শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান
হাত বাড়াচ্ছেন কন্ডাক্টর— ‘২টো টাকা দিন। আপনার দাবি নিয়েই ব্রিগেডে সমাবেশ। এই ঘটে দু’টো টাকা দিয়ে যান।’ বাসভাড়ার সঙ্গে বাড়তি ২টো টাকা দিতে কেউই বিরক্তি প্রকাশ করছেন না। কেউ একটু বেশিও দিচ্ছেন। এভাবে ৭০০ টাকা তুলে প্রহ্লাদ দাস ডিওয়াইএফআই’কে দিয়েছেন।
এমনই আকুতি ভাতাড়ের বামসোড় গ্রামের ‘চা কাকু’ শেখ সমির আলির। তিনি দোকানদানির সঙ্গে যুবদের আগামী ৭জানুয়ারি ব্রিগেডের সমাবেশের জন্য অর্থও সংগ্রহ করছেন। এই অভিজ্ঞতা শুধু ভাতাড়ে নয়,‘ওদের পাশে দাঁড়ান, ২টো টাকা দিন’, ঠিক তেমনই স্বর ভাসতে শোনা গেছে নিখিল সাঁতরা আমারুনের ছোট মুদিখানা থেকে। তিনিও দোকানে ঘট রেখেছেন ব্রিগেডের জন্য কিছু করে দেখাতে। জামালপুরের ছোট স্টেশনারি দোকান মমতা রুইদাসের। বুক চিতিয়ে তিনিও বলেছেন—ইনসাফ পাওয়ার লড়াইকে জোরদার করুন, কিছু সাহায্য করুন এই মাটির ভাঁড়ে।
এমনই ৬হাজার ঘট পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন পরিবারে দিয়েছিল ডিওয়াইএফআই। সেই ঘট থেকেই সংগৃহীত হয়েছে ৬লক্ষের বেশি টাকা। হাটে, বাজারে, মহল্লায় অর্থ সংগ্রহ যেমন করেছেন তেমনই এই সমাবেশকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে প্রচারও চালিয়েছেন গ্রাম, শহর, গঞ্জের আনাচে-কানাচে প্রতিটি বাড়ির উঠানে। ঘরে ঘরে ব্রিগেডের এই বার্তাই যেন হাজার অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের ইনসাফ চাওয়ার সেতু তৈরি করছেন যুবরা।
অকাল বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকের। চলছে ক্ষতিগ্রস্ত আলু গাছ তুলে নতুন করে বীজ পাতা হচ্ছে। কৃষকের খুবই ব্যস্ততা, কিন্তু তা বলে মূল লড়াই থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হতে রাজী নয়। মেমারি-২ গ্রামের রবি সাঁতরা বলেছেন কাজ যতই থাক ১০ বছর ধরে যে অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি হয়েছে গাঁয়ে তা কি ভুলে গিয়েছি? ইনসাফ চাইতে তাই ব্রিগেড যাব।
কেন ব্রিগেড যাবেন? যুবদের ইনসাফ যাত্রার জোয়ার ছুঁয়েছে গ্রামের গৃহবধুদেরও। মোবাইল হাতে হাতে। ভিডিও, ছবিও সেই সূত্রে ঘরে ঘরে। পাশাপাশি গ্রামে ভোট লুট, পঞ্চায়েতে চুরি, ১০০ দিনের কাজের টাকা মেরে খাওয়া, আবাস যোজনার ঘর থেকেও কাটমানি নেওয়া— ‘এসব তো নিজের গ্রামেই দেখেছি।’ ফলে জবাব চাওয়ার ব্রিগেড সমাবেশের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে অভিজ্ঞতাও।
ব্রিগেড সমাবেশে যাওয়ার তাগিদ এবার ঘরে ঘরে। খেতমজুর, কৃষক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা আগে থেকেই ট্যাকের টাকা দিচ্ছেন। আবার নামও লেখাচ্ছেন ব্রিগেডে যাবেন বলে। কেউ দিচ্ছেন ১০০ আবার কেউ ৫০টাকা। যাঁর সামর্থ কম তিনিও দিচ্ছেন ২০ টাকা। নিজেরাই বাস ভাড়া করছেন বুথে বুথে। একটা বাসে যায়গা ৫০-৬০ জন কিন্তু ব্রিগেডে যাবার সংখ্যা ২০০-২৫০।
এত মানুষকে কিভাবে নিয়ে যাবেন ইনসাফ যাত্রার মহা সমাবেশে? সকলেই সাক্ষী হতে চাইছেন ব্রিগেডে পা রেখে লড়ায়ের শপথে নিতে।
চাষের কাজে চাপ আছে গ্রামে তাই আগে থেকে ছুটির আবেদন করে রেখেছেন খেতমজুররা মালিকের কাছে। সেদিন কাজে যাবেন না। প্রস্তুতি হই হই করে চলছে। কোন কোন বাড়ি থেকে রুটি তৈরি হবে, আলুর দমটাই বা কে বানাবেন তার তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। একটা জলের বোতল, তার সঙ্গে রুটি আলুর দম নিয়ে গাঁয়ের যৌবন সকাল থেকেই কলকাতা মুখী হতে দেখা যাবে।
জনতার মধ্যে ব্রিগেড মুখী এমন প্লাবন দেখে কাঁপন ধরেছে শাসক দলের। শুরু হয়েছে পুরানো খেলা বাস মালিকদের ডেকে বলেছে ওই দিন বাস ডিওয়াইএফআই’কে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু জনতা ও বাস কর্মচারীদের দাবি মেনে বাস মালিকরা বলেছেন যত বাধা আসুক বাস ব্রিগেড যাবে।
Comments :0