SFI

এসএফআই’র সদস্য-পত্র এখন উর্দু, সাঁওতালিতেও

রাজ্য

বুধবার এসএফআই রাজ্য দপ্তরে সদস্যপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে বাংলা, হিন্দি ছাড়াও আরও চারটি ভাষায় প্রকাশিত হলো সংগঠনের সদস্যপদ সংগ্রহ পত্র। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারের লড়াইকে ব্যপ্ত করতে সাঁওতালি (অলচিকি হরফে), কুড়মালি, নেপালি এবং উর্দু ভাষায় সদস্যপত্র প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করেন এসএফআই-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কমরেড বিমান বসু। দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো ছাত্র সংগঠন সদস্য তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় নানাবিধ প্রান্তিক ভাষা অন্তর্ভুক্ত করল। উপস্থিত ছিলেন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী, রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘‘ভাষার ওপর যে আক্রমণের মুখোমুখি আজকের ভারত সেখানে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই লড়তে হচ্ছে নানা প্রান্তিক ভাষাকে। প্রতিদিন বিলুপ্ত কোনো না কোনো ভাষা। হারিয়ে যাচ্ছে লেখ্য হরফ। ভাষা মানে বহুত্ব, ভাষা মানে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমে জুড়ে নেওয়া আরেক মনকে, ভাষা মানে নাড়ির টানে খুঁজে পাওয়া মায়ের আদর, ভাষা মানে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের উচ্চারণ। সেই ভাষার ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ভাষা শহীদ দিবসে এদেশের বুকে প্রথম কোনো ছাত্র সংগঠন তাদের প্রাথমিক সদস্যপদের নথি প্রকাশ করতে চলেছে নানা প্রান্তিক ভাষায়। ভাষার স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের এই ঐতিহাসিক মাইলফলকে সামিল হও সব্বাই।’’
২০২০ সালে সংসদে কোনও আলোচনা ছাড়াই নয়া শিক্ষা নীতি পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতির ১৩ নম্বর পাতার ৪.১১ পয়েন্টে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি বা খুব বেশি হলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজন পড়ুয়া নিজের মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়তে পারবেন। তারপর? 
না। মাতৃ ভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়ার কোনও সুযোগ থাকবে না। অষ্টম শ্রেণির পর মাতৃভাষা শুধুমাত্র একটি ‘ভাষা’ হিসাবে সে পড়তে পারবে, তাও যদি তা সম্ভব হয় তবেই।


আপাতবিচারে মনে হবে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে সব ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।  আসল খেলা রয়েছে তিন ভাষা সূত্র (‘Three Language Formula’)তে লুকিয়ে। কী বলছে এই ফর্মুলা? 
বলা হয়েছে একজন পড়ুয়া তৃতীয় ভাষা হিসাবে ভারতের যে কোনও ভাষাকে বেছে নিতে পারে, এমনকি সে বিদেশি ভাষাও বাছতে পারে। মানে ধরা যাক, বাংলা, ইংরেজি যদি যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা হয় তবে তৃতীয় ভাষা হিসাবে সে তামিল নিতে পারে বা বিদেশি কিছু নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সে নিতে পারবে না।
কেন?
কারণ সব শ্রেণিতে সংস্কৃত বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতে যে ভাষায় প্রান্তিক, প্রান্তিক অংশের কোনও অধিকার দেয়নি বর্ণ বিভাজন। বিজেপি আরএসএস’র কাছে জনিশক্ষার প্রসারের থেকে অনেক জরুরি ‘দেবভাষার’ প্রসার। 
ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এই জাল তৈরি করেছে বিজেপি। শিক্ষা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ট ভারত’ নামে একটি  প্রোজেক্ট করতে হবে পড়ুয়াদের। এই প্রজেক্টে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সাথে সংস্কৃত এবং অন্যান্য ধ্রুপদি ভাষার সঙ্গে যোগসূত্রের  উল্লেখ করতে হবে।
শিক্ষানীতির ৪.১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সব শ্রেণির জন্য সংস্কৃত বাধ্যতামূলক। ‘Three Language Formula’ র মাধ্যমে সংস্কৃতকে বাধ্যতামূলক করা হবে। তাহলে তামিল পড়তে ইচ্ছা হলে কেউ পড়তে পারবে না। বিদেশি কোনও ভাষা শিখতে চাইলে কেউ পড়তে পারবে না। বাকি যেই ভাষাগুলি পড়ার কথা বলা হচ্ছে সেগুলি কুমিড় ছানা দেখানোর মতো। 
মোদী সরকারের মাধ্যমে আরএসএস’র লক্ষ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তৈরি করা। যে রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে খেটে খাওয়াকে ভাগাভাগি করবে। কিন্তু বড় মাপের কর্পোরেট মালিকদের নিশ্চিন্ত ছায়া জোগাবে। জোট বেঁধে প্রতিবাদ করা যেখানে অন্যায়। সেই লক্ষ্যে শিশুমনে সম্মতি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হলো ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০’।

Comments :0

Login to leave a comment