গত মাসাধিককাল সময়ের ব্যবধানে দেশে মোট ২১জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে কাশির সিরাপ খেয়ে। অবশ্য এমন সিরাপ খেয়ে আরও কত শিশু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে অথবা বিপদ কাটিয়ে সুস্থ হয়েছে তার কোনও তথ্য সরকারিভাবে জানানো হয়নি। সংখ্যাটা যে নেহাত কম নয় সেটা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত এই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ডাবল ইঞ্জিনে চালিত মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে। মধ্য প্রদেশে মৃত্যুর ঘটনা প্রথম ঘটে ৩ সেপ্টেম্বর। তারপর আরও মৃত্যু হতে থাকলেও সরকারের কোনও তাপ-উত্তাপ ছিল না। নড়েচড়ে বসে অন্তত দু’সপ্তাহ পর।
কাশির সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০২০ সালে জম্মু-কাশ্মীরে ডাইইথিলিন গ্লাইকল মিশ্রিত সিরাপ খেয়ে ১২জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। বিহার, চেন্নাই এবং গুরগাঁওতে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিবারই ঘটনার পর সরকার নানা পদক্ষেপ নেয়, গুচ্ছ গুচ্ছ বিধিনিষেধ জারি করে। কিন্তু দু’দিন পর যে কে সেই। ভারতের ভেষজ শিল্পে মুনাফা লোভী জালিয়াতদের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে এবং সরকারি নজরদারি এতটাই কমে গেছে যে ওষুধ কোম্পানির মালিকরা ভেজাল ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ, ক্ষতিকারক ওষুধ বেপরোয়াভাবে উৎপাদন করতে দ্বিধা করে না। অতি দ্রুত ওষুধের ফল দেখাতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিকের মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। কাশির সিরাপে ডাইইথিলিন গ্লাইকল অতিরিক্ত মাত্রায় মেলানো হয় চটজলদি কাশি কমানোর জন্য। কিন্তু এই রাসায়নিক কিডনির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সামান্য পরিমাণও কিডনিকে অকেজো করে দিতে সক্ষম। যে শিশুরা সম্প্রতি এবং আগে মারা গেছে তাদের সকলেরই কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওষুধ উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা ভেবে মোদী সরকার কখনো কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। তাই অবাধে দেশে বিষাক্ত ওষুধ তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলি খেয়ে মানুষ সুস্থ হবার বদলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
ভারতে তৈরি ওষুধ শুধু ভারতের মানুষের জীবন কাড়ছে না। ভারত থেকে ভিন দেশে রপ্তানি করা ওষুধ খেয়ে বিদেশিরাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। ২০২২ সালে ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ খেয়ে ৬৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে উজবেকিস্তানে। কয়েক মাস পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয় ভারত থেকে কেনা কাশির সিরাপ খেয়ে গাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সব সময় সংবাদ আকারে না এলেও এভাবে প্রতিনিয়ত জাল ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ ও বিষাক্ত ওষুধ খেয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে চলেছে। ভারতের ওষুধ শিল্পকে দ্রুত বিকশিত করার লক্ষ্যে সরকারি বিধিনিষেধ, কড়াকড়ি নজরদারি কার্যত তুলে দিয়েছে সরকার। বেশি মুনাফার জন্য নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। কোন কোম্পানি কোন ওষুধ তৈরি করছে, তাতে কতটা পরিমাণে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করছে দেখার কেউ নেই। কিছু ঠিক ওষুধ বানিয়ে সরকারকে দেখিয়ে বাকিটা জাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। সরকার চোখ বুঝে না দেখার ভান করছে।
Editorial
ওষুধ না বিষ

×
Comments :0