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা কর্মহীন হচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ৯২জন শিক্ষক ও ২১৮জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের পুরোপুরি ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকার সরাসরি সমগ্র শিক্ষা মিশনের এই স্কিমটি পরিচালনা করলে বার্ষিক ২৮কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। তা সত্ত্বেও বেসরকারি এজেন্সি দিয়ে পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত আর্থিক ব্যয়ভারও বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। বেসরকারি এজেন্সিগুলি সরকারের মদতে টানা ৯ বছর ধরে দুর্নীতি করে চলেছে, এখানে বেশ কিছু অযোগ্য ও ভুয়ো শিক্ষকদেরও চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বেসরকারি সংস্থাগুলি প্রতিটি বিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো ও ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক এবং হাতে কলমে শেখার জন্য বিপুল বরাদ্দ টাকা নয়ছয় করেছে বলেও অভিযোগ। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের মাসের বেতন মাসে দেওয়া হচ্ছে না, জোরপূর্বক ইএসআইসি’র নাম করে শিক্ষকদের থেকে এমপ্লয়ি ও এমপ্লয়ার শেয়ারের দু’টো অংশের টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বারংবার শিক্ষা দপ্তর ও কারিগরি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনও ফল মেলেনি।
প্রসঙ্গত, এই শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক ভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় কিন্তু হঠাৎ করে এই শিক্ষকদের ছাঁটাই করে আবার সেখানে অন্য কারোকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয় টাকার বিনিময়ে, এমনই অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা। অনৈতিকভাবে ছাঁটাই হওয়া যোগ্য শিক্ষক ও ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্টরা এদিন অবস্থান মঞ্চে আসেন। তাঁরা জানান, নিয়মবহির্ভূত বহু দুর্নীতি করে সরকারি বিদ্যালয়গুলিকে বেসরকারি এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত করে চলেছে বর্তমান সরকার, অন্যান্য শিক্ষকদের মতো বিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া থেকে সমস্ত কাজ তাঁদের করতে হয়, তবুও সময়ে বেতন মেলে না, ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষাও নেই চাকরিতে।
মহিলা শিক্ষিকাদের মাতৃত্বকালীন সময়ে তাঁদেরও ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। যাঁরা এখনো কর্মরত আছেন তাঁরা দীর্ঘ ৯বছর ধরে একই সামান্য বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। অবস্থান মঞ্চে সরকারের এই দ্বিচারিতা নিয়ে অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা।
পশ্চিমবঙ্গ ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন, আমরা চাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী কর্মহারাদের বেতন সহ বিদ্যালয়ে পুনর্বহাল ও বাকি কর্মরত শিক্ষকদের যাতে কাজ না চলে যায় এবং মাসের বেতন মাসে ও সরকারিকরণ করে ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি সুনিশ্চিত করা হয় সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। না হলে আমাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান চলবে।
Comments :0